আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন ? দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষা দক্ষতার বিচারে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) এখন আর একমাত্র উপায় নয়। সময়-সাপেক্ষ নিরীক্ষণ পদ্ধতি, ব্যয়বহুল নিবন্ধনের কারণে এর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে বিকল্প পরীক্ষাগুলো।
সেই সঙ্গে যুগান্তকারী সুবিধা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তি-বান্ধব বৈশিষ্ট্য। পরীক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই সহজসাধ্য হওয়ায় নিমেষেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে নতুন পদ্ধতিগুলো। এমনি একটি পরীক্ষা ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট, যেটি ইতোমধ্যে অপরিহার্য যোগ্যতা হিসেবে চাওয়া হচ্ছে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক ডুওলিঙ্গো পরীক্ষা পদ্ধতি, আর কীভাবেই বা এতে অংশ নিবেন।
ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী
কাগজ-কলমে লিখিত পরীক্ষার গন্ডির বাইরে আদ্যোপান্ত সম্পর্ণূ ইন্টারনেট-ভিত্তিক ইংরেজি ভাষার প্রমিত পরীক্ষার নাম ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট (ডিইটি)। সঙ্গত কারণেই এখানে প্রয়োজন হয় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ এবং ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পিকার সমেত একটি ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার। শুধুমাত্র এই উপকরণগুলো থাকলেই পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময়েই অংশগ্রহণ করা যায় ডিইটি পরীক্ষায়।
আমেরিকান প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ডুওলিঙ্গোর ডিইটি চালু করে ২০১৬ সালে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
ডিইটি এমন একটি নিরীক্ষণ ব্যবস্থা, যেখানে পরীক্ষার্থীর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর যাচাইয়ের মাধ্যমে তার মেধাবৃত্তিক অবস্থানকে মূল্যায়ন করা হয়। বিগত প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তুলনামূলক ভাবে একটু কঠিন করে করা হয় নতুন প্রশ্নটি। আর এভাবেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগোতে থাকে পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি। স্বভাবতই এখানে ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অ্যালগরিদমের।
ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট পদ্ধতি
পরীক্ষার মোট সময়সীমা ১ ঘণ্টা। প্রশ্ন বাছাইয়ের জন্য ডুওলিঙ্গোর রয়েছে সমৃদ্ধ ডাটাবেস। তাই যতবারই পরীক্ষা দেওয়া হোক না কেন, একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ১ ঘণ্টা সময় বন্টিত থাকে পরস্পর থেকে ভিন্ন ধরনের প্রশ্নাবলি সম্বলিত ৩টি বিভাগে।
আরও পড়ুনঃ বিসিএস প্রিলিমিনারির বুক লিস্ট
প্রশ্ন বিন্যাস ও সময় বন্টন
ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড অনবোর্ডিং (বরাদ্দ সময় ৫ মিনিট)
এখানে কম্পিউটারের ক্যামেরা, স্পিকার এবং মাইক্রোফোন সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের যে কোনো একটি আপলোড করে জমা দিতে হবে। এরপর শুরু হবে পরীক্ষার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা।
অ্যাডাপ্টিভ টেস্ট (বরাদ্দ সময় ৪৫ মিনিট)
এটিই পরীক্ষা প্রধান অংশ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে ইংরেজি দক্ষতা পরিমাপ করা হয়। প্রতিটি প্রশ্ন কতটা কঠিন হবে তা নির্ভর করবে ঠিক আগের প্রশ্নে পরীক্ষার্থীর দেওয়া উত্তরের উপর।
রাইটিং স্যাম্পল অ্যান্ড স্পিকিং স্যাম্পল (বরাদ্দ সময় ১০ মিনিট)
এখানে যাচাই হবে ইংরেজি লিখতে ও কথা বলতে পারার দক্ষতা। কথা বলার নমুনার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য সময় পাওয়া যাবে ১ থেকে ৩ মিনিট। আর লেখার ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে ৩ থেকে ৫ মিনিট।
