ফেসবুক তারুন্যের অপমান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার
কবীর হুমায়ুন
বর্তমান তরুন ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট ব্যবহার করে না এমন কাউকে পাওয়া খুবই কঠিন।বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ রাখা, প্রিয় মুহুর্তগুলো শেয়ার করা কিংবা হৃদয়ের শোক গাঁথা প্রিয়জনের মাঝে বিলিয়ে একচিলতে সুখের আশায় আমরা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট ব্যবহার করি।
তবে, আমাদের দেশের তরুন প্রজন্মের মাঝে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুঁ মারা যেন আমাদের প্রাত্যহিক কাজেরই অংশ। পুরনো দিনের বন্ধুকে ফেসবুকের মাধ্যমে খোঁজে পাওয়া কিংবা স্ট্যাটাসে সুখ-দুঃখের ফিরিস্তি তুলে ধরে পাওয়া আনন্দের কমতি নেই।
তাছাড়া, দুরে কোথাও কোন ফেসবুক বন্ধুর দেখা পেলে অকৃত্রিম মমত্বের দেখাও মেলে প্রায়শ। কিন্তু আমরা যে কোন জিনিসের নেতিবাচক ব্যবহার খূব সহজে করে ফেলি, কারণ আমাদের সমাজে নেতিবাচক খুব সহজে ভাইরাসের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর এটা আমরা সমাজ প্রতিদের কছে থেকে শিখি, আমাদের দুঃখ এখানেই।
কারণে অকারণে ছবি ট্যাগ করে অন্যের ওয়াল দখল করতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। আর আপত্তিকর ছবি সেটা তো খুব দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছি। কোন কিছুই আমাদের বিবেকে বাঁধেনা। আসলে আমাদের সমাজ এবং সামাজিক অবস্থার এমন হয়েছে যে কারো কোন বিবেক আছে বলে মনে হয় না।
তাই আপত্তি কর ছবি আপলোড দিয়ে অন্যের ওয়ালে ট্যাগ করে মজা লুটার চেষ্টা করে বিবেকহীন মানুষ গুলো, তারা ভুলে যায় এসব ছবি প্রিয়জনের মাঝে আমাদের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের জন্ম দেয়, আমরা সমাজের কাছে বিকৃত রুচির মানুষ হিসেবে পরিগণিত হই। আর এসবে অভ্যস্ত হয়ে এক সময় অন্যের মেমোরী কার্ড থেকে আপত্তিকর ছবি হাতিয়ে নিই এবং নকল একাউন্ট খোলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনের বারোটা বাজাতেও আমরা এখন পরিপক্ক।
ফেইক একাউন্ট খোলে অন্যে আপত্তিকর ছবি আপলোড করার কথা আমরা অনেকেই জানি এবং আমাদের অনৈতিক চরিত্রের প্রকাশ ঘটাতে আমাদের বুক তখন একটুও কাঁপেনা। আপত্তিকর ছবির মানুষটিকে আমরা আলোচনার রসদ বানাই, সুযোগ সন্ধানী সংবাদকর্মীরা এক হাত নিতে ছাড়েন না।
সাবাশ! তারুন্য (?)। এর পরও কি আমরা ক্ষান্ত হয়েছি ? হইনি, বরং প্রতিনিয়ত আমরা অন্যের ক্ষতি করার জন্য ফেসবুক ফেইক আইডিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছি। আমাদের বিবেক, আমাদের তরুন সমাজ কবে বদলাবে, কবে আমরা সচেতন হবো?
এমনও দেখা গেছে, ভিনদেশী মেয়ের সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হওয়ার সুবাদে তাকে নিয়ে আমরা দ্বৈত জীবনের স্বপ্ন দেখি, ঘরে থাকা প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা আমরা ভুলে যাই, আমাদের সন্তানের স্বর্গীয় চাহনির কথাও তখন অনৈতিকতা থেকে আমাদের দুরে রাখেনা।
তাই, ভিনদেশী মেয়ে বন্ধুকে আমরা অনেকে অবিবাহিত বলে শপথ করি! নিজের স্বত্তাকে ভুলুন্ঠিত করি। অনেকে আবার ব্যবসা-বানিজ্য ছেড়ে দিয়ে মূল্যবান সময়ের বেশিরভাগই ফেসবুকে কাটায়, চোখে পড়ে এমনও। আর তরুন সমাজ তো পড়া-লেখা ফাঁকি দিয়ে ফেসবুক নিয়া পড়ে থাকে।
এসব আমাদের মতো দেশের জন্য বেমানান, তারুন্যের অবমাননা, নৈতিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার। তাছাড়া, কারো আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়ালে আমাদের অনেক সংবাদকর্মী ভাইদের যেন পৌষ মাসের দেখা মেলে। আমাদের হীনমন্যতায় প্রযুক্তির শিকার হওয়া মানুষটির কাটা ঘায়ে নুনের ছিটাতে বিবেক আমাদের নিবৃত্ত করতে পারেনা।
অথচ, আমাদের দেখতে হয় সেই সংবাদকর্মীদের কেহ কেহ জব্দকৃত বিভিন্ন জিনিস পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে এবং পরিজনদের দেয়! তাই, আসুন নিজে বদলে যাই এবং অন্যকে বদলানোর পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখি। দেখবেন, সমাজ থেকে অনৈতিকতা দূর হবে।
অন্যের আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করার মাঝে বাহাদুরীর কিছু নেই। মনে রাখবেন আজ অন্য কাউকে অপমান করছেন আগামীকাল অন্য কেউ আপনাকে অপমান করতে পারে। ফেসবুকে অন্যকে হেয় করার মাধ্যমে তারুন্যের অপমান হয়, প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়- এটি আমাদের মানা উচিত। মনে রাখবেন অন্যের উপকার করতে না পারেন ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না দয়া করে।
❑ পাঠকের দৃষ্টি ও চশমা থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে …