আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ‘ডিপফেক’ এআইয়ের আরেক ফাঁদ, যেভাবে বুঝবেন এটা ভুয়া । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। সব কিছুতেই এআইয়ের ছোঁয়া। এআই দিয়ে ইচ্ছামতো ছবি, ভিডিও বানাতে পারবেন। গুগল নিয়ে এলো নতুন এআই টুল। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি যে কোনো ছবি বানিয়ে নিতে পারবেন।
তবে এআইয়ের ভিন্ন এক রুপও দেখে ফেলেছে বিশ্ববাসী। কীভাবে অন্যদের হেয় করা হচ্ছে এআইয় দিয়ে তৈরি ছবি এবং ভিডিও দিয়ে। সম্প্রতিদক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মন্দানার ভুয়া একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যা তৈরি হয়েছে ডিপফেক দিয়ে।
এটি প্রথম নয়, এর আগে একই পদ্ধতি ব্যবহার করে বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভুয়ো ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছিল। একইভাবে মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গের ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়, পরে জানা যায় ভিডিওটি ভুয়া ছিল। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটে মোট ১৫ হাজার এমন ভিডিও রয়েছে বলে দাবি করেছে এআই সংস্থা ডিপট্রেস্।
ডিপফেক এআই আসলে এআইয়ের একটি ধরন। ছবি, অডিও এবং ভিডিও তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই প্রযুক্তি। ডিপফেক এআইকে ‘একুশ শতকের ফটোশপিং’ বলা হয়ে থাকে। এক্সিসটিং সোর্সকে সরিয়ে বা সোয়াইপ করে নতুন কিছু বসাতে পারদর্শী এই প্রযুক্তি। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে আপনার মুখের জায়গায় অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে অন্য কোনো ব্যক্তির মুখ।
আরও পড়ুনঃ নির্ভুলভাবে ক্যানসার শনাক্ত করবে এআই
এআই নির্ভর এই প্রযুক্তি শুধু ভিডিও নয়, ফেক প্রোফাইলের ছবি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। লিঙ্কডিনে ব্লুমবার্গের নামে এক ভুয়া সাংবাদিকের প্রোফাইল তৈরিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল সাইবার অপরাধীরা। ২০১৭ সালে প্রথম এই ধরনের ভিডিওর সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। জৈনক এক ব্যবহারকারী হলিউডের তিন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ছবিতে এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। গ্যাল গ্যাডট, টেয়লর সুইফট এবং স্কারলেট জনসনের ছবিতে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন ওই ইউজার।
ডিপ লার্নিং অ্যালগোরিদমস্ ব্যবহার করা মেশিনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়। এনকোডারের মতো এআই অ্যালগোরিদমের সাহায্যে ইন্টারনেট থেকে হাজার হাজার মুখ স্ক্যান করে খুঁজে আনতে সক্ষম এটি। সাধারণত, এই ধরনের স্ক্যানিংয়ের সময় মুখের বিভিন্ন ফিচার্স ম্যাচ করেও দেখতে পারে এই এআই।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল ব্যবহার করে তৈরি এসব নকল ভিডিও চেনার কিছু উপায় রয়েছে। নিরাপদ থাকতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভিডিও শনাক্তের পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক—
ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির শারীরিক গঠন ও মুখের অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ
‘ডিপফেক’ ভিডিও চেনার জন্য প্রথমেই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির শারীরিক গঠন, বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়ানোর ভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ভিডিও নিখুঁতভাবে তৈরি করতে পারে না। আর তাই কোনো ভিডিওর বিষয়ে সন্দেহ হলে সেখানে থাকা মানুষের নাক, কান, পা ও হাতের গড়ন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মুখের সঙ্গে ঠোঁট নাড়ানোর অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেলেই বুঝতে হবে যে ভিডিওটি নকল।
স্মার্ট টুল ব্যবহার
ডিপফেক ভিডিও পরীক্ষা করার জন্য অনলাইনে বেশ কিছু টুল রয়েছে। এসব টুল ব্যবহার করেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভিডিও দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে।
কথা বলার সময় ঠোঁটের নড়াচড়া মিলছে তো
কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির ঠোঁট মিলছে কি না, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বেশির ভাগ সময় ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা সম্ভব। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিপফেক ভিডিওতে কথা বলার সময় ঠোঁট মেলে না। এ ছাড়া কণ্ঠস্বর ওঠানামা করলেও বুঝতে হবে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওর উৎস যাচাই
ডিপফেক ভিডিওগুলো সাধারণত অপরিচিত বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা হয়। আর তাই যেকোনো ভিডিও সম্পর্কে সন্দেহ হলেই সেটির উৎস সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে কি
ভিডিওতে অস্বাভাবিক কোনো দৃশ্য থাকলে সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিডিও চলার সময় হঠাৎ করে কোনো অংশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কি না, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে ভিডিওতে থাকা দৃশ্য বা আশপাশে থাকা ব্যক্তির চেহারা বা বিভিন্ন বস্তুর গড়ন বিকৃতভাবে দেখা যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে।
সূত্র: নিউজ ১৮ ডটকম
আরও পড়ুনঃ ‘এআই’ বছরের সেরা শব্দ নির্বাচিত