আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নাসার মহাকাশযান সূর্যের কাছে গিয়ে ইতিহাস গড়ল । যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার একটি মহাকাশযান গতকাল বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার দিকে) সফলভাবে সূর্যের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয়েছে। মহাকাশযানটির নাম ‘পার্কার সোলার প্রোব’। এর আগে আর কোনো মহাকাশযান সূর্যের এত কাছাকাছি যেতে পারেনি।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, প্রোবটির একটি ‘আলোক সংকেত’ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের লরেল শহরে অবস্থিত জনস হপকিনস অ্যাপ্লায়েড ফিজিকস ল্যাবরেটরিতে (এপিএল) এসে পৌঁছেছে। এখান থেকে প্রোবটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
সৌরপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ডিসেম্বর যাত্রার পর থেকে মহাকাশযান বা প্রোবটির সঙ্গে এপিএলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। মহাকাশযানটির প্রোগ্রাম এমন করে ঠিক করা ছিল, তা যদি সফলভাবে সূর্যের কাছাকাছি প্রত্যাশিত স্থানে পৌঁছাতে পারে, তা হলে একটি আলোক সংকেত পাঠাবে। এই সংকেতের জন্যই নাসার বিজ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, পার্কার সোলার প্রোব সৌরপৃষ্ঠ থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল গতিতে গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সূর্যের দিকে ছুটতে শুরু করে। মহাকাশযানটি সূর্য পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৮ লাখ (৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন) মাইল দূরে রয়েছে। এই দূরত্ব সূর্যের খুব বেশি কাছের না হলেও নাসার বিজ্ঞানী নিকোলা ফক্স বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, “পৃথিবী থেকে সূর্য ৯ কোটি ৩০ লাখ (৯৩ মিলিয়ন) মাইল দূরে। যদি সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব এক মিটার ধরা হয়, তবে মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে রয়েছে।”
আরও পড়ুনঃ চাঁদের সবচেয়ে বড় ও পুরনো গর্তের বয়স ৪৩২ কোটি বছর
মহাকাশযানটিকে ১৪,০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বিকিরণ সহ্য করতে হচ্ছে। তবে এই তাপমাত্রায় যে কোনও ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তবে মহাকাশযানটি ৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি পুরু কার্বন-যৌগিক আবরণ দিয়ে সুরক্ষিত। আর মহাকাশযানটির বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত ঢুকে আবার বের হয়ে যাওয়া।
প্রকৃতপক্ষে, এটি মানুষের তৈরি যে কোনও বস্তুর চেয়ে দ্রুত গতিতে চলবে। প্রতি ঘণ্টায় মহাকাশযানটি ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিচ্ছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত পৌঁছতে এটির ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় লাগবে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহাকাশ যানটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল ‘করোনা’ অতিক্রম করার সময় দীর্ঘদিনের রহস্য সমাধান করতে পারবে।
ওয়েলসের ফিফথ স্টার ল্যাবসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জেনিফার মিলার্ড বলেন, “বায়ুমন্ডল আসলেই প্রচণ্ড গরম। কিন্তু কেন, সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই।”
সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি। কিন্তু সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে থাকা করোনার এমনও কিছু অংশ রয়েছে, যেখানের তাপমাত্রা মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই রহস্যের সমাধানও জানতে চান বিজ্ঞানীরা।
সংকেত পাঠানোর অর্থ হলো, মহাকাশযানটি নিরাপদ আছে এবং ঠিকভাবে কার্যক্রম চালাতে পারছে। আগামী ১ জানুয়ারি মহাকাশযানটি নিজের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ
❒ বাংলাদেশি পদার্থবিদের তোলা ছবিতে সূর্যের ভেতরটা কেমন দেখুন
❒ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী সৌরচ্ছটা: নাসা
❒ চাঁদের পর সূর্য ‘স্পর্শ’ ভারতের, গন্তব্যে পৌঁছে গেল আদিত্য এল-১
❒ মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ব্ল্যাক হোলের সন্ধান
পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের এতটা কাছাকাছি যাওয়ার ফলে এই নক্ষত্র সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব তথ্য সূর্যের চারপাশের অতি উত্তপ্ত অঞ্চলকে বুঝতে এবং সৌরবায়ুর উৎস শনাক্ত করতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে।
এর আগে সূর্যের কাছাকাছি অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে আসা মহাকাশযানগুলো বিজ্ঞানীদের নক্ষত্রটির বায়ুমণ্ডলের বাইরের সীমানা বুঝতে সাহায্য করেছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, এবারের মত মহাকাশযানটি যদি বেঁচে যায় তবে এটি ভবিষ্যতে সূর্যের চারপাশে মিশন চালিয়ে যাবে।
❑ মহাকাশ ও বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ অবশেষে জানা গেল চাঁদের বয়স