আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: তুলসি পাতার ওষধি গুণাগুণ । তুলসি পাতার গুণাগুণ হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি করে তুলসি পাতা চিবিয়ে খান। বাসার বারান্দায় যেখানে আলো–বাতাস চলাচল করে, সেখানে লাগিয়ে রাখতে পারেন উপকারী তুলসিগাছ।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত টমেটো খান, সতেজ থাকুন
ওষুধ হিসেবে তুলসিপাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। এটি নানা গুণে অনন্য বলেই হাজার বছর ধরে যোগ আছে ওষুধের তালিকায়। জেনে নিন তুলসি পাতার কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে-
গলা ব্যথা দূর করে
গলা ব্যথার সমস্যায় ভুগলে আস্থা রাখুন তুলসি পাতায়। কারণ এই সমস্যা দূর করতে তুলসি পাতার জুড়ি মেলা ভার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতেও তুলসি পাতা বেশ উপকারী। করোনা মহামারির এই সময়ে তাই নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কয়েকটি তুলসি পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।
সর্দি-কাশি কমিয়ে দেয়
এটি খুব পরিচিত চিত্র যে, ঠান্ডা লাগলে অর্থাৎ সর্দি-কাশি হলে তুলসি পাতা খাওয়া হয় ওষুধ হিসেবে। সর্দি ও কাশি সারাতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে। কারও বুকে কফ বসে গেলে তাকে প্রতিদিন সকালে তুলসি পাতা, আদা ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেতে দিন। এতে দ্রুতই উপশম মিলবে।
ডায়াবেটিস দূরে রাখে
তুলসি পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসি অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসিতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়বেটিস রোধ করতে কার্যকরী।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও পুষ্টি গুণ
ক্যান্সার এক মরণঘাতি অসুখের নাম। এই অসুখ দূরে রাখতেও সাহায্য করে তুলসি পাতা। এই পাতায় আছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এতে আরও আছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন। এসব উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কার্যকরী। অগ্নাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। পাশাপাশি দূরে রাখে ব্রেস্ট ক্যান্সারও।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তুলসি পাতা। অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি মোকাবিলায় কাজ করে এই পাতা। জ্বর সারাতেও তুলসি পাতা সমান উপকারী। তুলসি পাতা ও এলাচ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে খুব সহজেই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে তুলসি পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত শুকায়।
ওজন কমায়
তুলসি পাতা খেলে তা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল দুটোই রোধ করে। তাই খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসি দিয়ে তৈরি ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তুলসি গাছ পোকামাকড় তাড়ায়
এটি একটি ভুল ধারণা যে বাড়িতে গাছপালা থাকা বাগ আমন্ত্রণ জানায়। তুলসি গাছ একটি চমৎকার পোকামাকড় প্রতিরোধক। তুলসি পাতার তেলের নির্যাসের লার্ভিসাইডাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক মশা হওয়ার আগেই এটি মশার লার্ভাকে মেরে ফেলে। এইভাবে, এটি পোকামাকড় দূরে রাখে এবং একটি মনোরম সুবাস ছড়িয়ে দেয়। পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য শুকনো তুলসি পাতা ভাত এবং ডালের মতো সংরক্ষণের ব্যবস্থার সাথেও রাখা যেতে পারে। এমনকি যদি তুলসী গাছের পাতা ভুলবশত আপনার প্যানে পড়ে যায়, তবে তারা আপনার ক্ষতি করবে না। এমনকি আপনি আপনার আলমারিতে শুকনো তুলসির পাউচও রাখতে পারেন।
তুলসি গাছ ত্বকের উন্নতি করে
তুলসি আপনার গায়ের রং উন্নত করতে এবং চুল মজবুত করতে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। জুস বা স্মুদিতে খাওয়া ছাড়াও তুলসী বাড়িতে তৈরি মুখোশ তৈরি করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এইভাবে প্রয়োগ করলে, তুলসি পাতায় থাকা ইউরসোলিক অ্যাসিড ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং বলিরেখা ও দাগ দূর করে। তুলসীর ছত্রাক-বিরোধী প্রকৃতি এমনকি খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
তুলসি গাছ দাঁত ও মাড়ি মজবুত করে
মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য তুলসি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। আপনি যদি ভেষজ টুথপেস্টের উপাদান তালিকাটি মনোযোগ সহকারে দেখেন তবে আপনি সম্ভবত তুলসীর উল্লেখ খুঁজে পাবেন। তুলসি দাঁতের পাশাপাশি মাড়ি মজবুত করে। এটি মুখের আলসার প্রশমিত করতেও সাহায্য করে। এইভাবে, আপনার বাগানে একটি তুলসি গাছ থাকলে আপনার হাসিকে উজ্জ্বল করার একটি সহজ উপায় দেয়।
তুলসি হার্টের উপকার করে
ভিটামিন সি যা তুলসিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এটি হৃদরোগের জন্য একটি ভাল উদ্ভিদও করে তোলে। হৃদপিণ্ডের জন্য তুলসির উপকারিতা উদ্ভিদের ইউজেনলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতেও জমা হতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং কম লিপিড সামগ্রী এবং ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রার বিরুদ্ধে লড়াই করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ধমনীতে চর্বি জমা হওয়ার ঝুঁকি এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসি পাতা এড়িয়ে চলবেন-
গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়
সামান্য তুলসি পাতা খেলে তা ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে এসময় নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসি এড়িয়ে চলাই উত্তম। এঅতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে তা নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে বন্ধ্যাত্বের কারণ। তাই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে।
নিম্ন রক্তচাপ
তুলসি পাতায় থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই কারও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসি পাতা না খাওয়াই ভালো। এই ক্ষেত্রগুলোতে সতর্ক থাকলেই তুলসি পাতা খাওয়া নিরাপদ। এর অনন্য সব উপকারিতার জন্য নিয়মিত খেতে পারেন।
রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে
তুলসি পাতা অতিরিক্ত খেলে তা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা। যেকোনো সার্জারির দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসি পাতা খাওয়া বন্ধ রাখুন।
আরও পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার আশ্চর্যজনক উপকারিতা