নতুন নিয়মে ই পাসপোর্ট করতে কিকি কাগজপত্র লাগে, অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য যে যে কাগজপত্র লাগবে, অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ প্রক্রিয়া, ই-চালান কিভাবে ডাউনলোড করবেন
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী ইলেকট্রনিক বা ই–পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এখন যে কেউ চাইলে ঘরে বসে নিজেই নিজের ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঘরে বসে নিজে নিজে ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কী লাগে, ই–পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ, কত দিনে পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে জানা জরুরি।
কেননা, একটি ই–পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার (সাবমিট করা) পর যদি দেখেন, কোথাও ভুল হয়েছে, তাহলে আপনি তা সাথে সাথেই সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না। এর জন্য লম্বা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই সাথে, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একবারই ই–পাসপার্টের জন্য আবেদন করা যায়। তাই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য এ সকল বিষয় অনেক জানা জরুরী। এজন্য আপনাকে জানতে হবে পাসপোর্ট তৈরির ধাপ কিভাবে পাসপোর্ট তৈরি করতে হয়। পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম এখান থেকে দেখে নিন।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার সময় হাতের কাছে যে কাগজপত্র রাখতে হবে তা হলো
- ০১) জাতীয় পরিচয় পত্র
- ০২) জন্ম নিবন্ধন সনদ
- ০৩) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে দুই স্থানে বিদ্যুৎ বিল/ গ্যাস বিলের কপি।
- ০৪) নাগরিক সনদ
- ০৫) পেশাগত সনদের কপি
অবশ্যই মনে রাখবেন এই সব গুলো কাগজপত্রের তথ্য যেন এক ও ভিন্ন। নিজের নামের বানান,বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, পিতা মাতার নামের বানান। কাগজপত্রের তথ্য যদি গড়মিল থেকে থাকে সেটা পাসপোর্ট আবেদন করার আগেই সংশোধন করে নিতে হবে । আর অবশ্যই নাগরিক সনদ নিতে হবে বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী কাউন্সিলর/ চেয়ারম্যান অফিস থেকে।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ প্রক্রিয়াঃ
খুব সহজেই ঘরে বসেই আপনি অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে ১৪ টি ধাপ খুব সাবধানতার সাথে জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে মিল রেখে পূরণ করতে হবে।
ধাপ-০১
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে। ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’–এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। বর্তমানে বসবাসরত স্থানে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা। বাংলাদেশ থেকে আবেদন করে থাকলে বাংলাদেশ সিলেক্ট করুন তারপর বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ স্টেশন নির্বাচন করে এগিয়ে যান।
ধাপ-০২
ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে হিউম্যান চেক সিলেক্ট করে এগিয়ে যান।
ধাপ-০৩
এবার Gmail Account এ প্রবেশ করে ই পাসপোর্ট একাউন্ট টি ভেরিপাই করে নিন। Password সেট করে আবার Signin করতে হবে।
ধাপ-০৪
Signin করে স্ক্রিনের ডানে Apply for A New Passport এ ক্লিক করে এগিয়ে যান।
ধাপ-০৫
এবার Passport Type নির্বাচন করুন। সরকারি চাকুরিজীবী হলে Official Passport আর বাকি সবার জন্য Ordinary Passport অপশন সিলেক্ট করে এগিয়ে যান।
ধাপ-০৬
এবার পাসপোর্ট নিজের জন্য আবেদন করে থাকলে Apply for Myself সিলেক্ট করুন। তারপর Gender সিলেক্ট করুন। Full Name, Surename, Given Name অটো সেট হয়ে যাবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র তথ্য অনুযায়ী। তারপর Profession সিলেক্ট করুন।
এখানে খেয়াল রাখবেন আপনি যদি বেসরকারি কোনো কোম্পানিতে চাকুরীরত থাকে সে ক্ষেত্রে Private Service সিলেক্ট করবেন। সরকারি চাকুরিজীবী হলে Govrnment Service দিলেক্ট করতে হবে। Private Service দিলে অবশ্যই পেশা প্রমাণের জন্য Office ID লাগবে। আর Govrnment Service দিলে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত আছেন সেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের NOC লাগবে। Student হলে Student ID ও শিক্ষা সনদ লাগবে। আর Unemployed সিলেক্ট করলে কিছুই দিতে হবে না। মোট কথা আপনি যে Profession সিলেক্ট করবেন (Unemployed ছাড়া) তার পেশাগত প্রমাণ দিতে হবে। তারপর Religion সিলেক্ট করুন। তারপর গুরুত্বপুর্ণ বিষয় মোবাইল নাম্বার। অবশ্যই একটি সচল নাম্বার দিবেন। এই নাম্বারে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য কল আসবে, পাসপোর্ট ডেলিভারি আপডেট ও এই নাম্বারে পাবেন। তারপর Birth Data পূরণ করুন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী। Citizenship info বাংলাদেশী হলে By Birth দিয়ে এগিয়ে যান পরবর্তি ধাপের জন্য।
ধাপ-০৭
এই ধাপে প্রথমেই আছে Permanent Address পূরণ করুন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী। তারপর Permanent এবং Present Address এক হলে টিক মার্কে ক্লিক করুন অন্যথায় নাগরিক সনদ অনুযায়ী পূরণ করুন। Regional Passport Office অপশন অটো সিলেক্ট থাকবে। তারপর Save করে এগিয়ে যান পরের ধাপের জন্য।
ধাপ-০৮
এই ধাপে আপনার যদি আগের MRP অথবা epp Passoprt থেকে থাকে তার তথ্য দিতে হবে। তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। আগের Passport থেকে থাকলে তথ্য দিতেই হবে অন্যথায় আবেদনটি সরাসরি বাতিল করে দিবে পাসপোর্ট অফিস। আমার যেহেতু নতুন পাসপোর্ট এর আগে পাসপোর্ট করি নি তাই No, I don’t have previous passport সিলেক্ট করেছি। তারপর অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট না থেকে থাকলে No, I don’t have সিলেক্ট করুন। তারপর সতর্কতার সাথে সঠিকভাবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাম্বার টি দিয়ে এগিয়ে যান।
ধাপ-০৯
এই ধাপে পিতা- মাতার তথ্য পূরণ করতে হবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)/জন্ম নিবন্ধন সনদ/ নাগরিক সনদ অনুযায়ী। পিতা- মাতার তথ্য পুরণের পর নতুন করে একটি অপশন যোগ করা হয়েছে Guardian Information নামে। পিতা- মাতা থাকলে এই অপশনটি Not Applicable টিক দিন।
Guardian Information পূরণ করবেন যাদের মুলত পিতা- মাতার পরিবর্তে অন্য কোনো আইনি অভিভাবক আছে তারা। অবশ্যই অভিভাবকত্বের আইনি কাগজপত্র থাকতে হবে। তারপর Save করে এগিয়ে যান পরের ধাপের জন্য।
ধাপ-১০
এই ধাপে বৈবাহিক অবস্থার তথ্য দিন। অবিবাহিত হলে Single সিলেক্ট করুন। অথবা অন্য কোনো বৈবাহিক অবস্থার আইনি কাগজপত্র থাকলে সেই অবস্থার তথ্য দিয়ে এগিয়ে যান পরবর্তি ধাপের জন্য।
ধাপ-১১
এই ধাপে জরুরি যোগাযোগের জন্য অন্য একজনের তথ্য দিতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে কোনো কারণে না পাওয়া গেলে এই ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে যে জন্য। জরুরি যোগাযোগের জন্য পিতা/মাতা/ভাই/বোন এর কারো নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দেয়াই ভালো কারণ অনেক সময় বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হলে স্থায়ী ঠিকানার পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য জরুরি যোগাযোগ নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। Emargency Contact তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করে এগিয়ে যান।
ধাপ-১২
এই ধাপে আছে Delivery options & Appointment. অর্থাৎ পাসপোর্ট Regular Delivery নিলে আপনার দেয়া সব তথ্য ঠিক থাকলে ২১ কার্য দিবসের ভেতর পাসপোর্ট ডেলিভারি পাবেন। আর Express Delivery সিলেক্ট করলে সব তথ্য ঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কার্য দিবসের ভেতর ডেলিভারি পাবেন।
Regular Delivery ফি ৫,৭৫০/- টাকা।
Express Delivery ফি ৮,০৫০/- টাকা।
যেকোনো একটি অপশন সিলেক্ট করে আপনার পছন্দ মতো Appointment Date এবং Time সিলেক্ট করুন। অর্থাৎ এই Date এবং Time এ আপনাকে পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। এই দিনই আপনার ১০ আঙ্গুলের ছাপ,ছবি তোলা, চোখের আইরিশ, স্বাক্ষর নেয়া হবে। তাই সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া চেষ্টা করবেন। এরপর Save করে এগিয়ে যান।
ধাপ-১৩
এই ধাপে দেখতে পাবেন আপনার পূরণকৃত সকল তথ্যের সামারি। সকল তথ্য ভালোভাবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)/জন্ম নিবন্ধন সনদ/ নাগরিক সনদ / বিদ্যুৎ বিল/ গ্যাস বিল অনুযায়ী মিলিয়ে নিন। ভুল থাকলে ডান পাশের Edit এ ক্লিক করে সংশোধন করে নন।
তারপর declaration of consent এ টিক মার্ক দিয়ে সব তথ্য সঠিক থাকলে Confirm and proceed to payment এ ক্লিক করুন। এরপর পেমেন্ট অপশন আসবে। ১৫ মিনিটের ভেতর Bkash/Rocket/Nagad থেকে পেমেন্ট করে নিন। কারণ ১৫ মিনিট পর পেমেন্ট অপশনটি আর থাকবে না। ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলে আবেদনটি Delete করে পুনরায় আবার আবেদন করতে হবে। এ জন্য আগে থেকেই Bkash/Rocket/Nagad এ আবেদন ফি (চার্জ সহ) ভরে নিবেন। যাতে পেমেন্ট করতে দেরি না হয়ে যায়।
ধাপ-১৪
পেমেন্ট হয়ে গেলে আপনার পূরণকৃত Application Summary এবং Application Registration form ইমেইল এ পেয়ে যাবেন। অথবা ই পাসপোর্ট এ lognin করে Applications অপশনে ক্লিক করলে আপনার নাম ক্লিক করলেই Application Summary এবং Application Registration form Download করতে পারবেন।
ই-চালান কিভাবে ডাউনলোড করবেনঃ
ই পাসপোর্ট এ lognin করলে Menu বারে (বাম থেকে ডানে) ৫ নাম্বার অপশন Passport Fees এ ক্লিক করুন। তারপর payment slip (echallan) click here এ ক্লিক করুন।
ক্লিক করলে Ekpay Website এ নিয়ে যাবে। সেখান থেকে পাসপোর্ট Application ID সিলেক্ট করুন। Application Summary থেকে পাসপোর্ট Application ID টি কপি করে নিয়ে পেস্ট করে জমা দিন বাটনে ক্লিক করুন।
তারপর E-Challan সিলেক্ট করুন, তারপর Challan No. টি দিন। তারপর যে তারিখে পেমেন্ট করেছেন সে তারিখ সিলেক্ট করুন তারপর Captcha পূরণ করে Search বাটন ক্লিক করুন। পেয়ে যাবেন E-Chalan Details.
বিঃদ্রঃ E-Chalan ডাউনলোড করতে পারবেন Payment করার একদিন পর। অর্থাৎ কার্য দিবস হলে দুপুর ১২ টার পর ডাউনলোড করতে পারবেন।
পাসপোর্ট অফিসে যে যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে
- নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
- মূল জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card) এবং এর ফটোকপি
- ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি – Application Summery
- পাসপোর্ট আবেদনের ফরম – Application Form
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান / ব্যাংক ড্রাফ কপি
- যে বাসায় থাকেন সে বাসার বিদ্যুৎ /গ্যাস বিলের কপি
- নাগরিক সনদ
- পেশাগত সনদের ফটোকপি
- বিবাহিত হলে কাবিননামা র ফটোকপি
- পুরান পাসপোর্ট যদি থাকে পুরান পাসপোর্টের কপি
সঙ্গে অবশ্যই মূল কাগজপত্রগুলোও সঙ্গে নেবেন। এরপর ছবি ও আঙুলের ছাপের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়াবেন। ছবি তোলা, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি গ্রহণ শেষে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি রিসিট দেবে। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজ করে জানাবে। এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন।
আপনার পাসপোর্টের Passport Status ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে লগইন করলে জানতে পারবেন। Passport Status কোনটার কি মানে জানতে ক্লিক করুন।
লেখাঃ মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ
আরও পড়ুনঃ বরফ সাদা রঙের হয় কেন? জানেন কি