আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: থানকুনি পাতা কেন খাবেন ? সুস্থ থাকার জন্য আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিতে। অনেক ভেষজ রয়েছে যেগুলো নানাভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি হলো থানকুনি পাতা। হালকা তেতো স্বাদের এই পাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ইন্ডিয়ান পেনিওয়ার্ট।
থানকুনি একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ পুকুর এবং জলাভূমির পাশে পাওয়া যায়। এটি ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপেও জন্মে। থানকুনি ব্যবহার করা যায় খাদ্য এবং ওষুধ উভয় হিসেবেই। শেকড় সহ এর পুরো অংশই খাওয়া যায়। ভর্তা, ভাজি, বড়া তৈরির পাশাপাশি এই পাতা দিয়ে চাটনি, সালাদ এবং পানীয়ও তৈরি করা যায়। জেনে নিন এর উপকারিতা-
পেটের আলসার এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করে
থানকুনির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যর কারণে এটি পেট এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। সেজন্য প্রথমে পরিষ্কার ও তাজা থানকুনি পাতা সেদ্ধ করুন। এরপর সেই পানি একটি গ্লাসে ছেঁকে নিন। এরপর তার সঙ্গে যোগ করুন মধু। পেটের আলসার এবং মূত্রনালীর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকালে এই পানীয় পান করুন।
হজমের সমস্যা দূর করে
আরও পড়ুনঃ আদা সর্বরোগের মহৌষধ
হজমে সমস্যা হচ্ছে? তাজা থানকুনি পাতা এক চিমটি লবণ দিয়ে সেদ্ধ করুন। এটি নিয়মিত পান করুন। কারণ হজমশক্তি ভালো করার জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্য থানকুনি পাতার এই পানীয় ভীষণ উপকারী।
পেট এবং লিভার ভালো রাখে
যারা পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে একটি পাকা কলার সঙ্গে কিছু থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এভাবে নিয়মিত খেলে তা আপনার পেটের স্বাস্থ্য এবং লিভার দুটোই ভালো রাখবে।
ক্ষত নিরাময় করে
যেকোনো ক্ষত দ্রুত নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন থানকুনি পাতা। এর আছে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য যা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ক্ষত নিরাময়ের গতি ত্বরান্বিত করতে এবং ত্বকের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শুকনো থানকুনির গুঁড়া দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করুন।
আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দেয়
যারা আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী হতে পারে থানকুনি পাতা। এটি প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। বাতের চিকিৎসার অংশ হিসেবে চিকিৎসকরা নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে বাতের সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন অনেকটাই।
কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অসুখ সারাতে কাজ করে
মধুর সঙ্গে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে তা সহজেই কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ সারাতে সাহায্য করতে পারে। তুলসি ও গোল মরিচ দিয়ে থানকুনি পাতা খেলে তা ঠান্ডা এবং জ্বরও নিরাময় করে। গলা ব্যথা এবং কাশি নিরাময়ের জন্য, থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে পান করুন। এটি সপ্তাহখানেক ধরে খেলে উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
আরও পড়ুনঃ নিমের ওষধি গুণাগুণ ও ক্ষতিকর দিক
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে? নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি যদি খাবারের তালিকায় থানকুনি পাতা রাখেন তবে আর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে হবে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ কার্যকরী থানকুনি পাতা। যা এই মহামারির সময়ে আরও বেশি জরুরি। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেবন করুন। এটি শিশুকে খাওয়ানোও উপকারী।
অনিদ্রা দূর করে
অনিদ্রার সমস্যা আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ করে দেয়। তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ঘুম জরুরি। অনিদ্রার সমস্যা থাকলে তা দূর করার জন্য খেতে পারেন থানকুনি পাতা। প্রতিদিন দুইবার ২-৪ চামচ থানকুনির রস ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে দ্রুত।
সৌন্দর্যচর্চায় থানকুনি পাতা
থানকুনি। ছোট ছোট সবুজ পাতা দারুণ ওষধিগুণসম্পন্ন। কত কাজেই না লাগে। এই থানকুনি দিয়ে সৌন্দর্যচর্চা, সেটা কি কেউ শুনেছে আগে। অথচ সেটাই হচ্ছে এখন।
ত্বকের সতেজতায়
থানকুনিপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিড। তাই থানকুনিপাতার নির্যাসসমৃদ্ধ সৌন্দর্যপণ্য ক্লান্ত ভাব দূর করে আমাদের ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
ব্রণের উপদ্রব কমাতে এবং দাগ দূর করতে
আরও পড়ুনঃ তুলসি পাতার ওষধি গুণাগুণ
অতিরিক্ত সিবাম (ত্বকের স্বেদগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত রস) নিঃসরণ, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ, লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ব্রণ হয়ে থাকে। থানকুনির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লামেটরি (প্রদাহরোধী) উপাদান ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। শুধু তা–ই নয়, ব্রণের দাগ দূর করতে থানকুনির নির্যাস দারুণ উপকারী।
ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে
থানকুনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান ম্যাডেকাসসাইড, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। এতে দূষণ ও সূর্যের রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। শুধু তা–ই নয়, এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা রোধ করতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে কোলাজেন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান
ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ক্ষত দূর করতে
থানকুনির ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে, ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। এতে ত্বকে সতেজ ভাব ফুটে ওঠে।
ত্বকের আর্দ্রতা ও কোমলতা ধরে রাখতে
থানকুনির অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোক্যামিকেল ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে ত্বক থাকে কোমল এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কম দৃশ্যমান হয়।
চুল পড়া কমায়
চুল যদি অতিরিক্ত পড়তে থাকে তবে তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে থানকুনি পাতা। প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ শুকনো থানকুনির গুঁড়া দিয়ে তৈরি প্যাক মাথায় ব্যবহার করলে তা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে অনেকটাই।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
থানকুনির নির্যাস বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিদিন থানকুনির জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে পাকস্থলী ও মস্তিষ্কের সুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাণময়তা বৃদ্ধি পাবে ভেতর থেকে। চাইলে থানকুনির রস বরফ করে ত্বকে ঘষতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে থানকুনির নির্যাসসমৃদ্ধ বিভিন্ন সৌন্দর্যপণ্য, যেমন: ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, টোনার, সানস্ক্রিন ইত্যাদি। এগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা