আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ৫ কোম্পানি । সকালে ঘুম থেকে জাগার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত, আধুনিক বিশ্বে আমাদের অস্তিত্বের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের ব্যবহার রয়েছে। বিদ্যুতের বহুমাত্রিক ব্যবহার সম্পর্কে যতই আলোচনা করা হয়, ততই খেয়াল হয় যে এটি শুধু একটি পরিষেবাই নয় বরং আধুনিক সভ্যতার জীবনীশক্তি।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত ক্ষয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের মতো গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। অন্যদিকে সৌরশক্তি, বায়ু, পানি ও ভূতাপীয় উৎস থেকে উৎপন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ফলে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে একটি টেকসই ও পরিচ্ছন্ন বিকল্প পাওয়া যায়।
নবায়নযোগ্য শক্তির কোনো শেষ নেই, এবং এই অফুরন্ত শক্তি থেকে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব। সবুজ বিপ্লবে যুক্ত হবার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আরো সমৃদ্ধ হয়। এতে করে সমাজ হয়ে ওঠে আরো সবুজ, আরো সুস্থ এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও আরো টেকসই একটি ভবিষ্যতের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
আমাদের অঞ্চলে, অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার কিছু কোম্পানি এই রূপান্তরকে দিন দিন সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে এমন সেরা ৫টি কোম্পানির কথা বলা হলো, যা জ্বালানি খাতে চিরকালীন এক পরিবর্তন বয়ে আনছে।
এসি এনার্জি (ফিলিপাইন)
একটি শীর্ষস্থানীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক কোম্পানি হিসেবে ‘গ্লোবাল ক্লিন এনার্জি’ প্রেক্ষাপটে এই কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। আয়ালা কর্পোরেশনের অংশ হিসেবে, ফিলিপাইনের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ‘এসি এনার্জি’র মূল ভিত্তি অনেক গভীরে এবং এর সাফল্যের ঐতিহ্যও বহুদিনের। এর নবায়নযোগ্য জ্বালানির দুর্দান্ত পোর্টফোলিওতে ২ দশমিক ৫ গিগাওয়াটেরও বেশি সক্ষমতা এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপের প্রকল্পের একটি শক্তিশালী পাইপলাইন রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতার লক্ষ্য পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে এসি এনার্জি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা এবং পরিবেশগত টেকসই চর্চার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানে বদ্ধপরিকর। এর পরিচালনার মূল প্রক্রিয়া ছাড়াও এসি এনার্জি উদ্ভাবনীশক্তির, যুগান্তকারী সব প্রযুক্তি এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে জ্বালানি দক্ষতা কাজে লাগাতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির একত্রীকরণে বিনিয়োগ করতে অত্যন্ত আগ্রহী। অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে জোর দেবার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস জোরদার করতেও উল্লিখিত অঞ্চল জুড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য এসি এনার্জি একটি পরিবেশবান্ধব ও আরো টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তুলতে চায়।
আরও পড়ুনঃ সর্বসেরা ১০ ভারতীয় সিনেমার তালিকা, আছে তিন বাংলা সিনেমাও
আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড (ভারত)
আদানি গ্রুপের অগ্রদূত সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই কোম্পানিটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের অন্যতম মশালধারী হিসেবে ভারতের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিপ্লবকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এই কোম্পানিটি ২০ দশমিক ৪ গিগাওয়াটের একটি শক্তিশালী নবায়নযোগ্য জ্বালানি পোর্টফোলিও তৈরি করতে পেরেছে। ভারতের ডিকার্বনাইজেশন লক্ষ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আদানি গ্রিন এনার্জি ২০৩০ সাল নাগাদ ৪৫ গিগাওয়াট এর নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। ভারতের ‘এনার্জি ল্যান্ডস্কেপ’ এ সৌর ও বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্জিত সাফল্যের প্রমাণ হচ্ছে এই বিশাল সক্ষমতা। আধুনিক সব যন্ত্রপাতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, সর্বোচ্চ দক্ষতা নিশ্চিতকরণ এবং জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর নির্ভরযোগ্য অবস্থানের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আদানি গ্রিন এনার্জির একনিষ্ঠতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আশেপাশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন এবং তাদের জীবিকা ও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব রাখার মাধ্যমে পরিসংখ্যানগত সাফল্যের বাইরে গিয়েও এই কোম্পানিটি পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নিত্যনতুন সম্ভাবনা তৈরির মাধ্যমে আদানি গ্রিন এনার্জি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে যে কীভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও টেকসই উন্নয়ন পরিচালনার মধ্য দিয়ে ভারতকে একটি পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও জ্বালানি-নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ব্যাংচাক কর্পোরেশন (থাইল্যান্ড)
দেশের টেকসই উন্নয়নের যাত্রা এগিয়ে নিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক এই জ্বালানি কোম্পানিটি অন্যতম ভূমিকা রাখছে। পেট্রোলিয়াম সংশোধন, বাজারজাতকরণ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগ সাথে নিয়ে পাঁচ দশকেরও বেশি ঐতিহ্য নিয়ে থাকা ব্যাংচাক জ্বালানি খাতের বহুমুখীকরণে অন্যতম অবদানকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংচাকে সৌর, বায়ু এবং জৈব শক্তি উৎস থেকে উৎপন্ন ৭৬০ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতার একটি সমৃদ্ধ মজুদ রয়েছে। এ কোম্পানির লক্ষ্য হচ্ছে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রজন্ম নির্মাণ ছাড়াও সক্রিয়ভাবে গবেষণা ও উন্নয়নে যুক্ত হওয়া এবং জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা।
টাটা পাওয়ার ইনিউয়েবল এনার্জি (ভারত)
উল্লেখযোগ্য সব অর্জন নিয়ে ভারতের টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পথচলায় এটি এক অদম্য শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিষয়ক সমাধানে টাটা পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিপিআরইএল ২ দশমিক ৬ গিগাওয়াটের উল্লেখযোগ্য সক্ষমতার লক্ষ্য পূরণ করেছে। এই বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিওতে রয়েছে সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য হাইব্রিড জ্বালানি প্রকল্প এবং এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বহুমুখী জ্বালানি কোম্পানির স্থান দখল করে নিয়েছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে সঙ্গে নিয়ে এই কোম্পানিটি ক্রমশ যুগান্তকারী সব উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একটি দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি প্রজন্মের নির্মাণ নিশ্চিত করছে। এর প্রচেষ্টাগুলো শুধু এই প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিসংখ্যানগত সাফল্যই বয়ে আনে না শুধু, বরং সেইসাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ, সামাজিক প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। ইতিবাচক প্রভাব তৈরির একটি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এই কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক বাজারেও যোগ দিয়েছে। এছাড়াও এটি এর সবুজ তথা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোর মধ্য দিয়ে একাগ্রতার সাথে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছে, যার ফলে ভারত ও ভারতের বাইরেও একটি আরো সবুজ ও আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকছে।
সিন্ডিকেটাম রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি (সিঙ্গাপুর)
বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি উল্লেখযোগ্য অংশীদার হিসেবে এটি টেকসই সমাধানের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে এর উপস্থিতি ধরে রাখার মধ্য দিয়ে এই কোম্পানিটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎসের দিকে ক্রমশ রূপান্তরে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। সিন্ডিকেটামের পোর্টফোলিওতে সৌর, বায়ু, জৈব গ্যাস ও বায়োমাস উদ্যোগসহ আরো অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের একটি বিস্তৃত পরিসীমা রয়েছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি জ্বালানি দক্ষতা ও পরিবেশগত সুবিধাগুলোর সর্বোচ্চটাই বের করে আনতে চেষ্টা করে। সিন্ডিকেটাম মূলত এর প্রকল্পগুলোর মধ্যে সামাজিক দায়িত্বশীলতা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে জোর দেয়। ধারাবাহিকভাবে পরিচ্ছন্ন, নির্ভরযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালান সমাধান প্রদানের মাধ্যমে সিন্ডিকেটাম আরো সবুজ ও আরো টেকসই ভবিষ্যতের দিকে দিনবদলের যাত্রায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখে।
সূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ আগামী বছর হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু