আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গু নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে । বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু তার নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিজ্ঞানীরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। রোগের মাত্রা বাড়ার কারণে এ রোগ সম্পর্কে অনেক পুরোনো ও প্রচলিত ধারণা আর জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। মশাবাহিত এ রোগের প্রতিরোধক্ষমতা সম্পর্কে প্রচলিত বেশ কিছু ধারণাও ভুল বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার তথ্যমতে, বারবার ডেঙ্গু সংক্রমণ হলে দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের অ্যান্টিবডি কমে যায়। এ বছরের মহামারি থেকে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ খুব কম। ডেঙ্গু সংক্রমণ থেকে সুস্থ হলে ভবিষ্যতে আবারও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ, একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে স্থায়ীভাবে ইমিউনিটি তৈরি হয় না। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি সব সময়ই থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইরাল এপিডেমিওলজিস্ট রোজমেরি এ আওগো বলেন, ডেঙ্গু একটি বিধ্বংসী ভাইরাল সংক্রমণ। এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হচ্ছে। একে উড়ন্ত সুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়। একসময় ডেঙ্গু জ্বরকে ব্রেকবোন ফিভার নামে ডাকা হতো। ডেঙ্গুর ভাইরাল সংক্রমণের কারণে তীব্র মাথাব্যথা, উচ্চ জ্বর, বমি বমি ভাব, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ফুসকুড়ি হতে পারে। এখন আশ্চর্যজনকভাবে অনেক সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। গবেষণায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪ হাজার ৪৭৮ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ম্যালেরিয়া নির্মূলের ফর্মুলা আবিষ্কার
গবেষণার তথ্যমতে, ডেঙ্গু সংবেদনশীল ব্যক্তিদের বেশ প্রভাবিত করে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস—উভয়ই ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত। গত দশকে বড় ধরনের মহামারি সৃষ্টির জন্য ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাদিম রেজা বলেন, ডেঙ্গুর মাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে। গত কয়েক দশকের এডিস মশার সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, উষ্ণ তাপমাত্রায় এই মশা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি সময় ধরে তাদের বংশ বিস্তার করছে। এ ছাড়া উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে এই এডিস মশার বিচরণের ভৌগোলিক পরিসীমা বাড়ছে।
ডেঙ্গুর বিস্তারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে অতিবৃষ্টিকেও দায়ী করা হচ্ছে। অতি ও ঘনঘন বৃষ্টিপাত যত্রতত্র বৃষ্টির পানি জমা হতে সাহায্য করে যা মশার প্রজননে সহায়তা করে। সাধারণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাইরেও ডেঙ্গুর আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। গত গ্রীষ্মকালে ইতালি ও ফ্রান্সের কিছু অংশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু বহনকারী মশার পরিসর বিশ্বের নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, এই দশকের মধ্যে দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ ইউরোপ ও আফ্রিকার নতুন অংশে ডেঙ্গু একটি বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এডিস ইজিপ্টি মশার পরিসর বাড়ার কারণে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ডেঙ্গু মশাবাহিত সাধারণ ভাইরাস, যার কারণে বিশ্বব্যাপী বছরে ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রামিত হচ্ছেন।
সূত্র: মেডিকেল এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির কথা ১০ বছর আগে জানাবে এআই!