আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: পকেটে ফোন রেখে নিজের অজান্তেই নিজের বড় ক্ষতি করছেন । প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে হাতে। দেশ-বিদেশে কথা বলা থেকে শুরু করে উচ্চমানের ছবি তোলা- সবই করা যাচ্ছে মুঠোফোনটি দিয়ে। ফলে এটি হয়ে উঠছে মানুষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আকারে ছোট হওয়ায় এটি সহজেই স্থান করে নিচ্ছে মানুষের পকেটে। তবে এর ফলে শরীরে কি কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে? একদল গবেষকের দাবি অনুযায়ী পকেটে মোবাইল ফোন রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর তড়িত্-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাবে মানুষে শরীরের স্নায়ুতন্ত্র ও প্রজনন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ নিকোলাই কনোরোভ সম্প্রতি মোবাইল ফোন পকেটে রাখার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ যতটা তড়িত্-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের বিকিরণের শিকার হয় এর ৭০ শতাংশই ঘটে নিজের মোবাইল ফোন থেকে।
আর বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত, এমন বিকিরণে ফলে মানুষের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। গবেষকদের মতে, তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের বিকিরণের প্রাথমিক শিকার হয় মানুষের স্নায়ুতন্ত্র। এ ছাড়া প্রজনন অঙ্গও এমন বিকিরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সবেচেয়ে বেশি করে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়ারলেস নেটওয়ার্কে কানেক্টেড মোবাইল বুক পকেটে রাখলে আমাদের শরীরে বেশি রেডিয়েশন প্রবেশ করে।যদি ব্যাগে মোবাইল রাখার অভ্যাস করেন, তাহলে রেডিয়েশনের পরিমাণ অন্তত দুই থেকে সাত শতাংশ কম হয়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কেনার আগে যে বিষয় গুলো জানা প্রয়োজন
সেলফোন থেকে প্রাপ্ত রেডিয়েশন আর টিউমার গ্রোথের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। এই ধরনের রেডিয়েশনের ফলে বদলাতে পারে আপনার ডিএনএ স্ট্রাকচার, আসতে পারে বন্ধ্যাত্ব ও হৃদয়ঘটিত নানা সমস্যাও।
‘ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি’ জার্নালে প্রকাশিত তথ্য বলছে, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ২০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার পুরুষদের বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জীবনযাপন এবং পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে বিগত ৫০ বছর ধরে শুক্রাণুর মান ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বিগত বছরগুলির তুলনায় মোবাইল ফোনের ব্যবহারও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
এক গবেষক জানাচ্ছেন, পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যত্বের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্ভবত এই ধরনের যন্ত্র থেকে নির্গত রেডিয়োফ্রিকোয়েন্সি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড। যা প্রজননের উপর বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলে। জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়, সুইস ট্রপিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ ইনস্টিটিউট প্রায় ৩ হাজার জন পুরুষের উপর এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা করেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
প্রত্যেকের কাছে গবেষকেরা জানতে চেয়েছিলেন, তাদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার কেমন এবং দেহের কোন অংশের সংস্পর্শে ফোনটি থাকে। অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া উত্তরের ভিত্তিতেই গবেষকেরা জানিয়েছেন, যারা সারা দিনে ২০ বারের বেশি ফোন স্পর্শ করেন, তাদের মধ্যে ২১ শতাংশেরই শুক্রাণুর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কম। তাই ফোন রাখুন নিরাপদ দূরত্বে, সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুনঃ গাড়ি দুর্ঘটনা শনাক্ত করবে অ্যান্ড্রয়েড ফোন