আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: পাসওয়ার্ডের বদলে বায়োমেট্রিক আরও বেশি সুরক্ষিত । স্মার্টফোন, ই-মেইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস সুরক্ষিত রাখতে পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই পাসওয়ার্ড হ্যাক হচ্ছে অহরহ। তাই পাসওয়ার্ডের চেয়েও শক্তিশালী বায়োমেট্রি আরও বেশি সুরক্ষিত। জানুন কীভাবে এই পদ্ধতি চালু করবেন।
বায়োমেট্রিকে সুবিধা কী?
প্রথাগত পাসওয়ার্ডের থেকে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন-এর সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে আলাদা করে কোনও কিছু ‘কি-ইন’ করতে হয় না। ফলে আপনার সিস্টেমে ফাঁদ পেতেও সুবিধা করতে পারবে না হ্যাকাররা। মাইক্রোসফটের সিকিওরিটি কমপ্লায়েন্স এবং আইডেন্টিটি বিভাগের কর্পোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট বাসু জাক্কালের আবার দাবি, ‘চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব বলছে, সেকেন্ডে ৫৭৯টি হিসেবে বছরে ১৮০০ কোটি পাসওয়ার্ড অ্যাটাক হচ্ছে অনলাইনে।
সেখানে প্রথাগত পাসওয়ার্ডের বদলে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন অনেক বেশি সুরক্ষা দেওয়ায়, আগামী দিনে এটিই হতে চলেছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।’ বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০২৫ সালের মধ্যে অনলাইনে হওয়া ৮০% লেনদেনের ক্ষেত্রেই বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন ব্যবহার হবে। বিশাল আবার জানাচ্ছেন, হ্যাকারদের কাজ আরও দূরহ করতে, বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন-এর সঙ্গে পিন বা ওটিপি’র মতো বিকল্প জুড়ে দিয়ে আগামী দিনে পাসওয়ার্ড হতে চলেছে ‘মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন’। ফলে বোঝাই যাচ্ছে হ্যাকারদের জন্য কোশ্চেন-পেপার দূরহ করার পথেই এগোচ্ছেন সাইবার-স্পেসের নিয়মিত বাসিন্দারা।
পাসওয়ার্ড কেন সুরক্ষিত নয়?
স্মল-লার্জ, যেকোনও ক্যাপসের সঙ্গে সংখ্যা, স্পেশ্যাল ক্যারেক্টার বসিয়ে ঘেঁটেঘুঁটে আপনি যে জটিল কম্বিনেশনটাই বাছুন না কেন (যা আপনি মনে রাখতে পারবেন বা পারবেন না), তা প্রধানত দুই ভাবে সুরক্ষিত রাখে অ্যাকাউন্ট—হ্যাশিং এবং এনক্রিপশনের মাধ্যমে। তা দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টের সিস্টেম অ্যাডমিনিসট্রেটর তো নিজের প্রান্ত থেকে তা ‘সুরক্ষিত’ করলেন।
আরও পড়ুনঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশর আগে সেটি নিরাপদ কি না জেনে নিন
এখন সব তালা খোলা যায় এমন ‘মাস্টার কি’ যেমন থাকে, তেমনই যে কোনও এনক্রিপশন ‘ডি-ক্রিপ্ট’ করে পড়ার জন্য ‘এনক্রিপশন অ্যালগরিদম’ বা হ্যাশিং পড়ার জন্য ‘হ্যাশ কি বা হ্যাশ অ্যালগরিদম’ থাকে হ্যাকারদের কাছে। ফলে আপনি যে সর্বদাই একটা ‘আশঙ্কা’র মধ্যে থাকছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যতই আপনি ফায়ারওয়াল-অ্যান্টি ভাইরাসের সুরক্ষাবলয়ে থাকুন না কেন, ইন্টারনেটে প্রতিদিন গড়ে ২৮-৩০ কোটি ‘পাসওয়ার্ড স্প্রেয়িং’, ‘ক্রেডেনশিয়াল স্টাফিং’-এর মতো একাধিক হ্যাকিং টেকনিক দিবারাত্র চালিয়ে যায় হ্যাকাররা। সঙ্গে রয়েছে ‘ফিশিং’ এবং ‘কি-লগার্স’ বা ‘স্ক্রিন স্ক্যাপ্রার্স’ এর মতো ম্যালওয়্যার হানা।
