আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: ফান্ডিং ও বিনিয়োগ: টাকা আসবে কোথা থেকে ? ভালো আইডিয়া আছে, পরিকল্পনাও তৈরি — কিন্তু সমস্যা একটাই: টাকা কোথা থেকে আসবে? এটি অনেক উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ব্যবসা শুরু করতে প্রথমে ছোট খরচ লাগলেও, ধীরে ধীরে বড় হতে চাইলে দরকার হয় *ফান্ডিং বা বিনিয়োগ*। এই পর্বে আমরা জানব, আপনি কোথা থেকে টাকা তুলতে পারেন, কোন ধাপে কোন উৎস ভালো, এবং বিনিয়োগ পাওয়ার আগে কী প্রস্তুতি দরকার।
১। স্টার্টআপ ফান্ডিং মানে কী?
স্টার্টআপ ফান্ডিং বলতে বোঝায় নতুন ব্যবসা বা স্টার্টআপ কোম্পানি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ। এটি হলো একটি নতুন কোম্পানি বা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, যা তাদের পণ্য বা পরিষেবা বিকাশে, তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে, এবং তাদের কর্মীদের বেতন প্রদানে সহায়তা করে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, স্টার্টআপ ফান্ডিং হলো একটি নতুন ব্যবসার জন্য বিনিয়োগ, যা তাদের ব্যবসা শুরু করতে, তাদের পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করতে, এবং তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
২। স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের ধরণ
স্টার্টআপ ফান্ডিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা মূলত স্টার্টআপের প্রয়োজন এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের উপর নির্ভর করে। প্রধানত তিনটি ধরনের ফান্ডিং রয়েছে: কার্যকরী মূলধন, সাম্যের অর্থায়ন এবং ঋণ অর্থায়ন।
এখানে বিভিন্ন ধরনের ফান্ডিংয়ের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
❁ কার্যকরী মূলধন (Working Capital): এটি স্টার্টআপের দৈনন্দিন কাজকর্ম, যেমন – বেতন, ভাড়া, সাপ্লাই ইত্যাদি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ।
এর উৎস হতে পারে: স্ব-অর্থায়ন, পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ, এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ।
❁ সাম্যের অর্থায়ন (Equity Financing): এখানে স্টার্টআপের মালিকানা বা শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
এর উৎস হতে পারে: অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারী, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, এবং ক্রাউডফান্ডিং।
“SAFE নোট” (Simple Agreement for Future Equity) একটি বিশেষ ধরনের সাম্যের অর্থায়ন, যেখানে স্টার্টআপ মালিকানা ছেড়ে না দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। Georenus
❁ ঋণ অর্থায়ন (Debt Financing): এখানে ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়।
এর শর্তাবলী: ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময়সীমা, এবং সুদের হার।
এছাড়াও, স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে (যেমন – সীড ফান্ডিং, সিরিজ A, B, C ইত্যাদি) এবং উৎস (যেমন – ইনকিউবেটর, অ্যাক্সিলারেটর) রয়েছে।
৩। স্টার্টআপ ফান্ডিং পাওয়ার আগে যেসব প্রস্তুতি দরকার
স্টার্টআপ ফান্ডিং পাওয়ার আগে বেশ কিছু প্রস্তুতি দরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা, পর্যাপ্ত আর্থিক হিসাব রাখা, বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং আপনার ব্যবসার মূল ধারণা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা।
এখানে কিছু বিস্তারিত প্রস্তুতি দেওয়া হলো:
❁ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি: একটি বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (business plan) তৈরি করুন। এতে আপনার ব্যবসার ধারণা, লক্ষ্য, বাজার বিশ্লেষণ, আর্থিক পূর্বাভাস এবং তহবিল ব্যবহারের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
❁ আর্থিক হিসাব: আপনার ব্যবসার আর্থিক হিসাবগুলো সঠিকভাবে রাখুন এবং তা বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত করুন। এতে আপনার আয়, ব্যয়, লাভ এবং ক্ষতির হিসাব অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
❁ বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ: সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। তাদের আপনার ব্যবসার ধারণা এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান।
❁ মূল ধারণা স্পষ্ট করুন: আপনার ব্যবসার মূল ধারণাটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। কেন আপনার ব্যবসাটি অন্যদের থেকে আলাদা, কেন তারা আপনার ব্যবসার জন্য বিনিয়োগ করবে, তা বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে।
❁ নেটওয়ার্ক তৈরি: স্টার্টআপ কমিউনিটি এবং অন্যান্য উদ্যোক্তাদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। তারা আপনার ব্যবসা সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে।
❁ প্রস্তুত থাকুন: বিভিন্ন প্রকারের প্রশ্ন এবং আলোচনা জন্য প্রস্তুত থাকুন। বিনিয়োগকারীরা আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইবে।
❁ ধৈর্য রাখুন: ফান্ডিং পাওয়ার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে কাজ করুন এবং হতাশ হবেন না।
❁ অনুসন্ধান করুন: বিভিন্ন ফান্ডিং অপশন (যেমন: ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, ক্রাউডফান্ডিং, ইত্যাদি) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন। কোন উৎস আপনার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করুন।
❁ নিজস্ব মূলধন তৈরি: যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনার ব্যবসার জন্য কিছু নিজস্ব মূলধন তৈরি করুন। এটি আপনাকে বিনিয়োগকারীদের সাথে আরও ভালোভাবে আলোচনা করতে সাহায্য করবে।
❁ আইনগত প্রস্তুতি: আপনার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন। এটি আপনার ব্যবসার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
এই প্রস্তুতিগুলো আপনাকে স্টার্টআপ ফান্ডিং পাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
৪। স্টার্টআপ পিচ ডেক এ যা থাকতে হবে
একটি সফল স্টার্টআপ পিচ ডেকের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকা উচিত। এটি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করে। পিচ ডেকের মূল লক্ষ্য হল একটি আকর্ষণীয় এবং সুস্পষ্ট ব্যবসার ধারণা তুলে ধরা, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য সুস্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
৫। স্টার্টআপ পিচ ডেকের মূল উপাদান:
❁ সমস্যা: ব্যবসার মাধ্যমে সমাধান করা সমস্যাটি কি, তা স্পষ্ট করে তুলে ধরা।
❁ সমাধান: ব্যবসার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান কিভাবে করা হবে, তা ব্যাখ্যা করা।
❁ বাজার: ব্যবসার লক্ষ্য বাজারের আকার, বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাবনা তুলে ধরা।
❁ ব্যবসার মডেল: ব্যবসা কিভাবে অর্থ উপার্জন করবে, তার একটি স্পষ্ট চিত্র।
❁ যোগাযোগ: ব্যবসাটি কিভাবে বাজারে প্রবেশ করবে, তার পরিকল্পনা।
❁ প্রতিযোগিতা: বাজারে বিদ্যমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ব্যবসার অবস্থান।
❁ অর্থনৈতিক দিক: ব্যবসার আর্থিক পূর্বাভাস এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন।
❁ দল: ব্যবসার সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং তাদের অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন:
❒ বিজনেস মডেল কেমন হবে এবং লিন ক্যানভাস ও অন্যান্য টুল
❒ বাজার গবেষণা: গ্রাহক চাহিদা বোঝাই সাফল্যের প্রথম ধাপ
❒ একটি আইডিয়া থেকে ব্যবসা শুরু করার পথ
❒ উদ্যোক্তা মানসিকতা: ব্যবসার আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন
❒ স্টার্টআপ কি? বড় স্বপ্নের ছোট শুরু
৬। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
❁ স্লাইড ডেকের ডিজাইন: স্লাইডগুলো আকর্ষণীয় এবং সহজে বোধগম্য হতে হবে।
❁ সংক্ষিপ্ততা: প্রতিটি স্লাইডে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা উচিত।
❁ ভিস্যুয়াল: ছবি, গ্রাফ এবং চার্ট ব্যবহার করে তথ্য উপস্থাপন করা।
❁ বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিষ্কার: ব্যবসার ধারণা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজে বোধগম্য হতে হবে।
❁ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা: ব্যবসার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা করা এবং কিভাবে তা মোকাবেলা করা হবে তা ব্যাখ্যা করা।
❁ পুনর্গঠন: পিচ ডেকটিকে নিয়মিতভাবে আপডেট এবং পরিবর্তন করা।
টাকা আসবে, যদি আপনি জানেন কীভাবে, কখন ও কোথায় চাওয়ার কথা। নিজের ব্যবসা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে বিনিয়োগ আসবেই। মনে রাখুন, আইডিয়া বড় হলে টাকা আপনাআপনি আসে না — আনা লাগে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে।
❖ স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা থেকে আরও পড়ুন
🛒 Life Setup: Easy Shopping, Better Life.
আরও পড়ুন: ব্যবসায় সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও দল গঠন: একা নাকি টিম?