আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার হাজী বিরিয়ানি । পুরান ঢাকার সাথে জড়িয়ে আছে ঢাকা শহরের আদি ঐতিহ্য। সময়ের সাথে সাথে প্রায় চারশ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস এই পুরান ঢাকাকে গড়ে তুলেছে। স্থাপত্য শিল্প কিংবা সমগ্র এরিয়াজুড়ে নানারকম নিদর্শন ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্নরকম খাবারের সমাহার। মোঘল আমলে বাদশাহি দরবারে জনপ্রিয় হওয়া বিরিয়ানিসহ কাবুলি, খিচুড়ি, হালিম, বাকরখানি, রুটি, কাবাব, শরবত, দোলমাজাতীয় তরকারিসহ নানা খাবারের ঐতিহ্য এখনও বহাল তবিয়তে ধরে রেখেছে পুরান ঢাকাবাসী।
১৯৮৭ সালের ৮ জুলাই, বিশ্বখ্যাত সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস–এ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘হাজীর বিরিয়ানি’র ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, দিনে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার মানুষ হাজীর বিরিয়ানির নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন।
৩৬ বছর পর এসে এখনো দিনে হাজারের ওপর নিয়মিত গ্রাহক রয়েছেন হাজীর বিরিয়ানির। সময়ের সঙ্গে যে পরিবর্তনটি হয়েছে, তা হলো রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার পাশাপাশি পার্সেলেও বিক্রি বেড়েছে। মুখে মুখেই প্রতিষ্ঠানটির নামডাক ছড়িয়েছে বহু আগে থেকেই। এরই মধ্যে দেশজুড়ে নিত্যনতুন খাবারের বহু দোকান গড়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও ৮৪ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা টিকে আছে হাজীর বিরিয়ানি।
আরও পড়ুনঃ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ করে যেসব খাবার
ইতিহাস
হাজী বিরিয়ানি (হাজীর বিরিয়ানি নামে পরিচিত) পুরান ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ যারা ছাগলের মাংসের বিরিয়ানি, বোরহানী এবং কোমল পানীয় বিক্রি করে। ১৯৩৯ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন নামে একজন ব্যক্তি রাস্তার ধারের খাদ্য বিক্রির দোকান হিসেবে রেস্তোরাঁটি চালু করেছিলেন। পরবর্তীতে এর ব্যবসায় নাটকীয় পরিবর্তন মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শহরের সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে।
১৯৯২ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন মারা যাওয়ার পর, তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ গোলাম হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শৈলী ও ঐতিহ্যের কোন পরিবর্তন না করেই পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে যান। সময়ের সাথে সাথে হাজী মোহাম্মদ গোলাম পারিবারিক ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ব্যবসাটি তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ শাহেদের হাতে তুলে দেন।
অবস্থান
হাজী বিরিয়ানির দুইটি শাখা রয়েছে। একটি পুরান ঢাকায় যা প্রধান শাখা এবং একটি মতিঝিলে। পুরান ঢাকার প্রধান শাখাটি ৭০ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজারে অবস্থিত। শুরুতেও হাজীর বিরিয়ানির একটি শাখা ছিল, এখনো তাই। দেশজুড়ে নামডাক বাড়লেও প্রতিষ্ঠানটির শাখা বাড়েনি।
রন্ধনপ্রণালী
রন্ধনপ্রণালীতে ভাত, ছাগলের মাংস, সরিষার তেল, রসুন, পিঁয়াজ, গোল মরিচ, জাফরান, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, লবণ, লেবু, দই, চীনাবাদাম, ক্রিম, কিশমিশ এবং সামান্য পরিমাণ চিজ (গরু বা মহিষের) ব্যবহৃত হয়। রন্ধনপ্রণালীটি রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করেছেন। হাজী মোহাম্মদ শাহেদ দাবি করেন, “আমি কখনো কিছু পরিবর্তন করিনি, এমনকি লবণের পরিমাণও পরিবর্তন করি নি।
হাজীর বিরিয়ানির দোকানে বিক্রি হয় শুধু কাচ্চি বিরিয়ানি। হাজীর বিরিয়ানি মূল বৈশিষ্ট্য হল- গরুর মাংসের পরিবর্তে শুধু খাসির মাংস এবং ঘি/বাটার অয়েলের পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। শোনা যায়, শুরু থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় সব মশলা ব্যবহার করা হয় বলে আজও প্রায় একই রকম এবং অপরিবর্তিত আছে এই বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ। বর্তমানে হাজীর বিরিয়ানির হাফ প্লেটের দাম ৮০ টাকা। ফুল প্লেট ১৬০ টাকা। পুরান ঢাকা ছাড়াও হাজীর বিরিয়ানির দু’টি শাখা রয়েছে মতিঝিল বিমান অফিস ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।
যেভাবে যাবেন
পুরান ঢাকায় এসে হাজীর বিরিয়ানির স্বাদ গ্রহণ করতে চাইলে আপনাকে বাসে করে চলে আসতে হবে নিউমার্কেট বা আজিমপুর। এখান থেকে রিকশা নিয়ে বংশাল হয়ে যেতে হবে কাজী আলাউদ্দিন রোডে। এছাড়া গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকা যাবার জন্য অনেক বাস রয়েছে। অনেকে নিজস্ব মোটরসাইকেল নিয়েও যায় তবে পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট কিছুটা সংকীর্ণ হওয়াতে বেশিরভাগ সময়েই জ্যাম থাকে। তাই হাতে সময় নিয়ে যাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানি