আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কারখানা । বাংলাদেশের প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপনে ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত এই কারখানাটি আগামী বছরের মার্চ নাগাদ বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মূলত ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী এ মান্নান খান। হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের ব্যবসায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে প্রযুক্তি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সারা বিশ্বে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে এগিয়ে আছে। এ জন্য আমরাও এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি। দেশেই দূষণমুক্ত গাড়ি উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। পুরোনো অটোমোবাইল খাত ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। পরিবেশের কথা বিবেচনায় এর জায়গা নিচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি।
এই কারখানা স্থাপনে খরচ হবে ৭৯০ কোটি টাকা। দুইটি আর্থিক জোট গঠনের মাধ্যমে ১০টি ব্যাংক এই অর্থের বড় একটি অংশের যোগান দিচ্ছে। বাকি মূলধন দেবেন উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে এর অবকাঠামো স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ১০০ একরের জমিতে এখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বসানো হচ্ছে।
মোট বিনিয়োগের প্রায় ৭৫ শতাংশ গাড়ির বডি, ব্যাটারি, মোটর ও চার্জার উৎপাদন কাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে। বাকি ২৫ শতাংশ খরচ হবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উপকরণ বাইরে থেকে আমদানি করার জন্য। সেডান, এসইউভি ও বাস সহ বিভিন্ন যানবাহনের বডি এই কারখানাতেই তৈরি করা হবে।
আরও পড়ুনঃ দেশে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশনের যাত্রা শুরু
বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড নামে আরেকটি আলাদা কারখানাও তৈরি করা হবে। এই কারখানায় উৎপাদিত ব্যাটারি শুধু ইলেকট্রিক যানবাহনেই ব্যবহার করা হবে না বরং সৌরশক্তি, ডেটা সেন্টার ও ইউপিএসেও ব্যবহার করা হবে। ম্যাংগো টেকনোলজিস লিমিটেড নামে আরেকটি কারখানায় মোটর কন্ট্রোল ও চার্জিং সিস্টেম নির্মাণ করা হবে।
এই উৎপাদন কারখানাগুলো প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। পরবর্তীতে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৫ হাজার পর্যন্ত জনবল বাড়ানো হতে পারে। এই কারখানায় বর্তমানে পরিকল্পনা অনুযায়ী বছরে ৬০ হাজার টু হুইলার, ৪০ হাজার থ্রি হুইলার ও ৩০ হাজার ফোর হুইলার নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে।
এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা মতামত জানান, এই বাহনগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাত করা হবে। পরিকল্পনার মধ্যে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোল স্টেশনে চার্জিং সুবিধার প্রচলনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই যানবাহনগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দেবার মতো করে নির্মাণ করা হবে।
গাড়ির দাম কত হবে
উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করবে, তা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের। এতে ১ বছরে ২ চাকার ৬০ হাজার,৩ চাকার ৪০ হাজার ও ৪ চাকার ৩০ হাজার গাড়ি উৎপাদন করা যাবে। এতে কর্মসংস্থান হবে দেড় হাজার মানুষের, পরে প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
গাড়িগুলোর নকশা এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। এসব গাড়ি হবে কানেকটেড কার। অর্থাৎ গাড়িতে চার্জ–সুবিধা, ওয়াইফাই–সুবিধা যুক্ত থাকবে। ফলে গাড়িতে ওঠার পর কেউ কেউ অফিস শুরু করতে পারবেন। এসব গাড়ি চার্জ করার জন্য পাম্পে ব্যবস্থা থাকবে, আবার গাড়ির মালিকেরা নিজ বাড়িতেও চার্জ করতে পারবেন। বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জ–সক্ষমতার ওপর দাম নির্ধারণ করা হবে।
আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এক চার্জে ২৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন সেডান কারের দাম পড়বে ১২-১৩ লাখ টাকা। তবে এক চার্জে ৩৫০ কিলোমিটার চলা সেডান গাড়ির দাম পড়বে ১৬-১৭ লাখ টাকা।
এক চার্জে ৩৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন এসইউভি অথবা জিপের দাম পড়বে ২৩-২৫ লাখ টাকা। ৪০০ কিলোমিটার চলা গাড়ির দাম পড়বে ২৮-৩০ লাখ টাকা। এক চার্জে ২৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন ৭ সিটের মাইক্রোবাসের দাম পড়বে ২০-২২ লাখ টাকা, ৩৫০ কিলোমিটার চলা গাড়ির দাম পড়বে ২৫-২৬ লাখ টাকা। ৪-৫ লাখ টাকায় মিলবে ৩ চাকার গাড়ি, যা এক চার্জে চলবে ২০০-২৫০ কিলোমিটার। কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, বাসের দাম হবে ১৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে।
এসব গাড়ি বাজারে ছাড়তে ইতিমধ্যে সব ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে করছাড়–সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ নীতিমালা, বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াবে যেসব খাবার