আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের যেসব প্রধানমন্ত্রী জেলে গিয়েছিলেন । পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খানকে শনিবার তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পাঞ্জাব পুলিশ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এমন ব্যক্তিদের কারাগারে যাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
এ তালিকায় শুরুতেই রয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করা হয় সোহরাওয়ার্দীকে। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
আসলে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানানোয় সোহরাওয়ার্দীর ওপর এমন খড়্গ নেমে আসে। বিনা বিচারে তাকে করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়।
পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হন তিনি। জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালে একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পরে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল এই রায় কার্যকরও করা হয়।
জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টোও পরবর্তী সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বেনজির পাকিস্তানের প্রথম নারী সরকারপ্রধান।
১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় বসেন বেনজির। তবে সরকারপ্রধান হওয়ার আগেই ১৯৮৫ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো আটক হন বেনজির। ওই সময় তাকে ৯০ দিন গৃহবন্দী রাখা হয়।
পরবর্তী সময় ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে আবারও বেনজিরকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতির মামলায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সবশেষ ২০০৭ সালের তাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে ক্ষমতা থেকে হটাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী সভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন বেনজির।
কারাবরণ করতে হয়েছে পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আমলে তিনি টানা ১০ বছর বিদেশে নির্বাসিত ছিলেন। পাকিস্তানে ফিরে এলে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আবারও সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে আবার গ্রেফতার হন নওয়াজ। দুর্নীতির মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুই মাস পর তার সাজা স্থগিত হলে তিনি কারামুক্ত হন। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি আবার গ্রেফতার হন। একটি মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশত্যাগের অনুমতি পান তিনি। এর পর থেকে নওয়াজ বিদেশে আছেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিএমএল-এন নেতা শহীদ খাকান আব্বাসি। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জামিন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন।
পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা আস্থা ভোটে হেরে ইমরানের সরকার ক্ষমতা হারায়। পরে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে।
ক্ষমতা হারানোর পর ইমরানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়। জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। সূত্র: যুগান্তর
আরও পড়ুনঃ আইসিটির জন্য ২ হাজার ৩শ’ ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব