আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: বিপদ কেটে যাওয়ার পর একজন মুমিনের করণীয় । বিপদের সময় মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, কাঁদে, দোয়া করে, সাহায্য চায়। কিন্তু যখন সেই বিপদ কেটে যায়, তখনই শুরু হয় প্রকৃত পরীক্ষার সময়। অনেকেই কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে হয়ে ওঠে অহংকারী, কেউ কেউ আবার গুনাহের পথে ফিরে যায়। কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন কী করবে? কোরআন, হাদিস ও নবীদের জীবন থেকে আমরা কী শিখি?
বিপদে আল্লাহর স্মরণ, পরে অহংকারী হওয়া এক বৈপরীত্য
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যখন জলে বিপদের সম্মুখীন হও, তখন একমাত্র তাঁকেই ডাকো এবং বলো যে, আমাদেরকে এ বিপদ থেকে বাঁচালে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। কিন্তু যখন তিনি তোমাদের উদ্ধার করে ভূমিতে নিয়ে আসেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও এবং সীমা লঙ্ঘন করো।’ (তাফসির, সুরা ইউনুস: ২২-২৩)
এই আয়াত মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, বিপদের সময় যেমন খাঁটি মন থাকে, তেমনি বিপদ কেটে গেলে সেই খাঁটিভাব বজায় রাখা জরুরি।
অহংকার নয়, নম্রতা জরুরি
আল্লাহর নেয়ামত লাভের পর কারুন ধন-সম্পদ ও কর্তৃত্বে গর্ব করে বলেছিল “আমার জ্ঞানের ফল।” ফেরাউন নিজেকে “প্রভু” দাবি করেছিল। অতঃপর দুজনই আল্লাহর কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হলো। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে (কারুনকে) ও তার ঘরবাড়িকে ভূমিতে ধসিয়ে দিলাম।’ (সুরা কাসাস: ৮১) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউনের জাতিকে পানিতে ডুবিয়ে মারার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তাআলার কুদরতের মহানিদর্শন; কিন্তু তাদের অনেকেই বিশ্বাস করে না।’ (সুরা শুয়ারা: ৬৭)
অহংকার আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। বিপদ থেকে বেঁচে গিয়ে অহংকার করলে আল্লাহর আজাব নেমে আসে।
রাসুল (স.)-এর নমনীয়তা মুমিনের জন্য আদর্শ
বদর ও মক্কা বিজয়ের মতো বিশাল বিজয়ের সময়েও রাসুল (স.) অহংকার করেননি। বরং তিনি বিনয়ের চূড়ান্ত নমুনা দেখিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কাবা গৃহে প্রবেশ করে নবীজি মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন, নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। (বুখারি: ২৯৮৮)
পূর্ববর্তী নবী-রাসুলরাও নম্রতা ও শুকরিয়ার শিক্ষা দিয়েছেন
অতীতের নবী রাসুলরাও সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। হজরত ইউসুফ (আ.) কতইনা সুন্দরভাবে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন- ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন এবং আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমান ও জমিনের স্রষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখেরাতে আমার কার্যনির্বাহী। আমাকে পূর্ণ আনুগত্যশীল অবস্থায় দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিন এবং আমাকে পরিপূর্ণ সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত রাখুন।’ (সুরা ইউসুফ: ১০১)
বিপদ কেটে যাওয়ার পর মুমিনের করণীয়
১. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা;বেশি বেশি সেজদা ও ইবাদত করা।
২. অহংকার থেকে দূরে থাকা
আল্লাহই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তাঁর সাহায্য ও করুণা ছাড়া আমরা অচল। তাই অহংকার করা যাবে না।
৩. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
বিপদে তাওবা-ইস্তেগফার ও দোয়া যেভাবে করা হয়, বিপদ কেটে গেলেও সেই অবস্থায় থাকা বাঞ্ছনীয়। বিপদ কেটে যাওয়ার পর আবারও গুনাহে ফিরে যাওয়া মুনাফিকি বৈশিষ্ট্য।
৪. নিরলস ইবাদত
বিপদ থেকে মুক্তির পর ইবাদতের মান আরও বাড়ানো উচিত।
৫. অন্যকে সাহায্য করা
নিজে বিপদ থেকে বেঁচে গিয়ে অন্য বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের কর্তব্য।
আরও পড়ুনঃ
❒ আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে যে ছোট ছোট জিকির
❒ পরীক্ষায় ভালো করার দোয়া ও আমল
❒ সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারের ফজিলত ও অর্থ
❒ সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার ফজিলত
❒ প্রাত্যহিক জীবনে নবীজির ১০ উপদেশ
❒ বৃষ্টির দিনে যে আমলগুলো করতে পারেন
৬. আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি
অতীতের ভুল-ত্রুটি স্মরণপূর্বক আত্মশুদ্ধি মুমিনের সফলতার সিঁড়ি। তাই যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অকৃতজ্ঞদের আল্লাহ শাস্তি দেন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, আমি অবশ্যই তোমাদের আরও দেব; আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমার শাস্তি কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
শেষ কথা, মুমিনের জীবন হবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণমুখর। বিপদে যেমন দোয়া করা উচিত, তেমনি বিপদ কেটে গেলেও কৃতজ্ঞতা আদায় করা করা উচিত। একমাত্র আল্লাহই আমাদের রক্ষা করেন, তাই কৃতজ্ঞ হয়ে ইবাদতে স্থায়ী হওয়া, অহংকার থেকে বেঁচে থাকা ও গুনাহ বর্জন করাই একজন প্রকৃত মুমিনের করণীয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের এত বড় ফজিলত!