আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত । আল্লাহ তাআলার কাছে পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ। মসজিদে আগে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের প্রতি আগ্রহী থাকা সওয়াবের কাজ। প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এ কাজের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি লোকেরা জানত যে আজান ও প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে কী নেকি আছে, তাহলে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের সালাতে কী নেকি রয়েছে, তবে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও ওই দুই সালাতে আসত।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৫)
ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন
সাহাবায়ে কেরাম প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীর ওপর মহান আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন ও তার জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আবু উমামা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন ও তার ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, দ্বিতীয় কাতারের ওপর? তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীদের জন্য…।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৩১৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করেন এবং তার ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীদের জন্য। আর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় পদক্ষেপ হলো, যা কাতারে শামিল হওয়ার জন্য (বান্দা) করে থাকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৪৩)
প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীর জন্য তিনবার ক্ষমা
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, একবার রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি সেভাবে কাতারবদ্ধ হবে না, যেভাবে ফেরেশতারা তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ফেরেশতারা কিভাবে তাঁদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? জবাবে তিনি বলেন, তাঁরা আগে প্রথম কাতার পূরণ করেন। অতঃপর কাতারে ঘেঁষে ঘেঁষে দাঁড়ান। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৩০)
ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীর জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৯৯৬)
ওপরের হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীর জন্য মহান আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা ও রাসুল (সা.) দোয়া করেন। বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রহমত নাজিল করেন ও তার ফেরেশতারা দোয়া করেন প্রথম কাতারের লোকদের জন্য। আর মুওয়াজজিনের আওয়াজ যত দূর যায় তত দূর পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। জীব ও জড় পদার্থ যে-ই তার ধ্বনি শ্রবণ করে, সে-ই তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গে জামাতে সালাত আদায় করে, তার জন্যও তদ্রুপ সওয়াব আছে।’ (নাসাঈ, হাদিস : ৬৪৬)
আর নারীরা জামাতে উপস্থিত হলে পুরুষের জন্য সামনের কাতারে সালাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য পেছনের কাতারে সালাত আদায় করা উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট কাতার হলো পেছনের কাতার। আর নারীদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো পেছনের কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)
কল্যাণ থেকে বঞ্চিত
সামনের কাতারে নামাজ আদায় না করা বা এ ব্যাপারে মনের ভেতরে আগ্রহ না জাগার অভ্যাস অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা মনে করে যে মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেই চলবে। এটা একদিক থেকে ভালো, বাকি এতটুকুতেই তুষ্ট থাকা, এতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না; বরং শুধু মসজিদে এসে নামাজ আদায় করাই নয়, মুমিনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রথম কাতারে ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এর গুরুত্ব নিজের মনে ফুটে ওঠা। যার ভেতরে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার অভ্যাস থাকবে সে অবশ্যই নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি আল্লাহর রহমত ঢের বেশি থাকবে।
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবাগণকে পেছনের কাতারে দেখে বললেন, সামনে এসো এবং আমার অনুসরণ করো, অতঃপর দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করবে। এমন কিছু লোক সব সময় থাকবে, যারা নামাজে পেছনে থাকবে। আল্লাহ তাদের (নিজ রহমত হতেও) পেছনে রাখবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৮, সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৬৭৯)
আরও পড়ুনঃ
❒ বৃক্ষরোপণে দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের পুরস্কার
❒ মুমিনদের জন্য জান্নাতের ৬ চমকপ্রদ উপহার
❒ ৭টি সহজ অভ্যাস যা এনে দেবে অফুরন্ত সওয়াব
❒ আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অনন্য দোয়া
❒ যেসব নফল ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে
❒ সকালের শুরুতে রাসুল (সা.) এর বরকতময় দোয়া
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের আপন রহমত, মহাঅনুগ্রহ, উচ্চ মর্যাদা, ইলম এবং এ জাতীয় জিনিস থেকে হটিয়ে দেবেন।
আমাদের ভেতরে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে, যারা মসজিদে প্রবেশ করে দরজার আশপাশে কোথায় ফাঁকা জায়গা আছে, এমন জায়গায় খুঁজতে থাকে। এর কারণ হচ্ছে, নামাজ শেষে যেন সহজেই মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া যায়। তাদের যতই প্রথম কাতারের দিকে যেতে বলা হয়, তারা অন্যদের পাঠিয়ে দেয়, নিজে যেতে বিলকুল রাজি না। এ ধরনের মনোভাব, এমন চিন্তা লালন করা হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। এমন ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের ইবাদতে পিছিয়ে থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের সব কল্যাণ থেকে পিছিয়ে দেন। এ জন্য এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা খুব বেশি জরুরি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন মনমানসিকতা থেকে হিফাজত করুন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ উপকারের পর খোঁটা: একটি ভয়াবহ গুনাহ

