আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নবজাতকের পেটব্যথা । কান্না শিশুর সহজাত প্রবৃত্তি। একটা বয়স পর্যন্ত শিশু কথা বলতে পারে না। তার সব প্রয়োজন, অনুভূতি কান্নার মাধ্যমেই প্রকাশ করে। কিন্তু এই কান্না যখন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি হয়ে যায়, তখন মা-বাবা চিন্তিত হন। নবজাতকদের অস্বাভাবিক কান্নার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। প্রথম তিন-চার মাস বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটির অন্যতম কারণ হলো ‘ইনফ্যান্টাইল কলিক’।
দিনে তিন ঘণ্টা, সপ্তাহে তিন দিনের বেশি আর তিন সপ্তাহ ধরে যদি কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই একটানা বা একটু পরপর অনেকক্ষণ শিশু কাঁদতে থাকে, তাহলে অন্যান্য দিক দিয়ে বাচ্চাকে সুস্থ-স্বাভাবিক বলে মনে হলেও শিশুটি কলিক বা ইনফ্যান্টাইল কলিকে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহ থেকে চার মাস পর্যন্ত এটি হতে পারে। প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন কলিকে আক্রান্ত হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর কলিক হচ্ছে
❖ বাচ্চা প্রতিদিন একই সময়ে কাঁদতে থাকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কান্নার সময়টা সন্ধ্যা বা রাত।
❖ বাচ্চা হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
❖ অনেক সময়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়।
❖ কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চা পা পেটের কাছে তুলে নিয়ে আসে।
❖ অনেকের হাত মুঠো হয়ে যায়।
❖ বাচ্চা শক্ত হয়ে ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে।
❖ অতিরিক্ত কান্নার জন্য বাচ্চার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
❖ অনেক ক্ষেত্রে বমি বা ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
❖ কখনো কখনো বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ প্রি-ম্যাচিউর শিশু জন্ম থেকেই দুর্বল
কলিকের কারণ
কলিকের একদম সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, নিম্নলিখিত কারণে কলিক হতে পারে—
✪ শিশুর অপরিণত পরিপাকতন্ত্রের মাংসপেশিতে অপরিণত সংকোচন-প্রসারণের কারণে কলিক হতে পারে।
✪ অপরিণত পরিপাকতন্ত্র হওয়ায় খাবার সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করে, এই গ্যাস থেকেও কলিকের ব্যথা হতে পারে।
✪ ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়ালে দুধের সঙ্গে বাতাসও পাকস্থলীতে ঢুকে যায়, এই বাতাসও পেটব্যথার কারণ হতে পারে।
✪ দুধে অ্যালার্জির কারণেও কোনো কোনো বাচ্চার পেটে ব্যথা হতে পারে।
✪ আলো বা শব্দের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতাও অনেক সময় কলিকে প্রভাব ফেলতে পারে।
✪ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের কোনো খাদ্য বা ওষুধেও বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
কলিকের চিকিৎসা
❁ খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা ক্ষুধার্ত কি না, তবে বাচ্চাকে অতিরিক্ত খাওয়ানো উচিত হবে না।
❁ বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় দেখতে হবে মাথাটা যেন একটু উঁচুতে থাকে।
❁ খাওয়ানোর পর বাচ্চার পেটের গ্যাস বারপিং করার মাধ্যমে বের করে দিতে হবে।
❁ বাচ্চাকে দোল দেওয়া যেতে পারে, পেট ও পিঠে আলতো মালিশ করে দেওয়া যেতে পারে।
❁ মায়ের স্পর্শ বাচ্চাদের শরীর ও মন শান্ত করে এবং তাদের স্বস্তি দেয়।
❁ বাচ্চার সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলা বা মৃদু গান শোনানোর মাধ্যমে বাচ্চাকে শান্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
❖ কলিক যদি অনেক দিন ধরে চলতে থাকে।
❖ কিছুতেই যদি বাচ্চাকে শান্ত করা না যায়।
❖ বাচ্চার খাওয়ার পরিমাণ যদি কমে যায়।
❖ কান্নার সঙ্গে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বর থাকে।
❖ বাচ্চার আচরণ যদি হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়।
❖ বাচ্চার যদি শ্বাসকষ্ট থাকে।
❖ বাচ্চার পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায়।
কলিক কোনো মারাত্মক অসুখ নয়। বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কলিকের উপসর্গও ৪-৬ মাসের মধ্যে চলে যায়।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আরও পড়ুনঃ শিশুর হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ প্রতিরোধে যা করবেন