আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও উন্নয়নের রূপকার পল্লীবন্ধু এরশাদ । দেশের মানুষ যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই আমার উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পাবে। এ কথাটি যিনি বলেছিলেন, তিনি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দক্ষ ও সফল রাষ্ট্রনায়কের সম্মানে অভিহিত এই ব্যক্তিত্বকে বলা হয় নতুন বাংলাদেশের স্থপতি ও উন্নয়নের রূপকার। ক্ষমতাসীন হয়েই তিনি বললেন, ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
বাংলার মানুষ তাই তাঁকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে উপাধী দিয়েছে পল্লীবন্ধু। একজন দক্ষ প্রশাসক ও কবির স্বপ্ন একসঙ্গে একাকার হয়ে ছিলো বলেই তিনি হতে পেরেছেন গতিশীল, আধুনিক ও মানবতাবাদী মনের মানুষ। তিনি নিজের প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছেন নতুন বাংলাদেশ। তাই তিনি বৃটিশ আমলের ঘুনেধরা প্রশাসন ভেঙ্গে দিয়ে সৃষ্টি করেন উপজেলা পদ্ধতি-জনগণের নির্বাচিত প্রশাসন ব্যবস্থা।
যুগ-যুগান্তরের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা তিনি পরিবর্তন করেন। প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। বাস্তবায়িত করেন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, ভূমি সংস্কার, টেলি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের হাজার হাজার প্রকল্প। এরমধ্যে কৃষি ও শিল্প উন্নয়নমুলক প্রকল্পের সংখ্যাই বেশী। এছাড়া সড়ক উন্নয়নসহ যোগাযোগের আধুনিকায়ন তো আছেই।
রাষ্ট্রনায়ক এরশাদ, উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা এরশাদ, নতুন বাংলাদেশের স্বাপ্নিক এরশাদ, মানব দরদী এরশাদ, শিক্ষা বিস্তারে এরশাদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে এরশাদ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এরশাদ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে এরশাদ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি কর্মসূচীতে এরশাদ, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যানে এরশাদ, দুঃস্থ মানুষের প্রেমিক এরশাদ, ক্রীড়াঙ্গনে এরশাদ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এরশাদ। এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির শাসনামলের উন্নয়ন ও সুশাসন সম্পর্কে মহাকাব্য লিখেও শেষ করা যাবে না।
ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই রাষ্ট্রনায়ক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুই দফায় সাড়ে ছয় বছর কারাগারে আটক ছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নে ছিলে দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন। জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্ঠে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তেন- তবুও ভাবতেন দেশের কথা। দেশ যখন বিপন্ন, মানুষ যখন মানবেতরের চরম সীমায় পল্লীবন্ধু এরশাদ তখন জেলের জিঞ্জির ছিন্ন করে বেড়িয়ে এলেন।
তিনি দেখলেন যে দেশকে তিনি সযত্নে সাজিয়েছিলেন সে দেশ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। মানুষের সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকছেনা। কারামুক্ত পল্লীবন্ধু এরশাদ আর স্থির থাকতে পারলেন না। শুরু হলো আবার তাঁর যাত্রা। এ যাত্রা ভিন্ন আঙ্গিকে। হিংসা-হানাহানির রাজনীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করলেন পল্লীবন্ধু।
আবার এদেশে উন্নয়ন সমৃদ্ধির ধারা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের নিরাপত্তা-সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার সংগ্রামে ব্রতি হলেন এদেশের ইতিহাসের সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু এরশাদ। তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গেছেন আমৃত্য এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানোর লক্ষ্যে। পল্লীবন্ধু এরশাদ কথার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন-তিনি কাজের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন।
তাঁর অতীতের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালেই এ কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এদেশের এমন কোন গ্রাম নেই -এমন কোন শহর নেই-যেখানে পল্লীবন্ধু এরশাদের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখনো এই বাংলাদেশের যেদিকেই দৃষ্টি যাবে সেদিকেই দেখতে পাওয়া যাবে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়নের কর্মসূচী। এই মহানায়কের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এখানে তুলে ধরা হলো।
৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে-পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
✪ এরশাদ প্রবর্তিত ৪৬০টি উপজেলার ফলশ্রুতিতে প্রশাসনই শুধু গ্রামের মানুষের কাছে যায়নি- উন্নয়নের জিয়নকাঠি চলে গিয়েছিলো গ্রামে। জনগণের দোড় গোড়ায় বিচার ব্যবস্থা পৌঁছে গেছে।
✪ এরশাদ গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, দালান-কোঠা নির্মানের ফলে ৬৮ হাজার গ্রাম লাভ করেছে শহরের আমেজ।
✪ এরশাদের পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচী গ্রামকে করেছে বিদ্যুতায়িত।
✪ এরশাদ ২১টি জেলা ভেঙ্গে ৬৪টি জেলা করেছেন। বৃটিশ আমলের সেই মহকুমাগুলো এখন পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করে প্রশাসনে গণপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
✪ তিনি ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করে ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদকাল ৩ বছর থেকে ৫ বছরে উন্নিত করেছেন।
✪ গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম তার সময় বিস্তৃতি লাভ করে। সারা দেশে উপজেলা ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয় তার সময়ে। প্রত্যেক উপজেলায় ১৭ জন অফিসার নিয়োগ ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ তিনি করেন।
✪ বর্তমান রাজধানী ঢাকার নাম ছিল ইংরেজি বানানে ‘Dacca’। এই ‘Dacca’ (ডাক্কা) থেকে Dhaka (ঢাকা) নামকরণ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার সরকারের সময় ১৯৮২ সালের ৫ অক্টোবর এই পরিবর্তন আনা হয়।
শিক্ষা ব্যবস্থায় পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান
✪ নিরক্ষরতা দূরীকরনের লক্ষ্যে এরশাদ বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করেছেন।
✪ এরশাদ গ্রামের মেয়েদের জন্য অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। তার শাসনামলের প্রথম দুই বছরে দেশে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়।
✪ তিনি সারা দেশে শতাধিক কলেজ এবং দেড় শতাধিক স্কুল সরকারিকরণ করেছেন।
✪ তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং কৃষ্টিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
✪ এরশাদ দিনাজপুরে হাজী দানেশের নামে একটি কৃষি কলেজ করেছেন।
✪ এরশাদ বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য সরকারি অনুদান ৩০ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে ৭০ ভাগ করেছেন।
✪ তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন।
✪ এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন এবং ছাত্র-শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি দান করেছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ এরশাদ শাসন আমলে অসংখ্য রাস্তা, পুল, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন, যা এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করেছেন এবং ১,৫০০টি ছোট বড় সেতু নির্মাণ করেছেন।
✪ এরশাদ শাসন আমলে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি এর মাধ্যমে দেশের নদীপথ ও স্টিমার সার্ভিসের আধুনিকায়ন করেছেন এরশাদ। সারা দেশের গ্রামগঞ্জে পাকা রাস্তা করার জন্য এলজিইডি নিজে সৃষ্টি করেছেন।
✪ তাঁর শাসন আমলে মহানন্দা, ঘাঘট আর নাগর নদীতে সেতু নির্মাণ করেছেন। তিনি নির্মাণ করেছেন মেঘনা সেতু, কর্ণফুলী সেতু, বুড়িগঙ্গা সেতু, রামপুরা সেতু, টঙ্গী সেতু, টেকেরহাট সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, কামার খালী সেতু, বান্দরবনে সাংগু সেতু, পঞ্চগড় সেতু, সিলেটে শাহজালাল-লামা কাজী সেতু, কাঞ্চন, হালদা, গোমতি, রুপসা, ২য় বুড়িগঙ্গা, টঙ্গি ব্রিজসহ মোট ৪৩টি বড় বড় ব্রিজ এবং উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে উন্নতমানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হয় এবং যমুনা বহুমূখী সেতু বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন।
✪ এরশাদ রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী করে যানজট মুক্ত রাখার জন্য করেছেন রোকেয়া সরণী, প্রগতি সরণী, মুক্তি সরণী, বিজয় সরণী, পান্থপথ, জনপথ, নর্থ সাউথ রোড, সোনারগাঁ রোড, লিংক রোডসহ অসংখ্য রাস্তা। রাজধানিতে একমাত্র ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩টি বড় বাস স্ট্যান্ড তৈরী করেছেন। যেমন- সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী। ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন তিনি। ঢাকায় আধুনিক রোড ও ট্র্যাফিক সিগন্যাল তিনি প্রথম স্থাপন করেন।
✪ তাঁর শাসন আমলে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ ফুট প্রশস্ত নগরবাড়ী-রংপুর এবং দিনাজপুর-পঞ্চগড় সড়ক নির্মাণ করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ প্রথম দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর কাজ শুরুর পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
✪ এরশাদ আমলে ৪টি ডিসি-১০ বিমান ক্রয় করে অত্যন্ত নাজুক অবস্থা থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমানকে সম্প্রসারিত করেছেন। অভ্যন্তরীন বিমান ব্যবস্থায় ২টি এটিপি ক্রয় এরশাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। রাজশাহী বিমানবন্দর তার হাতে পুনরায় আধুনিকায়ন হয়। সিলেট ও চিটাগং বিমানবন্দরকে বর্তমান রূপ তিনি দিয়েছেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি টার্মিনাল তার হাতে তৈরি।
✪ এরশাদ আন্তঃনগর ট্রেন ব্যবস্থা চালু করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছন। রেলওয়েকে দুইটি বিভাগে তিনি ভাগ করেছেন। তার সময়ে ৩০টি ইঞ্জিন, ১০৬টি যাত্রী বগি ও এক হাজার ২৫৫টি মালবগি রেলওয়েতে যোগ হয়েছিল। সারা দেশে ২৭৭টি রেলস্টেশন আধুনিকায়ন করা হয় তার আমলে।
✪ এরশাদ ডিজিটাল সিষ্টেমসহ দেশে বিদেশে সরাসরি টেলিযোগাযোগে আধুনিকায়নের সূচনা করেছেন।
✪ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিলো মাত্র ৬৫০ মেগাওয়াট। তিনি মতা ছেড়ে দেয়ার আগে সেই বিদ্যুতের উৎপাদ ২২০০ মেগাওয়াটে উন্নিতি হয়।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এরশাদের অবদান
✪ এরশাদ তাঁর শাসন আমলে যুগান্তকারী ঔষধ নীতি প্রবর্তন করে সারা দেশের সচেতন মানুষের মোবারকবাদ পেয়েছেন।
✪ এরশাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধের কার্যকর পদক্ষেপ এবং অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কার “জাতিসংঘ জনসংখ্যা পুরষ্কার” লাভ করেন।
✪ তিনি তাঁর শাসন আমলে শেরেবাংলা নগরে হার্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছেন। বারডেম হাসপাতাল তার সময় প্রতিষ্ঠা পায়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৩,৮৭০টিতে উন্নিত করেন। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের সময় তা ছিলো ১৬,১৭১টি।
✪ তিনি শ্রমিক শ্রেনীর মানুষের জন্য তৈরী করেছেন শ্রমজীবী হাসপাতাল।
খাদ্য উৎপাদনে পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ এরশাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সময় খাদ্য উৎপাদনের পরিমান ছিলো ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টন আর ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে খাদ্য উৎপাদন ছিলো ১ কোটি ৪২ লক্ষ টন।
✪ এরশাদ খাদ্য উৎপাদনে যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন এতে ১৯৯২ সনে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতো।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ আমলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত সারের পরিমান ছিলো ২২ লক্ষ ৬২ হাজার টন। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে এর পরিমান ছিলো মাত্র ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টন।
ধর্ম বিষয়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান
✪ ততকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষনা করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন তিনি।
✪ এরশাদ রেডিও-টিভিতে আজান প্রচারের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের নব-রূপায়ন এবং সংষ্কার করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে ঘাট তৈরী করেছেন। পানি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ বিশ্রাম করে জন্য সেড তৈরী করেছেন।
✪ এরশাদ রাজধানীতে নতুন মসজিদ করেছেন ৬টি। গুলশানে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) মসজিদ, গোলাপশাহ মসজিদ, নিউ মার্কেট মসজিদ, সাভার মসজিদ, পিডব্লিউডি মসজিদ এবং বেইলী রোড অফিসার্স কলোনী মসজিদ। এছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংষ্কার করেছেন লালবাগ শাহী মসজিদ, বেগমবাজার মসজিদ, তারা মসজিদ, সাত গম্বুজ মসজিদ, ডিআইটি মসজিদ সহ সারা দেশের অসংখ্য মসজিদ।
✪ এরশাদ হাইকোর্টের সামনে পুকুর ভরাট করে তৈরী করেছেন প্রথম জাতীয় ঈদগাহ।
✪ এরশাদ সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা এবং বৌদ্ধ মঠের পানি ও বিদ্যুৎ বিল স্থায়ীভাবে মওকুফ করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ জন্মাষ্টমীর দিন জাতীয় ছুটি ঘোষনা করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ গঠন করেছেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্ট এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্ট।
সরকারি কর্মচারী ও শিল্প শ্রমিকদের জন্য এরশাদের অবদান
✪ এরশাদ সরকারি কর্মচারী ও শিল্প শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দ্বিগুন করেছেন। এমনকি তিনি সর্বনিম্ন বেতনও দ্বিগুন করেছেন।
✪ এরশাদ শাসন আমলে প্রতি ঈদে এক মাসের বেতনের সমপরিমান বোনাস প্রবর্তন করেছেন।
✪ এরশাদ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য মঞ্জুরী কমিশন এবং কর্মচারীদের জন্য বেতন কমিশন গঠন করেছেন।
✪ এরশাদ বেতনের শতকরা ৮০ ভাগ পেনশন নির্ধারণ করেছেন। যার পরিমান পূর্বে ছিলো সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা।
✪ এরশাদ শ্রমিকদের জন্য কালাকানুন বলে খ্যাত ’৬৯-এর শিল্প-সম্পর্ক অধ্যাদেশ বাতিল করেছেন এবং যুগোপযোগী শ্রম আইন প্রবর্তন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্ব যখন নিজস্ব স্বাধীন মাটিতে বিপন্ন তখন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অভয় বাণী নিয়ে তাদের অভিভাবকরূপে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেন “মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান”।
✪ রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লাখো শহীদের স্মৃতি সংবলিত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজসমূহ সমাপ্ত এবং তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।
✪ তিনি মুক্তিযুদ্ধের মরণোত্তর সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের প্রত্যেক পরিবারবর্গের জন্য একটি করে সুসজ্জিত পাকা আবাসিক বাড়ি তৈরি করে দেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের আমলে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের নামে বিশেষ স্মরণীয় ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়।
✪ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালিত ২২টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চিরস্থায়ী মালিকানা বিনামূল্যে কল্যাণ ট্রাস্টকে প্রদান করা হয়।
✪ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট-এর প্রধান কার্যালয়ের জন্য নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় একটি বহুতল ভবন কল্যাণ ট্রাস্টকে বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়, যার নামকরণ করা হয়েছে “স্বাধীনতা ভবন”।
✪ তিনি শহীদ সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের নিকট যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্থায়ীভাবে ব্যবহৃত দু’টি পাকা ভবনের মালিকানা স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করে দেন।
✪ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও আবাসগৃহের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড কার্যকরভাবে পুনর্গঠন করা হয় এরশাদের আমলেই।
✪ তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করমুক্ত ঘোষণা করেন।
✪ সারাদেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে সংগঠিত করে তাদের অসুবিধাসমূহ দূরীকরণসহ পুনর্বাসনের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিজস্ব শাখা ও কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
✪ তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৬৪টি জেলা হেডকোয়ার্টারে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্য মাত্র ১০১ টাকা টোকেন মূল্যে ৫ কাঠা করে জমি বরাদ্দ করেন।
✪ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিটি জেলা হেডকোয়ার্টারের কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তি হিসেবে এক কোটি টাকা প্রদান করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ সরকারের আমলে তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পূর্বের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয় এবং সরকারি তহবিল থেকেও বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
✪ রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহনের আগের সরকারসমূহের আমলে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত ও আটককৃত প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধার শাস্তি হ্রাস ও সম্পূর্ণ মওকুফ করে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মধ্যে অনেক ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তেরও শাস্তি মওকুফ করা হয়।
✪ প্রকৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি বাস, ট্রেন ও বিমানে বিনামূল্যে ভ্রমণের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়।
✪ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঐতিহাসিক অবদানের জন্য তাদের স্বীকৃত ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এইচ এম এরশাদই মুক্তিযোদ্ধাদের একক ও দলবদ্ধভাবে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য সহস্রাধিক ছোটবড় প্রকল্প করেছিলেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশাসনিক ও সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলা পরিষদে একজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনয়ন দেয়া হয় এবং প্রতিটি ইউনিয়নে, পৌরসভাসহ অন্যান্য পরিষদে ও স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন করে প্রতিনিধি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে প্রতিবছর পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে ৩ জন করে মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি হজ্ব ডেলিগেশন টিমে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
✪ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যানকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে মন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করার বিধান চালু করা হয় পল্লীবন্ধু এরশাদের আমলেই।
✪ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার উৎস ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অমর শহীদদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিসৌধটিকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সুসজ্জিতকরণসহ সমুদয় কাজ সম্পূর্ণ করেন । ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রত্যেককে ১টি করে পাকাবাড়ী নির্মান করে দেন পল্লীবন্ধু এইচ এম এরশাদ।
✪ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সকলের মনে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের পূর্বে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রদর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের গান প্রচারের ব্যবস্থা করেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
✪ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সকলকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুরের আম্রকাননে প্রতিষ্ঠিত মুজিবনগরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনিই প্রথম ভ্রমণ করেন ও সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়।
✪ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্মরণে ঢাকায় ওসমানী উদ্যান, ওসমানী মিউজিয়াম, আন্তর্জাতিক মানের ওসমানী স্মৃতি মিলানায়তন তৈরি ও সিলেট বিমানবন্দরকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয় এবং সিলেটে জেঃ ওসমানীর বাড়িটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়।
✪ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্মরণে বিশেষ ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়।
✪ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অমর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে সহস্রাধিক রাস্তাঘাট ও ভবনের নামকরণ করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ঢাকার ইস্কাটনে প্রয়োজনীয় জায়গাসহ একটি দ্বিতল ভবন স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করেন। পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের বহুতল ভবনের জন্য কাকরাইলের নিকট একটি জমি টোকেন মূল্যে বরাদ্দ করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে প্রশিণপ্রাপ্ত সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি উদ্যোগে বিদেশে প্রেরণ করা হয়।
✪ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেকার মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান ও চাকরির ক্ষেত্রে ৩০% কোটা যথাযথ পালন করা কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
✪ এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ বছর থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের আমলে সহস্রাধিক ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি খাস জমি, পুকুর, জলাশয় ও পতিত জমি বরাদ্দ করা হয়।
✪ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর বিশেষ ব্যবস্থায় সরকার নির্ধারিত স্বপ্ল মূল্যে দীর্ঘ মেয়াদে ২৫ কিস্তিতে বিক্রি করা হয়।
✪ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্রীড়াচক্রের স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী উদ্যানে নিজস্ব ভবন ও জমি দান করা হয়।
কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনে পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ এরশাদ দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন বলেই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছিলো। অভাবনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রাপ্তিও এরশাদের কূটনৈতিক সফলতার ফসল।
✪ এরশাদ ইসলামিক বিশ্বে বাংলাদেশকে অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিগণিত করিয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রসারিত করেছেন।
✪ বিরোধী দলের প্রচণ্ড বাধার মধ্যেও পল্লীবন্ধু এরশাদ মধ্যপ্রাচ্য সংকটে সৈন্য প্রেরণে রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে শুধু উজ্জ্বলই করেনি, ঋণ মওকুফের সুবিধা দিয়েছে।
✪ এরশাদ স্বল্পোন্নত দেশসমুহের নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে প্যারিস সম্মেলনে বাংলাদেশের ঋণ মওকুফের ঘোষনা অর্জন করিয়েছেন।
✪ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন ১৯৮৫ সালে ঢাকা অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং তিনিই সার্কের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন।
✪ আমেরিকান দূতাবাসকে জায়গা দিয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে প্লট বরাদ্দের পদ্ধতি চালু করেন এরশাদ।
✪ এরশাদের আমন্ত্রণে রানি এলিজাবেথ ও চীনের প্রেসিডেন্ট প্রথম এ দেশে আসেন। তার শাসনকালে বিশ্বের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টরা এ দেশে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তিনি আমেরিকার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ভারতের মতো দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতিসংঘের শান্তিমিশনে প্রথম সেনা প্রেরণ করেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৮২৫ মিলিয়ন ডলার। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২২১ মিলয়ন ডলার।
✪ এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখন বিদেশে চাকুরীরতদের আয় ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের সময় তা ছিল মাত্র ৬১৯ কোটি টাকা।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সময় রপ্তানী আয় ছিল ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। অথচ মতা গ্রহণের সময় তা ছিল মাত্র ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।
✪ এরশাদ শাসন আমলে চিটাগং বন্দরে প্রথম নয় মিটার ড্রাফটের জাহাজের জন্য জেটি ও পাঁচটি নতুন শেড বানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বাণিজ্য জাহাজগুলোতে দেশের পতাকা প্রথম উড়িয়েছিলেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ বেসরকারী খাতে ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
✪ এরশাদই প্রথম এদেশে প্রাইভেট ব্যাংক এবং ইন্সিওরেন্স কোম্পানীর অনুমতি দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ অসংখ্য শিল্প কারখানা স্থাপন করেছেন।
অবহেলিত অসহায় পথকলিদের জন্য রাষ্ট্রপতি এরশাদ
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ অবহেলিত অসহায় শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন পথকলি ট্রাষ্ট্র। যা ছিল তাঁর মানবিক গুণাবলীর উল্লেখযোগ্য বহিঃপ্রকাশ। ট্রাষ্ট্রের অধীনে বিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষা, চিকিৎসা এবং আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা ছিল, যা বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ এতিমদের প্রতি অগাধ ভালবাসা থেকে এতিমখানার উন্নয়ন এবং শিশুপল্লী প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কৃষি, কৃষক এবং ছিন্নমূল মানুষের জন্য পল্লীবন্ধু এরশাদ অবদান
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ কৃষক এবং প্রান্তিক চাষীদের ভিটেমাটি নিলাম না করার আইন করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ কৃষকদের সুবিধার জন্য করেছেন ঋণ সালিসি বোর্ড।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন। যার পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি টাকা।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ ভূমিহীন কৃষক ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য তৈরী করেছেন গুচ্ছগ্রাম। যার কোন বিকল্প নেই।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ কৃষিতে বিপ্লবী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কৃষকদের জন্য আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প, যথা- বৃহত্তর রাজশাহীতে ১৯৮৫ সালে ১৪টি উপজেলা নিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র সমুন্নিত উন্নয়ন প্রকল্প, টাংগাইল প্রকল্প, পাবনা সেচ প্রকল্প, চালু করে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
✪ পল্লীবন্ধু প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে তিনি দুই একর পর্যন্ত খাস জমি বিতরণ করেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে ভূমি সংস্কার। তিনি ব্যাপক ভূমি সংস্কারনীতি প্রবর্তন করেছেন এবং তার বাস্তবায়নও করেছেন। পল্লীবন্ধু এরশাদ ভূমি সংস্কারের আওতায় পরিবার প্রতি জমির সর্বোচ্চ সিলিং ৬০ বিঘা নির্ধারন করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদই প্রথম এদেশের বর্গাচাষীদের জন্য তে-ভাগা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ জাল যার জলা তার, নীতি প্রবর্তন করেছেন এবং প্রকৃত জেলেদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ আশির দশকে কৃষক-শ্রমিক ও দিন মজুরের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি হিসেবে মাথাপিছু সাড়ে তিন কেজি চাল বা তার সমপরিমান মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন।
ক্রীড়াঙ্গণে পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ নির্মাণ করেছেন মিরপুর জাতীয় ষ্টেডিয়াম, আউটার ষ্টেডিয়াম, হকি ষ্টেডিয়াম, আর্মি ষ্টেডিয়াম, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, বাস্কেট বল কোর্ট। মিরপুর ইনডোর ষ্টেডিয়ামের কাজও তাঁর সময়ই শুরু হয়।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স স্ব-উদ্যোগে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় চাঁদা তুলে তৈরী করেছেন। দেশের একমাত্র আধুনিক জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স নির্মাণের একক কৃতিত্বের দাবীদার উন্নয়নের স্বপ্লদ্রষ্টা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ বিকেএসপি করেছেন লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় জাতীয় খেলোয়াড় তৈরীর লক্ষ্যে । বিকেএসপি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে চমৎকার সাফল্য ও দেখানো শুরু করেছিল-
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান
✪ এরশাদ জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর আয়োজন করেছেন।
✪ এরশাদ ধানমণ্ডিতে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নজরুল স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিকে নজরুল ইন্সটিটিউটে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি সেখানে একটি অডিটরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজও শুরু করেছিলেন।
✪ এরশাদ চিত্র শিল্পী এস.এম.সুলতানকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর আবাসিক শিল্পী ঘোষনা করে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করে চরম দারিদ্রের হাত থেকে এই গুণী শিল্পীকে রক্ষা করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ শাহবাগে সুবিশাল আধুনিক যাদুঘর তৈরী করেছেন এবং আহসান মঞ্জিলকে উদ্ধার করে যাদুঘরে রূপান্তরিত করেছেন। ঢাকায় এক ডজনেরও বেশি শিশু পার্ক নির্মাণ করেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ পহেলা বৈশাখের ছুটি ঘোষনা করে আমাদের সাংষ্কৃতিতে যুক্ত করেছেন একটি আনন্দঘন দিনের।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ সর্বস্তরে বাংলাভাষা ব্যবহারের আইন করেছেন।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ একজন কবি ও গীতিকার। তাঁর যেমন রয়েছে প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ, তেমনি রয়েছে “তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা অপার”- এর মতো কালোত্তীর্ণ কিছু দেশাত্মবোধক গান। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- কনক প্রদীপ জ্বালো, নবান্নে সুখের ঘ্রাণ, এক পৃথিবী আগামী কালের জন্য, যেখানে বর্ণমালা জ্বলে, কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো, এরশাদের কবিতা সমগ্র, ইতিহাসে মাটির চেনা চিত্র, নির্বাচিত কবিতা ও যুদ্ধ এবং অন্যান্য কবিতা।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ যে সফল ও দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের সাথে সাথে একজন বড় কবি মনের অধিকারীও ছিলেন তার প্রমাণ রয়েছে তাঁরই প্রবর্তিত কিছু প্রকল্পের নামকরণে। সেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ গুচ্ছগ্রাম, চন্দ্রিমা উদ্যান, পান্থপথ, জনপথ, বিজয় সরণী, প্রগতি সরণী, কলমিলতা মার্কেট, পথকলি, মুক্তিসরণী, শিশুপল্লী, ঠিকানা ইত্যাদি। ডাক্কাকে ঢাকা নামকরণ করেছেন এরশাদ।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় পল্লীবন্ধু এরশাদের গৃহীত কর্মসূচীঃ
✪ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে আঞ্চলিক ভিত্তিতে আর্ন্তজাতিক সহযোগিতায় বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নীতি গ্রহণ করা হয়। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী অভ্যন্তরীণ বন্যা নিরোধ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সূচনা করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের উদ্যোগে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। ঐ সময়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের আমন্ত্রনে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করে দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি অবলোকন করেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের সময় ঢাকা মহানগরী রা বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং নদী বরাবর বাঁধের পামে কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
✪ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সামগী প্রেরণের জন্য প্রতি উপজেলায় পল্লীবন্ধু এরশাদের সরকারের সময় হেলিপ্যাড নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩২৫ উপজেলায় হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদের সময়ে ভরাট নদী খননের সূচনা করা হয়। সম্ভাব্য স্থানে ড্রেজিং আরম্ভ করে ৩৩ টি নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হয়।
✪ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিশন গঠন করেন। এই পরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রাখার ব্যবস্থা করা হয।
✪ এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা একটা মানবিক সমস্যা হিসেবে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আর্কষন করা হয়। পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রচেষ্টা ও তৎপরতার ফলে পৃথিবীর শিল্পন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় “বাংলাদেশের বন্যাঃ আঞ্চলিক ও ভূমন্ডলীয় পরিবেশগত প্রেক্ষাপট” শীর্ষক আর্ন্তজাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারে বিদেশ থেতে আগত ৩৫জন বিজ্ঞানীসহ ১৮২জন বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন।
✪ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিগ্রস্থ কৃষক সমাজের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য কৃষকদের ঋণের সুদের বোঝা থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়। যার পরিমাণ ছিল ৬শ কোটি টাকা।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ সরকার আমলে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে শুধূমাত্র বন্যা ও বন্যা পরিস্থিতি সর্ম্পকে আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ সরকারের নির্মাণ নীতিতে সমস্ত নির্মাণ কাজে বন্যা সমস্যাকে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের আমলে বন্যার পরে রোপন করা যায় এমন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং বন্যায় টিকে থাকতে পারে এমন জাতের ধান উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
✪ এরশাদ সরকারের আমলে দুটো ভয়াবহ বন্যা এবং দুটি ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছাস হয়েছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু পল্লীবন্ধু এরশাদের আপ্রাণ ও নিরলস সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ফলে অতি অল্প সময়ে এসব অকল্পনীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম হন। এজন্য তিনি দেশে বিদেশে সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। এসব দুর্যোগকালে প্রতিবারই দেশে-বিদেশে মহা দুর্ভিক্ষের আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই পল্লীবন্ধু এরশাদ সেই আশংকাকে অমুলক প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন।
✪ ১৯৮৭ সালে নজীরবিহীন ভয়াবহ বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে কৃষি ঋণ গ্রহীতাদের উপর থেকে সকল প্রকার সার্টিফিকেট মামলা ও মাল ক্রোক প্রভৃতি স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
✪ ১৯৮৮ সালের মহা প্রলংয়করী বন্যায় ধ্বংসলীলা, চরম বিপর্যয় থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য এবং স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য বন্যাত্তোর কৃষি পূণর্বাসনের আওতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দসহ বীজ-ধান, গমের বীজ, রবি শষ্যের বীজ ও পশু খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
✪ ১৯৮৮ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থ, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘড়-বাড়ী নির্মাণ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য কৃষকদের সকল প্রকার ঋণ সহজলভ্য করার জন্য ঋণদান সংস্থা ও ব্যাংকসমূহকে জরুরী নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
✪ ঘুর্নিঝড়ে বিধ্বস্ত উড়িরচরের প্রতিটি পরিবারকে রেজিষ্ট্রিঃ দলিল করে খাস জমি বন্দোবস্ত এবং বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের সাহায্যে নির্মিত এক কক্ষ বিশিষ্ট্য পাকা বাড়ি দান করা হয়েছে।
✪ দুর্যোগ মোকাবিলায় মহাব্যবস্থাপক পল্লীবন্ধু এরশাদ ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বাংলাদেশের মানুষের দুর্জয় সাহসী ভূমিকা ও প্রতিরোধের কথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সমর্থ হন।
✪ দুর্যোগ প্রতিরোধ পরিষদের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সমবায়ে সাব কমিটি গঠন করে বন্যা প্রতিরোধ প্রশ্নে তাদের মূল্যবান পরামর্শ ও সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেছেন।
✪ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে কার্যকরভাবেই কাজে লাগিয়ে ছিলেন পল্লীবন্ধু এরশাদ।
✪ বন্যা সমস্যার স্থায়ী কার্যকর সমাধানের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল আঞ্চলিক সহযোগিতা। পল্লীবন্ধু এরশাদ সেই লক্ষ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার সন্ধানে সংশিষ্ট সব কটি দেশ যেমন- ভারত, নেপাল, গণচীন ও ভুটান সফর করেছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে মতবিনিময় করেছিলেন।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশর দুর্যোগ সাহায্য আইন-৮৮ পাশ করেছে। ঐ সময়ে ফরাসী সরকারও এগিয়ে এসেছে। ফরাসী ফার্ষ্ট লেডি বাংলাদেশ সফর করেছেন। পরবর্তীকালে ফরাসী প্রেসিডেন্ট মিতেঁরার উদ্যোগে একটি ইউরোপীয় পানি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর করে এবং তারা বন্যা প্রতিরোধে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
✪ খরাজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার জন্য দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও বৃহৎ জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পল্লীবন্ধু এরশাদ সরকারের আমলে অধিকতর বন্যাপ্রবণ নদীগুলোর দুই তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে বিজ্ঞান সম্মত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
✪ পল্লীবন্ধুর সরকারের সময় উপকুলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং উপকুলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা নতুন চরসমূহে বনাঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমেও সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ও লবনাক্ততা প্রতিরোধে দেয়াল সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো।