ডিইটি স্কোর পদ্ধতি
ইংরেজি ভাষার পারদর্শিতা মূল্যায়নের জন্য স্কোর করা হয় ১০ থেকে ১৬০ ডিইটি স্কেলে। এখানে ন্যূনতম ১২০ এর উপরে স্কোর থাকলে ইংরেজিতে দক্ষ বলে বিবেচিত হয়। পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলাফল পাওয়া যায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ পাঁচ দেশ হতে পারে গন্তব্য পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ
এই ফলাফলটি সামগ্রিক এবং সাবস্কোর এই ২ ভাগে সরবরাহ করা হয়। সামগ্রিক স্কোরে ফলাফল হিসেবে ১০ থেকে ১৬০-এর মধ্যে একটি সংখ্যা উল্লেখ থাকে। আর সাবস্কোরে ৪টি বিভাগে স্কোর দেখানো হয়। এগুলো হলো-
❁ কম্প্রিহেনশন (পড়া ও শোনার দক্ষতা)
❁ কনভারসেশন (শোনা ও কথা বলার দক্ষতা)
❁ লিটারেসি (পড়া ও লেখার দক্ষতা)
❁ প্রডাকশন (লিখতে ও কথা বলার দক্ষতা)
❁ প্রাপ্ত ফলাফল হিসেবে ডিইটি স্কোর বা গ্রেডের মেয়াদ থাকে ২ বছর।
বিশ্বব্যাপী ডুওলিঙ্গো (ডিইটি) পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা
ডিইটি স্কোর হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি) এবং ইয়েলসহ ৫ হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা হয়। আয়ারল্যান্ড তার স্টুডেন্ট ভিসা প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এই পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, কিংস্টন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন এবং মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির মতো স্বনামধন্য ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ডুওলিঙ্গো স্কোর গ্রহণ করে।
পরীক্ষার একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনলাইনে হওয়ায় এখানে আলাদা করে ভেন্যু ব্যবস্থাপনার ঝামেলা নেই। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটভিত্তিক পরীক্ষার স্কোর ট্র্যাক রাখাও সহজতর। সর্বসাকূল্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক কম প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
বাংলাদেশে ডুওলিঙ্গো পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের উপায়
ডিইটি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন
মাইক্রোফোন, স্পিকার ও ক্যামেরাসহ একটি কম্পিউটার
পরীক্ষায় কথা বলা, শোনা, পড়া ও লেখার জন্য প্রতিটি হার্ডওয়্যার ঠিক আছে কি না তা প্রথমেই টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যামেরা কম্পিউটার মনিটর বা স্ক্রিনের শীর্ষ এবং কেন্দ্রে থাকা উচিত। আর মাইক্রোফোন ও স্পিকারের সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো থাকা জরুরি।
বৈধ পরিচয়পত্র
প্রত্যয়িত ফলাফল পেতে হলে সরকার-প্রদত্ত ফটো আইডি প্রয়োজন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বৈধ পাসপোর্ট, জাতীয় স্মার্ট কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যে কোনোটি দিতে পারবেন।
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ
পরীক্ষা পুরো সময়টি ঝামেলাহীনভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ কোয়ালিটি নিম্নমানের হওয়া যাবে না। কমপক্ষে ২ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) ডাউনলোড গতি এবং ১ এমবিপিএস আপলোড গতি থাকা আবশ্যক। মোবাইল ডাটা ইন্টারনেটের বদলে তারযুক্ত ইথারনেট বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা উত্তম।
ডিইটি পরীক্ষার নিবন্ধন
প্রথমে englishtest.duolingo.com ওয়েবসাইটে যেয়ে ইমেইল ঠিকানা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এবার হোমপেইজ থেকে ‘পার্চেস দ্যা টেস্ট’ সেকশনের অধীনে ‘বাই নাউ’তে যেতে হবে। পরের পেইজে শিক্ষার্থীর নাম ও পরীক্ষার মূল্য পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হবে। তথ্যগুলো নির্ভুলভাবে দেওয়া হলেই সম্পন্ন হয়ে যাবে পরীক্ষা ক্রয়ের কাজ। এ সময় পরীক্ষার ফি বাবদ ৫৯ মার্কিন ডলার বা ৬ হাজার ৪৭০ দশমিক ৯০ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৬৮ বাংলাদেশি টাকা) অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
