আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন । তেঁতুল পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে তরুণীদের খাবারের তালিকায় উপরের দিকেই পাওয়া যায় এর নাম। তবে অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। এর পাতা, ছাল, ফলের কাঁচা ও পাকা শাঁস, পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সবকিছুই উপকারী। এর কচিপাতায় রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় কাজ দেয়। তেঁতুলের কিছু উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-
ত্বক উজ্জ্বল এবং এক্সফোলিয়েট করে
তেঁতুলের পাল্প যুগ যুগ থেকে ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলে আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (এএইচএ) রয়েছে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তেঁতুলের এএইচএগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং টারটারিক অ্যাসিড। ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে এবং দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে তেঁতুলের রস ব্যবহার করুন। এই এএইচএগুলির পাশাপাশি এতে চিনি এবং পেকটিনও রয়েছে। যা আপনার ত্বককে হাইড্রেট রাখে। ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। অকাল বার্ধক্য রোধ করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও পুষ্টি গুণ
ওজন কমানোর যাত্রায় তেঁতুল অনেক কার্যকর একটি উপাদান। বেশি ওজন হলে হৃদরোগ, কিডনি, লিভারের ব্যাধিগুলির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তেঁতুল খেলে শরীরের ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তেঁতুল শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কাটাতে সাহায্য করে।
হজম জনিত সমস্যা দূর করে
নিয়মিত তেঁতুল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই আমাদের অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে। প্রাচীনকাল থেকে তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্যর ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এবং টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। ডায়রিয়া জনিত পেটে ব্যথা কমাতে তেঁতুলের ছাল এবং মূলের নির্যাস কার্যকরভাবে নিরাময় করতে পারে।
লিভারের সমস্যা সমাধান করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, তেঁতুলের নির্যাস গ্রহণের ফলে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। এতে থাকা প্রোকিয়ানিডিনগুলো লিভারের ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তেঁতুল খনিজ সমৃদ্ধ। যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম লিভারের লিপিড সামগ্রীগুলোকে ফ্রি র্যাডিকাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হার্টের স্বাস্থ্যর উন্নতি করে
তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হ্রাস করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্রণ করে
তেঁতুলের পাল্পে কার্ব-ব্লকিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি শরীরকে কার্বোহাইড্রেট শোষণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তেঁতুল বেশ উপকারি। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। তেঁতুলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা অগ্ন্যাশয়কে প্রদাহজনক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে
তেঁতুলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফলে এটি বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধান ঔষধি উদ্ভিদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকান উপজাতিরা, প্রাচীন কাল থেকে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় জন্য এটি ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে অনেক সময় জ্বর হয়। এ ক্ষেত্রে, তেঁতুলের রস বেশ কার্যকর।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ফ্রি র্যাডিকালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটিতে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তেঁতুল গলা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা দূর করতেও সহায়তা করে।
চোখের জন্য ভাল
তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এটি কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় সহায়তা করে। প্রাচীনকালে চোখ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য তেঁতুল ব্যবহৃত হত।
চুলের যত্নে
তেঁতুল চুলের যত্নের জন্য একটি কার্যকর উপাদান। মাথার ত্বকে তেঁতুলের রস লাগান। এটি ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটাবে। চুলকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। মাথার ত্বকের ফলিকলের বৃদ্ধি ঘতায়। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তুলে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আরও পড়ুনঃ নিমের ওষধি গুণাগুণ ও ক্ষতিকর দিক
তেঁতুলের রস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যাদুর মত কাজ করবে। সর্দি, কাশি, ফ্লু দুর করবে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে শরীর থাকে জীবাণুমুক্ত।
ক্যানসার বিরুদ্ধে লড়াই করে
তেঁতুলে সক্সলেট মিথেনলিক এক্সট্রাক্ট রয়েছে। যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। যেহেতু তেঁতুল উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই এটি ক্যান্সারের কোষগুলো নির্মূল করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান পরোক্ষভাবে রক্তের শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুলে উপস্থিত উৎসেচক শরীরে শর্করার শোষণ মাত্রা কমিয়ে দিয়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীরা যদি ওষুধের পাশাপাশি নিয়ম করে তেঁতুলও খান, তা হলে সুস্থ থাকতে পারবেন।
অপকারিতা/সাবধানতা :
১. কিছু ঔষধ আছে সেসব ঔষধ সেবনের সাথে তেঁতুল খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে। যেমন অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মতো নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-প্লাটিলেগ ড্রাগ ও রক্ত পাতলা করার মেডিসিন, যেমন- হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি। তাই যারা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত তারা ঔষধ সেবনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হ’তে পারে। তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি তেঁতুল না খাওয়া। ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই তেঁতুল খেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
৩. তেঁতুলের প্রভাবে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের মধ্যে র্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হওয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই তেঁতুল খেলে যাদের এইসব অসুবিধা মনে হবে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৪. তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় এসিড। তাই নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।
৫. গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হয়। ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হ’তে পারে।
আরও পড়ুনঃ তুলসি পাতার ওষধি গুণাগুণ