আপনার কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনই যদি কম্প্রোমাইজ়ড হয়ে হ্যাকারদের কাছে আপনার তথ্য পৌঁছে দেয় আপনার অজান্তেই, তাহলে আপনি আর কী করবেন। আপনি যখন অ্যাকাউন্টে ঢোকার জন্য কি-বোর্ডে তা এন্টার করছেন, তখনই তা জেনে যাচ্ছে হ্যাকার।
এবার একটু জানা যাক, কীভাবে তা থেকে পরিত্রাণের সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাসওয়ার্ড আগামী দিনে হবে পাসওয়ার্ড, মানে আলফা-নিউমেরিক জাতীয় যেকোনও পাসওয়ার্ড ছাড়া বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশনের সাহায্যে। তা ফিঙ্গার স্ক্যান হতে পারে, রেটিনা স্ক্যান হতে পারে, ফেস বা ভয়েস স্ক্যান হতে পারে। মোদ্দা কথা হল, আপনিই হবেন আপনার পাসওয়ার্ড। বা গুগল পাসকিজ়-এ সেকেন্ডারি হার্ডওয়্যার দিয়ে বা আইক্লাউড কি-চেন লগ অন-এর সাহায্যে।
একটা কথা অবশ্য মনে রাখতে হবে। ইন্টারনেটে মোড়া বিশ্বে প্রযুক্তি এবং হ্যাকারদের বুদ্ধির দৌড় এখন এতটাই চমকপ্রদ, যে কেউ বুক বাজিয়ে বলতে পারে না যে, কোনও পাসওয়ার্ডই অক্ষয়, অব্যয়। তবে সাধারণ অক্ষরের থেকে এগুলো ব্যবহার করলে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশনের সুবিধা হচ্ছে, তা এত রকম জটিল কম্বিনেশন তৈরি করে, তার পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে, তা ডিক্রিপ্ট করতে হ্যাকারদের দিন-মাস-বছর-যুগও লাগতে পারে। এইটুকু সান্ত্বনা নিশ্চিত করতে পারেন আপনি।
একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা সহজ হবে বোঝার জন্য। ধরুন আপনি পাসওয়ার্ড দিলেন ‘#PasSwORd152’। যা এনক্রিপশনের পর দেখতে হতে পারে ‘00110101010100101’ এবং হ্যাশিং এর পর ‘#5Yro(@KJTvcj3$%^*&!3265M)!J32We’র মতো।
বোঝাই যাচ্ছে হ্যাশ ফাংশন ব্যবহার করলে তা একটু বেশি সুরক্ষিত থাকে, কম্বিনেশনে অনেক বৈচিত্র্য বেশি থাকায়। কিন্তু ফেস বা ভয়েস অথেন্টিকেশনে এই পাসওয়ার্ডের ক্যারেক্টার কিন্তু সংখ্যায় শ দেড়েকের আগে থামবে না। এবং তার পারমুটেশন-কম্বিনেশন এত বিচ্ছিরি রকম জটিল হবে, কোনও অ্যালগরিদম দিয়েও তা ভাঙা বা পড়ে ফেলা শক্ত।
তাই ইনফোসিসের চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার এবং সাইবার সিকিওরিটি প্র্যাকটিসের প্রধান বিশাল সালভির দাবি, বর্তমানে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার পাসওয়ার্ডলেস অথেন্টিকেশন ব্যবসা আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে অবিশ্বাস্য ১০-১৫ গুণ বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ যেসব লক্ষণে বুঝবেন পাওয়ার ব্যাংক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে