আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নফল রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত । আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় মাধ্যম রোজা। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। রোজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি কেবল আল্লাহর জন্যই রাখা হয়। অন্যান্য আমল বান্দার নিজের। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বনি আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যে, সাওম ব্যতীত। তা কেবল আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর সাওম পালনকারীদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের ঘ্রাণের চেয়ে অধিক সুগন্ধযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯২৭)
রাসুল (স.) বলেন, রোজা এবং কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও সব ধরনের কামবাসনা থেকে বিরত রেখেছি। তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ (জামিউস সগির: ৫১৮৫) এছাড়াও রোজাকে গুনাহের কাফফারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়, তা সালাত, সাওম ও সদকার মাধ্যমে দূর হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫২৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে নফল রোজা রেখেছেন এবং উম্মতকেও উৎসাহ প্রদান করেছেন। রমজান মাস ও ঈদের দিনগুলো ছাড়া যেকোনো দিন নফল রোজা রাখা যায়। এখানে বিশেষ কিছু নফল রোজার পরিচয় ও এর ফজিলত হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো—
সাপ্তাহিক নফল রোজা
প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা নবীজির গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। এই দুই দিন রোজা রাখার প্রতি নবীজি গুরুত্ব দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুল (স.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতেন। (তিরমিজি: ৭৪৫)
আরও পড়ুনঃ বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি
মাসে তিন রোজা (আইয়ামে বিজ)
চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বিজ বলা হয়। রাসুল (স.) আইয়ামে বিজের রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদের রোজাগুলো রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই তিন রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ধৈর্যের মাস হলো রমজান, আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম (রোজা) পালন করা সারাবছর সাওম (রোজা) পালন করার সমতুল্য।’ (নাসায়ি: ২৪০৮)
মুহররম ও আশুরার রোজা
বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হচ্ছে, আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)
আশুরার রোজা প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘কোরাইশের লোকেরা জাহেলি যুগেও আশুরার রোজা রাখত। রাসুল (স.)ও রাখতেন। এরপর যখন হিজরত করে মদিনায় এলেন, তখন নিজেও এই রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রাখার আদেশ দিলেন। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন বলেন, ‘যার ইচ্ছা সে তা (আশুরার রোজা) রাখতে পারে, যার ইচ্ছা না-ও রাখতে পারে।’ (সহিহ বুখারি: ২০০২)
শাবান মাসের রোজা
শাবান মাসে রোজা রাখার অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘শাবান মাস এলেই রাসুলুল্লাহ (সা.) লাগাতার রোজা রাখতেন। ফলে আমরা বলতাম, তিনি আর রোজা বাদ দেবেন না। আবার কখনো রোজাহীনও থাকতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তেমনি দেখিনি শাবানের চেয়ে বেশি অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে। (সহিহ বুখারি: ১৯৬৯)
আরও পড়ুনঃ সত্য গোপনকারীদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
শাওয়ালের ছয় রোজা
রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা নবীজি (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। এই মর্মে বিখ্যাত সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল। এটি তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৪৮)
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা
জিলহজ মাসের ১০ দিনের আমল আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। এটি হজের মাস। একবার নবীজি (স.) সাহাবায়ে কেরামকে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, শোনো, এই ১০ দিনের সমতুল্য বছরের আর কোনো দিন নেই! এ কথা শুনে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি এর সমকক্ষ হবে না? রাসুল (স.) জবাব দিলেন, না, তা-ও হবে না। তবে যে ব্যক্তি জিহাদে গেছে, এ কাজে অর্থ ব্যয় করেছে, জীবনও বিলিয়ে দিয়েছে; আর ফিরে আসতে পারেনি, অবশ্য তার পুরস্কার ভিন্ন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৯৬৯)
বিশেষভাবে আরাফার দিন বা জিলহজ মাসের ৯ তারিখ রোজা পালনকারীদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে তা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের পাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
রোজা রাখার অভ্যাস এবং এতে স্থির থাকা মুমিনের এক মহান গুণ। রাসুল (স.) কোনো এক সাহাবিকে বললেন, ‘তোমাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কেননা, এর কোনো বিচার নেই।’ (সুনানে নাসায়ি: ২২২২) রোজা দুটি জিনিসকে শামিল করে- মহান আল্লাহর আনুগত্য ও অবাধ্যতা ত্যাগের ধৈর্য। এজন্য রাসুল (স.) বলেন, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক।’ (তিরমিজি: ৩৫১৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতের তাওফিক দান করুন। নফল রোজার মাধ্যমে বিশেষ ফজিলত ও আল্লাহর নৈকট্যলাভের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরও পড়ুনঃ পরিবারের জন্য খরচ করা দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য