আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নবীজির শেখানো প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া । একজন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমানো পর্যন্ত পদে পদে দোয়ার শিক্ষা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতিটি কাজে স্বতন্ত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এবং দোয়াগুলো পড়তে উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নিচে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০টি দোয়া তুলে ধরা হলো।
১। ঘুমানোর দোয়া: اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার নামে আমি শয়ন করছি এবং আপনারই অনুগ্রহে পুনরায় জাগ্রত হবো। (বুখারি: ৬৩২৪)
২। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দোয়া: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আহয়া-না বা’দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থ: ‘সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।’ (বুখারি: ৬৩২৪)
৩। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া: اللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবায়িছ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি: ৬৩২২)
৪। টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া: الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’ অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন। (ইবনে মাজাহ: ২৯৭)
আরও পড়ুনঃ ফজিলত পূর্ণ ৭০টি ছোট আমল
৫। খাবার গ্রহণের আগে দোয়া: اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ اَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ ‘আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা- ফী-হি ওয়া আত্বইমনা খাইরাম্ মিনহু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন, ভবিষ্যতে আরো উত্তম খাদ্য দিন’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মেশকাত: ৪২৮৩)
৬। খাবার শেষে দোয়া: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়া সাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৮৫০)
৭। জামা পরার দোয়া: أُلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي، وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উয়ারি বিহি আওরাতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি।’ অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি লজ্জাস্থান ঢেকে রাখি এবং জীবনে সৌন্দর্য লাভ করি।’ (তিরমিজি: ৩৫৬০)
৮। আয়না দেখে দোয়া: اللهم أنت حسّنت خلقي فحسن خُلقي ‘আল্লাহুম্মা আনতা হাস্সানতা খালক্বি, ফাহাসসিন খুলুক্বি।’ অর্থ:‘ হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারায় সৌন্দর্য দিয়েছেন। অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন।’ (আহমদ: ২৪৩৯২; আবু ইয়ালা: ৫০৭৫)
৯। ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া: بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অর্থ: আল্লাহর নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই। (তিরমিজি: ৩৪২৬)
১০। ঘরে প্রবেশ করার দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি; বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা; ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যাণ চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করি। (আবু দাউদ: ৫০৯৬)
১১। মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া: اللَّهمَّ افتَحْ لِيْ أبوابَ رَحْمَتِك ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ (আবু দাউদ: ৪৬৬)
১২। মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ وَالصّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম। অর্থ: ‘আল্লাহ্র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর রাসুলের উপর দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন। (আবু দাউদ: ০১/১২৬; ইবনে মাজাহ: ০১/১২৯)
১৩। অজুর দোয়া: بِسْمِ ٱللَّٰهِ ‘বিসমিল্লাহ’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করলাম।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ৫৩৪; তিরমিজি: ২৫)
১৪। অজু শেষে দোয়া: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلاّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللّهُمّ اجْعَلْنِي مِنَ التّوّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন।’ অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (তিরমিজি: ৫৫; মুসলিম: ৩৪৫)
আরও পড়ুনঃ গুনাহ মাফের ২৩ আমল
১৫। আজান শুনে দোয়া: ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪُ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-জিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-য়িমাতি, আ-তি মুহাম্মাদান আল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা, ওয়াব‘আসহু মাকা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদতাহ’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! মুহাম্মদ (স.)-কে অসিলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফজিলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।’ (বুখারি: ১/২৫২,নং ৬১৪; বুখারি:১/২২২, নং: ৫৮৯)
১৬। বাজারে প্রবেশের দোয়া: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاَ يَمُوْتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইউহয়ী ওয়া ইউমিতু, ওয়াহুয়া হাইয়্যু লা ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাই-ইং কাদির। অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই, সকল ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না, তাঁর হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সবসময় সকল কিছুর ওপর ক্ষমতার অধিকারী। (তিরমিজি: ৩৪২৮; ইবনে মাজাহ: ৫/২৯১, হাদিস: ৩৮৬০; হাকেম: ১/৫৩৮)
১৭। নামাজে সালাম ফিরিয়ে দোয়া: اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।’ (আবু দাউদ: ১৫১২)
১৮। মা-বাবার জন্য দোয়া: رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)
১৯। সকল মুসলমানের জন্য দোয়া: رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)
২০। হাঁচি দিলে দোয়া: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন’। অর্থ : ‘সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি উভয় জগতের প্রতিপালক’। এরপর তার জন্য অন্যরা পড়বে- يَرْحَمُكَ اللَّهُ উচ্চারণ: ‘ইয়ারহামকাল্লাহ’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করুন’। এমন দোয়া শুনলে সে যেন পড়ে- يَهْدِيكُمُ اللَّهُ ويُصْلِحُ بالَكُمْ উচ্চারণ: ইয়াহদিকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’। অর্থ: ‘মহান আল্লাহ তোমাদের সুপথ প্রদর্শন করুন এবং তোমাদের অবস্থা শুদ্ধ করুন’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে বলবে- يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ উচ্চারণ: ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহ আপনাদের ও আমাদের ক্ষমা করুন’। (সহিহ বুখারি: ৬২২৪, আবু দাউদ: ৫০৩১)
২১। মুসাফাহার দোয়া: يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।’ (সালাফরা মুসাফাহার সময় এই দোয়া পড়তে অভ্যস্থ ছিলেন)
২২। কাউকে বিদায় জানানোর দোয়া: أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَآخِرَ عَمَلِكَ ‘আসতাউ দিউল্লাহা দীনাকা, ওয়া আমানাতাকা, ওয়া আ-খিরা আমালিকা’, অর্থাৎ, ‘তোমার দীন, ঈমান ও সর্বশেষ আমলের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তাআলাকে আমানতদার নিযুক্ত করলাম।’ (তিরমিজি : ৩৪৪২)
২৩। যানবাহনে চড়ার দোয়া: سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ ‘সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়ামা- কুন্না- লাহু মুক্বরিনীন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন’ অর্থ: হে আল্লাহ! মহান সত্তার পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করেছেন। আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম নই। বস্তুত আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।’ (শামায়েলে তিরমিজি: ১৭৩)
২৪। নিচে নামা ও উপরে উঠার সময় দোয়া: উপরে উঠতে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। (বুখারি: ২৯৯৩; মেশকাত: ২৪৫৩)
২৫। ক্ষমাপ্রার্থনার দোয়া: أسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذي لا إلهَ إِلاَّ هُوَ الحَيَّ القَيُّومَ وأتُوبُ إلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অনুবাদ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।’ (আবু দাউদ: ১৫১৭) অথবা শুধু أسْتَغْفِرُ اللَّهَ বলাও ক্ষমাপ্রার্থনার একটি দোয়া।
আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে নবীজির শেখানো ১৬ দোয়া
২৬। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের দোয়া: اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি’মাতিন আও বিআহাদিম মিন খালকিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়ালাকাশ-শোকরু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যেকোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সুতরাং আপনারই প্রশংসা, আপনারই কৃতজ্ঞতা।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩; সহিহ ইবনে হিববান: ২৩৬১: ৪২)
২৭। দাওয়াত খেয়ে দোয়া: اللهم بارك لهم فيما رزقتهم، واغفر لهم، وارحمهم উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফি-মা রজাকতাহুম, ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তাতে বরকত দান করুন, তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি দয়া করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫৭৬)
২৮। মজলিস থেকে উঠে দোয়া: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وبَحَمْدكَ أشْهدُ أنْ لا إلهَ إلا أنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক। অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তাওবা করছি। (তিরমিজি: ৩৪৩৩)
২৯। জানাজার নামাজে দোয়া: প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না, ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন ইসলামের উপর জীবিত রাখেন আর যাদেরকে মৃত্যু দান করেছেন তাদেরকে ঈমানের সঙ্গেই মৃত্যু দান করেন।’
অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের জানাজায় পড়বেন- اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً ا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفِّعًا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতাও ওয়াজ আলহু লানা আজরাও ওয়াজ আলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ কবুল করা হবে।’
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের জানাজায় পড়বেন- ًاَللّٰهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَّمُشَفَّعَة উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শা-ফিয়াতাওঁ ওয়া মুশাফফাআহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি: ৯৪৫; দারা কুতনি: ১৮৫৩; ইবনে আবি শায়বা: ৩/২৯৫)
৩০। কবরে মাটি দেওয়ার সময় দোয়া: مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى . بِسْمِ اللَّهِ وَفِى سَبِيلِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّ কোনও ব্যক্তিকে মাটি দেওয়ার সময় দোয়াটি বলার নিয়ম হলো, প্রথমবার মাটি দেওয়ার সময় ‘মিনহা খালাকনাকুম’ বলতে হয়। দ্বিতীয়বার ‘ওয়া ফিহা নুঈদুকুম’ বলতে হয়। আর তৃতীয়বার বলতে হয়— ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। -(সুনানে বায়হাকী, হাদিস: ৬৯৭৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/১৪৩, ১৫৪)
৩১। কবর জিয়ারতের দোয়া: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার। অর্থ: হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩)
৩২। শয়তান থেকে হেফাজতে থাকার দোয়া: لا إلهَ إلاَّ اللَّه وحْدهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ، ولَهُ الحمْدُ، وَهُو عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫১৮)
৩৩। নফসের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার দোয়া: اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনি রুশদি ওয়া আয়িজনি মিন শাররি নাফসি। অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে হিদায়াত নসিব করুন এবং আমার নফসের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করুন। (তিরমিজি: ৩৪৮৩)
৩৪। ঘুমে ভয় পেলে দোয়া: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّياطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ উচ্চারণ: আঊযু বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন গাদ্বাবিহি ওয়া ইক্বাবিহি ওয়া শাররি ‘ইবাদিহি ওয়ামিন হামাযাতিশ্ শায়া-ত্বীনি ওয়া আন ইয়াহদুরুন। অর্থ: আল্লাহর পূর্ণ কালেমাসমূহের দ্বারা তাঁর গজব ও তাঁর বান্দাদের খারাবি ও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও আমার নিকট তার উপস্থিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইছি। (আবু দাউদ : ৩৮৯৩, তিরমিজি : ৩৫২৮)
৩৫। সহবাসের দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা।’ অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাদের শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। (বুখারি: ১৪১, ৩২৭১)
৩৬। স্ত্রী সন্তান পরিবারের জন্য দোয়া: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَاماً উচ্চারণ: রাব্বানা হাবলানা মিন আঝওয়া-জিনা-ওয়া যুররিইইয়া-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিওঁ ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকীনা ইমা-মা। অর্থ: হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে এমন স্ত্রী-সন্তান দান কর যাদের দর্শনে আমাদের চক্ষুশীতল হয়ে যাবে। তুমি আমাদেরকে পরহেযগার লোকদের ইমাম (অভিভাবক) বানিয়ে দাও। (সুরা ফুরকান: ৭৪)
৩৭। দুঃসংবাদ শুনলে দোয়া: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। অর্থ: আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। পবিত্র কোরআনের এই দোয়াটি মৃত্যুর খবরসহ যেকোনো দুঃসংবাদে পড়া যায়। (সুরা বাকারা: ১৫৬)
৩৮। সুসংবাদ শুনলে দোয়া: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ উচ্চারণ: ‘আলহামদুলিল্লাহ আল্লাযি বিনিমাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত’। অর্থ: ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার নেয়ামতের মাধ্যমে ভালো কাজগুলো সম্পন্ন হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮০৩)৪০. জান্নাত লাভের দোয়া: اللهم اني اسالك الجنة واعوذ بك من النار উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২)
৩৯। জান্নাত লাভের দোয়া: اللهم اني اسالك الجنة واعوذ بك من النار উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২)
৪০। জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَرَبَّ إِسْرَافِيلَ أَعُوذُ بِكَ مِنْ حَرِّ النَّارِ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা জিবরাইলা ওয়া মিকাইলা, ওয়া রব্বা ইসরাফিলা, আউজু বিকা মিন হাররিন নারি ওয়া মিন আজাবিল কাবরি। অর্থ: হে আল্লাহ, জিবরাইল ও মিকাইলের প্রতিপালক এবং ইসরাফিলের প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের উত্তাপ ও কবরের আজাব থেকে। (সুনানে নাসায়ি: ৫৫১৯)
আরও পড়ুনঃ পবিত্র রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