আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে হারালে করণীয় । পাসপোর্ট কী, বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে, কোন ধরনের পাসপোর্ট কারা ব্যবহার করেন, পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কী করবেন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট কী—জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
পাসপোর্ট
পাসপোর্ট একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নথি, যা সরকার দেশের নাগরিকদের দেয়। পাসপোর্ট নাগরিকদের পরিচয় ও জাতীয়তা নিশ্চিত করে। পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বিদেশে ভ্রমণ, বসবাস, কাজ ও চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে অবস্থানের অনুমতি পান।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পাসপোর্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাওয়া ও ফেরা আমাদের মৌলিক অধিকার।
কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, বিচার চলমান থাকে বা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকে, তাহলে তার পাসপোর্ট স্থগিত বা বাতিল করা হতে পারে, যাতে তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারেন।
অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি দেশের বাইরেও অবস্থান করেন, সেক্ষেত্রেও সরকার ওই ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিল করে দিতে পারে। যাতে অভিযুক্ত স্বাধীনভাবে পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে চলাচল করতে না পারেন।
বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে
বিশ্বজুড়ে পাসপোর্টের রং ও নকশা ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে কোনো দেশ যেই রঙের পাসপোর্টই ইস্যু করুক না কেন, সেটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) থেকে অনুমোদিত হতে হবে। তবে বিশ্বজুড়ে পাসপোর্টে সাধারণত লাল, নীল, সবুজ ও কালো—এই চার রঙের ভিন্ন ভিন্ন শেড ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে সাধারণভাবে সবার জন্য সবুজ রঙের পাসপোর্ট চালু থাকলেও নীল ও লাল রঙের পাসপোর্টও রয়েছে।
কোন ধরনের পাসপোর্ট কারা ব্যবহার করেন
✪ সবুজ পাসপোর্ট বা সাধারণ পাসপোর্ট
✪ নীল পাসপোর্ট বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট
✪ লাল পাসপোর্ট বা কূটনীতিক পাসপোর্ট
আরও পড়ুনঃ নতুন নিয়মে ই পাসপোর্ট করতে কিকি কাগজপত্র লাগে?
সবুজ পাসপোর্ট
সবুজ পাসপোর্ট সাধারণ পাসপোর্ট বা অর্ডিনারি পাসপোর্ট নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হয়। জন্মসূত্রে বা বৈবাহিক সূত্রে যারা বাংলাদেশি, তারা এই পাসপোর্ট পেতে পারেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য এই পাসপোর্টধারীদের সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা প্রয়োজন। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি দেশের সব সাধারণ নাগরিকের মৌলিক ভ্রমণ অধিকার নিশ্চিত করে।
নীল পাসপোর্ট
নীল পাসপোর্ট অফিশিয়াল পাসপোর্ট নামে পরিচিত। সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য এই পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। এটি পেতে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমোদন বা গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রয়োজন। নীল পাসপোর্টধারীরা কমপক্ষে ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন। তবে সরকারি কাজ ছাড়া নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করা যায় না।
লাল পাসপোর্ট
লাল পাসপোর্টকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট বলা হয়। এটি রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্বামী-স্ত্রী, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তাদের জন্য ইস্যু করা হয়।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
১। পাসপোর্ট হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই খবর দিতে হবে থানাতে। পাসপোর্ট হারানো সময় পাসপোর্টধারী যে এলাকায় অবস্থান করছিলেন সে স্থানটি যে থানার অন্তর্গত সেখানে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে হবে। এ সময় জিডিতে পাসপোর্টে যদি কোনো দেশের ভিসা সংযুক্ত থাকে সে কথাটি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। সাথে হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের ফটোকপি দেয়া ভালো।
২। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বিশেষ করে চুরি বা ছিনতাই হলে পুলিশ ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাসপোর্টটিকে কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্টেড) করা হবে। এর ফলে সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য কেউ বিদেশে যেতে পারবে না।
আরও পড়ুনঃ ই-পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
৩। হারানো বা চুরি হওয়া পাসপোর্টটি পাওয়া গেলে ইমিগ্রেশন ডাটাবেজের কালো তালিকা থেকে পাসপোর্টটিকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্যে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট আবেদন করতে হবে।
৪। আর যদি পাসপোর্টটি পাওয়া না যায় তাহলে জিডির কপিসহ পুনরায় আবেদন করতে হবে। অতঃপর আবেদনটি যাচাই করে পাসপোর্ট অফিস নতুন পাসপোর্ট সরবরাহ করবে।
সাধারণত পুরোনো রেকর্ড কিংবা পুলিশি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়ে থাকে। তাই পুরো কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতে বিলম্ব হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ Passport Status কোনটার কি মানে জানতে ক্লিক করুন
বিদেশে পাসপোর্ট হারালে করণীয়
১। দেশের বাইরে পাসপোর্ট হারালে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে সেই দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস খুঁজে বের করা। ওরা এ ধরনের জটিলতা থেকে উত্তরণের জন্য সম্ভাব্য সব দিক থেকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
২। দেশের মত ওখানেও পাসপোর্ট হারানো জায়গার নিকটস্থ থানায় রিপোর্ট করে একটি জিডি করতে হবে।
৩। তারপর সি-ফর্ম পূরণপূর্বক মিনিস্টার কাউন্সিলর বরাবর ট্রাভেল পারমিট ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। সি-ফর্মটি সাধারণত দেয়া হয় বিদেশ গমনের পর যে হোটেলে ওঠা হয় সেখান থেকে। আবেদনের সাথে যে কাগজগুলো লাগবে সেগুলো হলো-
✪ জিডির কপি
✪ হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি
✪ হারানো পাসপোর্টের ভিসা
✪ এরাইভাল ভিসা কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
✪ পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৪। অতঃপর দুই দিনের ভেতরেই ট্রাভেল পারমিট পাওয়া যেতে পারে। আর এটিই সে সময়ের জন্য পাসপোর্টের কাজ করবে।
আরও পড়ুনঃ
❒ পাসপোর্ট লাগে না বিশ্বের যে ৩ জনের মানুষের
❒ সঠিক ও নির্ভুলভাবে আয়কর রিটার্ন তৈরি করবেন যেভাবে
❒ কিভাবে পাসপোর্টের প্রচলন হয়েছিল
❒ ই-পাসপোর্টে আর থাকছে না স্বামী-স্ত্রীর নাম
ট্রাভেল পাস বা ডকুমেন্ট
বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললে দেশে ফেরার জন্য যে অনুমতিপত্র দেওয়া হয়, তাই ট্রাভেল পাস বা ডকুমেন্ট। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে সাময়িক ভ্রমণ পাস বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়।
তবে দেশে এসে অবশ্যই নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। অন্যথায় ট্রাভেল ডকুমেন্ট বা ট্রাভেল পাস দিয়ে আর কোনো দেশে ভ্রমণ করা যাবে না।
পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাতায়াত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ও নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রতিটি পাসপোর্টের আলাদা ব্যবহার ও গুরুত্ব রয়েছে। এর সঠিক ব্যবহার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
❑ জেনে রাখুন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ মানিব্যাগে যেসব জিনিস রাখা উচিত না