✪ এরশাদ সরকারের সময় ৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা সেচ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছিলো।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ ৪৫০০টি ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
বলে শেষ করা যাবে না, দেশের জন্য যা করেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদ
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করেছেন, যা সাদরে ব্যবহৃত হয়ে এরশাদের স্মৃতিকে চির অমলিন করে রেখেছে।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ করেছেন সেনাকুঞ্জ।
✪ এরশাদ নির্মাণ করেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন করতোয়া ।
✪ এরশাদ মাওলানা ভাসানীর কুড়ে ঘরের পাশে সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি তৈরী করে সেখানে কাঁচের শোকেসে মাওলানা ভাসানীর টুপি, ছড়িসহ ব্যবহার্য জিনিষপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ হাইকোর্টের বিচারপতিদের বয়স সীমা ৬০ থেকে ৬৫ বছরে উন্নিত করেছেন। তিনিই বিচাপরতিদের বাড়িভাড়া মাসিক পনেরো হাজার টাকা করেছেন। তিনি বিচারপতিদের যাতায়াতের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করেছেন। জেলা জজদের জন্য জেলা প্রশাসকের মতো বাসভবনের ব্যবস্থা করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদই বিরোধী দলের নেতার পদমর্যাদা প্রতিমন্ত্রী থেকে পুর্ণ মন্ত্রীতে উন্নিত করেছেন এবং বিরোধী দলের নেতাকে মিন্টো রোডের সরকারি বাড়ি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন।
✪ এরশাদ দেশে প্রথম মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদই করেছেন পারিবারিক আদালত।
✪ তিনি যৌতুক-বিরোধী আইন করেছেন।
✪ নারী নির্যাতন রোধে পল্লীবন্ধু এরশাদ কঠোর আইন করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ জাতীয় প্যারেড স্কোয়ার করেছেন।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ সোডিয়াম লাইট দিয়ে রাজধানীকে অন্ধকার নগরীর অপবাদ থেকে রক্ষা করে তিলোত্তমা মহানগরী করেছর।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কলমিলতা মার্কেট, গুলশান কাঁচাবাজার, খিলগাঁও মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেটসহ অনেকগুলো মার্কেট স্থাপন করেছেন।
✪ পল্লীবন্ধু এরশাদ হকারদের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পত্রিকা-স্টল নির্মাণ করেছেন।
✪ ঢাকায় গরুর গাড়ি দিয়ে ময়লা ফেলার পরিবর্তে ট্রাক প্রবর্তন করেন তিনি। ওয়ারীতে সুইপারদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তিনি।
✪ রাষ্ট্রপতি এরশাদ বহুতল বিশিষ্ট নগর ভবন নির্মাণ করেছেন।
✪ উত্তরা ও বারিধারা হাউজিং এর উন্নয়ন ও প্লট বরাদ্দ করেন তিনি।
✪ রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা তার হাতে নির্মিত। ফার্মগেট খামারবাড়ি নির্মিত হয় তার আমলে। গাজীপুরে ধান ও চাল গবেষণা কেন্দ্র হয় তার সময়ে।
✪ মুজিবনগর সৌধ, স্বাধীনতা সৌধ নির্মাণ, ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান আদলে ফিরে আসার সূচনা তার সময়ে। জাতীয় সংসদ ভবনের স্থাপত্য প্রকৌশলী লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন নেতার স্মৃতিসৌধ বানিয়েছেন।
✪ বর্তমানের পোশাকশিল্প তার সময় বিকশিত হয়। ঢাকায় প্রথম বেবি হোম তার অনুপ্রেরণায় তৈরি।
এরশাদের আমলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যঃ
✪ এরশাদের শাসনামলে দেশের সাধারণ মানুষ দু’বেলা দু’মুটো খেয়ে পরে সচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পেরেছে। কারণ তখন মানুষের হাতে অর্থের সংস্থান ছিলো। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য সাধারণ মানুষের কাজের সুযোগ ছিলো। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ছিলো। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অতি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতার মধ্যে ছিলো।
এরশাদের আমলে নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের মূল্য উল্লেখ করা হলোঃ
চাউল ১ কেজি ৭ টাকা, আটা ১ কেজি ৭ টাকা, ময়দা ১ কেজি ৮ টাকা, মসুরির ডাল ১ কেজি ১৮ টাকা, সয়াবিন তেল ১ কেজি ২৪ টাকা, পেয়াঁজ ১ কেজি ৫ টাকা, রসুন ১ কেজি ১৮ টাকা, চিনি ১ কেজি ২৪ টাকা, লবন ১ কেজি ৫ টাকা, ইলিশ মাছ ১ কেজি ২৫ টাকা, গরুর গোস্ত ১ কেজি ৪০ টাকা, খাশির গোস্ত ১ কেজি ৬৫ টাকা, গুড়ো দুধ (ডানো) ৫ পাউণ্ড ১৭০ টাকা, কেরোসিন তেল ১ কেজি ৭ টাকা, সার ১ বস্তা ৯০ টাকা, লেখার কাগজ ১ দিস্তা ৬ টাকা, এস.এস.সি. পরীক্ষার ফিস ৯৫০ টাকা
আরও পড়ুনঃ
❒ মাত্র ৮ বিডিআর সদস্যের কাছে পরাজিত হয়েছিল ভারতীয় বাহিনী
❒ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩৬ দিনে হাসিনা সরকারের পতন
❒ যেসব কারণে শেখ হাসিনার পতন
❒ কোটাবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্ররাই বীর মুক্তিসেনা : জি এম কাদের
এরকম ৩৭৭টি বড় বড় কাজ তার নামে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। এছাড়া আরও হাজারো স্থাপনা, ব্রিজ, ছোট ছোট সেতু, কালভার্ট তৈরি হয়েছে এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে। এতকিছুর মধ্য দিয়ে এরশাদ এই দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন। সেই পথ ধরেই একের পর এক রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এরশাদ নেই, কিন্তু এরশাদের উন্নয়নের সূচিত ধারা আজও আছে। হয়ত এই উন্নয়নের ফলক থেকেই অনুপ্রাণিত হবে তার দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক আর হাজারো এরশাদ ভক্ত। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ হয়ত মন্দকে আড়াল করে এরশাদের ভালোকে অনুকরণ করে দেশকে এগিয়ে নিবে সমৃদ্ধির পথে।
❑ বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে পাচার ২৪ হাজার কোটি ডলার