আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: বিল গেটস: প্রযুক্তি-দানশীলতা ও মানবতার পথিকৃৎ । বিল গেটস হলেন বিশ্বকবি একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও একজন বিশিষ্ট দানশীল। তিনি ব্যক্তিগত কম্পিউটার যুগের পথপ্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃত এবং তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার ব্যবহারের ধারা বদলে দিয়েছে।
বিল গেটসের শৈশব ও শিক্ষা:
বিল গেটস জন্মগ্রহণ করেন ২৮ অক্টোবর ১৯৫৫ সালে সিয়াটল, ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ছোট থেকেই গণিত এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রযুক্তি উদ্যোগে মনোনিবেশ করেন।
বিল গেটসের ক্যারিয়ার:
১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে মাইক্রোসফট BASIC নামের একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন। পরবর্তীতে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং অফিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার নির্মাতা হয়।
বিল গেটসের প্রযুক্তিতে অবদান:
১। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা (1975): ১৯৭৫ সালে বিল গেটস ও তাঁর স্কুলবন্ধু পল অ্যালেন মিলে Microsoft প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা লক্ষ্য করেছিলেন, ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC) একসময় ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, আর সেই কম্পিউটারের চালিকাশক্তি হবে সফটওয়্যার। এই দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল বিপ্লবাত্মক।
২। MS-DOS এর আবির্ভাব (1981): IBM তাদের প্রথম পিসির জন্য অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার দায়িত্ব Microsoft-কে দেয়। Microsoft তখন একটি সফটওয়্যার কিনে সেটিকে MS-DOS নামে রিব্র্যান্ড করে। এটি কমান্ড-ভিত্তিক একটি OS ছিল, যা ভবিষ্যতের Windows-এর ভিত্তি তৈরি করে।
৩। Windows অপারেটিং সিস্টেম (1985): গেটসের নেতৃত্বে Microsoft 1985 সালে Windows চালু করে, যাতে গ্রাফিকাল ইন্টারফেস যুক্ত হয়। ব্যবহারকারীরা মাউস দিয়ে ফাইল, ফোল্ডার, অ্যাপস ব্যবহার করতে পারে— যা কম্পিউটার ব্যবহারে বিপ্লব আনে।
৪। Windows 95 (1995): এই সংস্করণে প্রথম যুক্ত হয় Start Menu, Taskbar ও Plug-and-Play সুবিধা। এটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ৭ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।
৫। Microsoft Office (1990): Word, Excel, PowerPoint সহ একাধিক প্রোডাক্ট একত্রে Office Suite হিসেবে চালু করে। অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি হয়ে ওঠে অপরিহার্য।
৬। সফটওয়্যার লাইসেন্সিং মডেল: গেটস সফটওয়্যারকে একবার বিক্রি করে বারবার ব্যবহার করার সুবিধা চালু করেন। ফলে Microsoft ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয় এবং সফটওয়্যার শিল্পে নতুন অর্থনৈতিক মডেল তৈরি হয়।
৭। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের প্রচলন: গেটসের উদ্দেশ্য ছিল “একজন ব্যবহারকারী, এক কম্পিউটার” — এই মিশনকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে Microsoft এমন সফটওয়্যার তৈরি করে যা ঘরে, অফিসে, স্কুলে ব্যবহার সহজ করে।
৮। ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ (1995-2000): Internet Explorer, MSN এবং অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা চালু করে Microsoft ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ করে। যদিও Netscape প্রথম দৌড়ে ছিল, গেটস দ্রুত ইন্টারনেটকেও Microsoft-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
৯। প্রযুক্তির গ্লোবালাইজেশন: Microsoft-এর সফটওয়্যার ১০০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়। এভাবে গেটস বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবহারে এক অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন।
১০। ডেভেলপারদের জন্য প্ল্যাটফর্ম: Microsoft Windows ও .NET Framework-এর মাধ্যমে লাখো ডেভেলপারের জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের সুযোগ তৈরি করে।
আরও পড়ুন: অ্যালান ট্যুরিং: কম্পিউটার বিজ্ঞানের নীরব নায়ক
বিল গেটসের ব্যক্তি জীবন ও স্বীকৃতি:
বিল গেটসের ব্যক্তিগত জীবন বেশ সাধারণ। তিনি বিবাহিত এবং তিন সন্তানকে লালন-পালন করেছেন। ২০০০ সালের পর দানশীলতায় মনোনিবেশ করেন। বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।
বিল গেটসের শেষ জীবন:
বিল গেটস এখনো সক্রিয়, প্রযুক্তি ও সমাজসেবায় অবদান রাখছেন। তার দানশীলতা ও উদ্ভাবন তাকে প্রগতিশীল বিশ্বে অনন্য করে তুলেছে।
বিল গেটস শুধু একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা নন, তিনি মানবতার সেবায়ও নিবেদিত। তার কাজ প্রযুক্তির বিকাশ ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।
❑ টেক হিরোজ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: স্টিভ জবস: ইনোভেশনের প্রতীক ও অ্যাপলের জনক