আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ফুলকপির জাদুকরি গুণ । ফুলকপি শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। আবার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদেরও ভালো বন্ধু এই ফুলকপি।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: মূত্রথলি ও নারীদের প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির ভূমিকা অপরিসীম। এতে সালফোরাফেন নামে এমন এক উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই উপাদানটি ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করে এবং বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে।
হজমে সাহায্য করে: ফুলকপিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার-জাতীয় উপাদান রয়েছে, যা খাবার হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এছাড়া এর ফাইবার খাবার হজম করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: ফুলকপি হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এর সালফোরাফেন নামের উপাদানটি উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং কিডনি সুস্থ রাখে। শুধু তাই নয়, ধমনীর ভেতরে প্রদাহ রোধেও কাজ করে ফুলকপি।
দহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে: ফুলকপিতে ‘অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি নিউট্রিয়েন্টস’ নামে এমন এক উপাদান রয়েছে; যা শরীরের দহন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় লেবু
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে: ফুলকপিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন-বি রয়েছে, যা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স মস্তিষ্কের কগনিটিভ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এতে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়।
শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে: এতে বিদ্যমান ভিটামিন এবং মিনারেল শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কে, ভিটামিন বি৬, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। নিয়মিত ফুলকপি খেলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।
দাঁতকে সুরক্ষা করে: অকালে দাঁত লালচে হয়ে যাওয়া ও দাঁতের মাড়ি দুর্বল হওয়ার হাত থেকে বাঁচায় ফুলকপি। কারণ এতে রয়েছে দাঁত-মাড়ির উপকারী ক্যালসিয়াম ও ফ্লুরাইড। উপাদানগুলো দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি ও বাড়ন্ত শিশুদের দাঁতের পূর্ণ বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী: কম ক্যালরিযুক্ত ও উচ্চমাত্রার আঁশসমৃদ্ধ ফুলকপি চুল ভালো রাখে। ত্বকের সংক্রমণও প্রতিরোধ করে।
উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসঙ্কোচে ফুলকপি খেতে পারেন। কেননা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরল কমাতে এই সবজিটি আমাদের বন্ধু। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে; যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক।
ফুলকপির ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত পরিমাণে এই সবজি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই সবজি হজম করা খুব কষ্টকর। বিশেষ করে যখন এটি কাঁচা খাওয়া হয়। ফলে পেট ফুলে যাওয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
প্রায় সব মানুষই ফুলকপি পছন্দ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সবজিতে রাফিনোজ নামক একটি পদার্থ রয়েছে। যেটি এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। প্রাকৃতিকভাবেই এই কার্বোহাইড্রেট কিছু সবজিতে উপস্থিত থাকে। সমস্যা হলো, এই কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীর ভাঙতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ তুলসি পাতার ওষধি গুণাগুণ
আপনি যখনই এই কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ সবজি গ্রহণ করলেন, এরপর সেটি ছোট অন্ত্র থেকে বড় অন্ত্রে চলে যায়। সব শেষে যখন তারা বৃহৎ অন্ত্রে প্রবেশ করে, তখন সেখানে থাকা ব্যাকটেরিয়া এটিকে গাজনপ্রক্রিয়া শুরু করে। এর পরেই পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে। ফলে পেট ফুলে যায়।
যাদের জন্য ফুলকপি খাওয়া ঠিক নয়
❖ থাইরয়েডের সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য ফুলকপি ক্ষতিকর। কারণ এতে টি-৩ এবং টি-৪ হরমোন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
❖ ফুলকপিতে পটাসিয়াম বেশি থাকে। বেশি পরিমাণে খেলে রক্ত ধীরে ধীরে ঘন হতে থাকে। এতএব, যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফুলকপি খেলে ভালো হয়।
❖ যে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, তারা ফুলকপি এড়িয়ে চললে ভালো।
প্রায়ই যদি কাঁচা ফুলকপি খান, তাহলে জেনে রাখুন, কাঁচা ফুলকপিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। হজমের সমস্যায় ভুগলে সব সময় রান্না করা ফুলকপি খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফুলকপি সিদ্ধ করলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই সবজিটি সীমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ মুলার পুষ্টি গুণ ও নানা উপকারিতা