পরীক্ষা ক্রয়ের পর শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ ২১ দিন সময় পাবেন। এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ বার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
নিবন্ধন ও পরীক্ষা ক্রয়ের পরবর্তী কাজ হচ্ছে ডিইটি ডেস্কটপ অ্যাপ ইন্স্টল করা।
আরও পড়ুনঃ টোয়েফল পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
ডিইটি ডেস্কটপ অ্যাপ
পরীক্ষা কেনার সঙ্গে সঙ্গেই এই অ্যাপটি ডাউনলোডের অপশন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। অ্যাপটির সাইজ অনেক ছোট; ম্যাক (ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার)-এর জন্য ২৪১ এমবি (মেগাবাইট) এবং উইন্ডোজের জন্য ৪৯ এমবি। অ্যাপটি ইন্স্টল হয়ে যাওয়া মানেই পরীক্ষার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পালা।
ডুওলিঙ্গো (ডিইটি) পরীক্ষার সময় কিছু সতর্কতা
❁ পরীক্ষা দেওয়ার সময় প্রার্থীর নাম অবশ্যই তার পরিচয়পত্রের সঙ্গে হুবহু মিল থাকতে হবে।
❁ পরীক্ষার স্থানটি হতে হবে একদম শান্ত এবং তাতে যথেষ্ট আলো থাকতে হবে। পরীক্ষা দেওয়ার সময় কক্ষে শুধু পরীক্ষার্থী একা থাকবেন।
❁ ক্যামেরায় পরীক্ষার্থীর মুখমন্ডল ও কান অবশ্যই স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান হতে হবে। ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে মাথা আবৃত থাকতে পারে।
❁ হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করা যাবে না
❁ মোবাইল ডিভাইস, নোট, পাঠ্যপুস্তক ও বাইরের কোনো লেখা বা পড়ার উপকরণ সঙ্গে রাখার অনুমতি নেই
❁ প্রেডিক্টিভ টেক্স্ট ম্যাথড ব্যবহার করা নিষেধ। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যেমন ইংলিশ টাইপ করার সময় ‘ই’ ‘এন’ ‘জি’ টাইপ করলেই নিচে ইংলিশ টু বাংলা, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ, ইংলিশ গ্রামার-এর মতো অনেক সাজেশন আসে। এ রকম কোন সফ্টওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি নেই
❁ চোখ সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার স্ক্রিণে নিবদ্ধ রাখতে হবে
❁ কোনোভাবেই কিছু সময়ের জন্য হলেও কম্পিউটার ছেড়ে ওঠা যাবে না
❁ অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালিয়ে কম্পিউটারে অন্য কোনো কিছু চালু করারও অনুমোদন নেই। এমনকি পরীক্ষার উইন্ডোর পাশে নতুন ট্যাব বা নতুন উইন্ডো ওপেন করা যাবে না
❁ শুধুমাত্র একটি মনিটরই ব্যবহার করতে হবে। বিবর্ধিত বা ডুপ্লিকেট উপায়ে দুইটি স্ক্রিণ ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক পরীক্ষা হওয়ায় ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট প্রযুক্তি নির্ভর প্রজন্মের জন্য বেশ সহায়ক। ৩০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ বার পরীক্ষার সুযোগের পাশাপাশি ফলাফলের মেয়াদ থাকছে ২ বছর। পরীক্ষার ১ ঘণ্টা ব্যাপ্তি অন্যান্য ইংরেজি ভাষা দক্ষতা নিরীক্ষণ থেকে তুলনামূলকভাবে কম সময়ের। উপরন্তু উন্নত বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রহণযোগ্যতা থাকায় সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তার জায়গা তৈরি করেছে ডুওলিঙ্গ।
তবে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীকে স্পষ্টভাবে দেখতে ও শুনতে পারার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ব্যবস্থাগুলোর প্রতি সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া একটানা ১ ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকতা থাকাটাও জরুরি।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি
❑ শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ ঢাবির নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান