প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে গেছে ঈদ কার্ডের পুরনো আমেজ
কবীর হুমায়ুন
নব্বই দশক বা তার আগের প্রজন্মের কাছে পরিচিত এক নাম ঈদ কার্ড। ঈদ শুভেচ্ছা মানেই ঈদ কার্ড বিনিময়। এক সময় হাতে বানানো কার্ড দিয়ে জানানো হতো ঈদ শুভেচ্ছা। এরপর সর্বস্তরে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয় বেচা-কেনা।
ঈদ এলেই ধুম পড়ে যেত ঈদ কার্ড কেনার। নতুন পোশাক, জুতোর সঙ্গে ঈদ কার্ডের জন্যও ছিল আলাদা বাজেট। প্রিয়জনকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে কেনা হতো ঈদ কার্ড। ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের ঈদ কার্ডে ছিল ভিন্ন ভিন্ন শুভেচ্ছা বানী।
যুগের আবর্তনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটি প্রচলনের নাম ঈদ কার্ড। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও শিশু-কিশোর এবং তরুণ-তরুণীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিল ঈদ কার্ড বিনিময়ের বিষয়টি। রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পাড়ার গলিতে গলিতে দেখা যেত ছোট ছোট ঈদ কার্ডের দোকান। যেখানে সুলভ মূল্যে পাওয়া যেত বর্ণিল সব ঈদ কার্ড।
রং-বেরঙের নকশা করা ঈদ কার্ডের কদর ছিল বেশি। দৃষ্টিনন্দন ঈদ কার্ডে বাহারি রং আর নকশা করা হতো। চাঁদ, তারা, মসজিদ, কাবাঘর, কার্টুন, এমনকি প্রিয় তারকাদের ছবিসহ ঈদ কার্ড পাওয়া যেত। আর কার্ডের ভেতরে লেখা থাকতো শুভেচ্ছা বানী। বলা যায়, ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল এই ঈদ কার্ড।
মোবাইল ফোনে এসএমএস আর সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তায় হারিয়ে গেছে ঈদকার্ড। অথচ কয়েক বছর আগেও ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ঈদ কার্ডের বিকল্প কল্পনা করা যেত না। বন্ধু-বান্ধব আর আত্নীয়- স্বজনদের শুভেচ্ছা জানানোর রীতিও দ্রুত পাল্টে গেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে তরুণ-তরুণীরা। ক্রেতাশূণ্য হয়ে পড়েছে শুভেচ্ছা কার্ড হাউজগুলো।
আরও পড়ুনঃ একযুগ পেরিয়ে আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ
আগে বন্ধু আর ফ্যামিলির অনেকের জন্য ঈদ গিফট কার্ড কিনতেন, এখন তেমন আর কেনা হয় না। কারণ ঈদ কার্ডের পরিবর্তে মোবাইলে মেসেজ আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব বন্ধুকে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দেন।
অযথা কাগজের কার্ড কিনে কি লাভ? কাছের বন্ধুদের কিছু গিফট দেয়া হয় । বন্ধু দিবস, ঈদ, ভালোবাসা দিবসের ব্যাপক শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি হতো। বলতে গেলে ঈদ কার্ডের কোন চাহিদাই নেই। কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন দোকান ও ফুটপাতে দেখা যেত অস্থায়ী ঈদ কার্ডের দোকান। কিন্তু এখন আর স্থানী ছাড়া অস্থায়ী ঈদ কার্ডের দোকান চোখে পড়ছে না।
বড় দোকানগুলোতে ঈদ কার্ড থাকলেও কোন বিক্রি নেই। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে ঈদ কার্ড পাওয়া যেত। ঈদ কার্ড বিক্রি না হওয়ায় অনেক দোকানি মোবাইল এসএমএস ও ইন্টারনেটকে দায়ী করেন।
এরই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ আত্নীয়তা আর সামাজিকতা পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। মোবাইলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসএমএস দিলে খরচ কম এবং অনেক দূরে থেকে পৌঁছানো সহজ। বর্তমান ডিজিটাল ও আধুনিকতায় এমনিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নিজেদের ঐতিহ্য। ঝুঁকে পড়ছে মোবাইল এসএমএস ও ইন্টারনেটের প্রতি।
এক সময় সকল বয়সী মানুষদের মাঝে ঈদ কার্ডের ভালো আবেদন ছিলো। এক এক জনের শুভেচ্ছা জানানোর স্টাইল ছিলো একেক রকম। এসব কার্ড দেখে মানুষ পুলকিত হতো। সেই কার্ড সংরক্ষণ করতো বহুবছর। এখনকার টেক্সট এসএমএস একেবারেই প্রাণহীন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমের এই ঈদ শুভেচ্ছাগুলো মানুষের মনে দাগ কাটে না। বরঞ্চ বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
❑ পাঠকের দৃষ্টি ও চশমা থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ একযুগ পেরিয়ে আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