আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা । একেবারেই নতুন একটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই অ্যান্টিবায়োটিক মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তথা ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুকেও মেরে ফেলতে সক্ষম বলে দাবি তাদের।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যখাতে নতুন এক অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ এমন এক ধরনের ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
এই ওষুধ মানুষ বা পশুর দেহে প্রয়োগ করলে এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে বা এর বংশবিস্তার রোধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে। তাই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্টিবায়োটিককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ বলা যায়।
কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক উপায়ে প্রয়োগ না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যদি কারও শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগ হয় এবং সেই রোগ নিরাময়ে কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শমত সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করেন তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
তখন ওই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরেও ব্যাকটেরিয়ার এই টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জনকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। বিষয়টাকে বিশেষজ্ঞরা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করছেন এবং সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ঘুচতে পারে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব, ওয়াই ক্রোমোজোমের রহস্যভেদ!
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে একদল গবেষক। গবেষণা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলগুলো ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানপত্রিকা ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
নতুন অ্যান্টিবায়োটিকটির নাম দেয়া হয়েছে জোসুরাবালপিন। অ্যান্টিবায়োটিকটি ইঁদুরের নিউমোনিয়া ও সেপসিস রোগের জন্য দায়ী অতিমাত্রায় ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া কারবাপেনেম ও অপেক্ষা কম মাত্রায় ওষুধ প্রতিরোধী অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বুমানি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এটি এখন মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বুমানি ব্যাকটেরিয়াকে ক্রাবও বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও দুটি ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা ও এন্টারোব্যাক্টেরিয়াসির পাশাপাশি ক্র্যাবকে ‘প্রায়োরিটি ১ ক্রিটিক্যাল প্যাথোজেন’ হিসাবে চিহ্ণিত করেছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ মলিকুলার মাইক্রোবায়োলজির সিনিয়র লেকচারার ও অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের অন্যতম গবেষক ড. অ্যান্ড্রু এডওয়ার্ডস বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ক্র্যাব তথা অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বুমানি ব্যাকটেরিয়া। বিশেষ করে যারা ভেন্টিলেটরে থাকেন তাদের সংক্রমণের জন্য দায়ী এটি।
এ গবেষক আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে নতুন চিকিৎসার বিকাশ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ এগুলো অ্যান্টিবায়োটিককে ফাঁকি দিতে খুবই পারদর্শী। ফলে এই কাজটি সত্যিই উত্তেজনাপূর্ণ। এটা এমন আত্মবিশ্বাস তৈরি করছে যে, নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির পদ্ধতিগুলো ফল দিতে পারে।’
আরও পড়ুন: চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিস্ময়কর সাফল্য কৃত্রিম লিভার
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষকও দাবি করেছেন, আর্টফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তারা নতুন একটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
তারা বলছেন, এআই ব্যবহার করে প্রায় সোয়া এক কোটি রাসায়নিকের মধ্য থেকে ধাপে ধাপে বেছে নিয়ে একটি গোত্রের পাঁচটি যৌগকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। ওই যৌগগুলো নতুন একটি গোত্রের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ওষুধ-প্রতিরোধী অত্যন্ত ‘কমন’ কয়েকটি ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম। এআই-এর সাহায্যে যৌগটি তৈরি বলে সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নগণ্য।
এমআইটির ওই গবেষণাপত্রও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’-এ । এআই বা মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে তৈরি নতুন গোত্রের এই অভিনব অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সর্বত্রই চিন্তার কারণ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বুমানি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অন্তত ডজন খানেক ব্যাকটিরিয়া। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট এসব জীবাণুর ওপর তাই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। ফলে ধীরে ধীরে রক্তে বিষক্রিয়া এবং প্রাণঘাতী মাল্টি-অর্গান ফেইলিয়রের শিকার হয়ে প্রাণ বিপন্ন হয় রোগীর।
আরও পড়ুন: ‘কিল সুইচ’, যা মেরে ফেলতে পারে ক্যান্সার কোষকে
এমন প্রেক্ষিতে এমআইটির গবেষক দল এআই ব্যবহার করে এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করেছেন, যা স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াসকে সহজেই মেরে ফেলে। যে জীবাণু মেথিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকে রেজিস্ট্যান্ট।
তবে এই কাজ সহজে হয়ে যায়নি। সম্ভাবনাময় ১ কোটি ২১ লক্ষ যৌগ নিয়ে কাজটা শুরু হয়েছিল এখন থেকে পাঁচ বছর আগে। তারপর ধাপে ধাপে প্রথমে তার মধ্য থেকে ৩৯ হাজার ৩১২টি এবং এরপর ২৮৩টি যৌগকে চিহ্নিত করা হয়, যেগুলো রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটিরিয়াকে বধ করতে সক্ষম।
এরপর ইঁদুরের শরীরে এবং ল্যাবে মানুষের সেল কালচার করে দেখা হয় ওই ওষুধগুলোর সুরক্ষা ও কার্যকারিতার দিকগুলো। সেখানেও বাছবিচারের প্রধান হাতিয়ার ছিল এআই তথা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ। শেষমেশ চিহ্নিত করা হয় একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি যৌগকে, যেগুলো সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে আগামীদিনে।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে