আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: ডিজিটাল বাংলাদেশ: স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা । আজকের আধুনিক বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশও। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়েছিল, তা আজ অনেকটাই বাস্তবায়িত। আজকের এই পর্বে, আমরা আলোচনা করব ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের সফলতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ কীভাবে প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিটি খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান উন্নয়ন করা এবং জনগণের জন্য সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অবকাঠামো এবং সেবাকে শক্তিশালী করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ: কিভাবে শুরু হয়েছিল?
২০১০ সালে তৎকালীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ই-গভর্নমেন্ট, ই-লার্নিং, ই-ফিন্যান্সিং, এবং ই-হেলথ। সরকার তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন শুরু করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
✪ প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী
✪ স্বাধীনতা তথ্য অধিকার আইন
✪ ই-গভর্নমেন্ট সেবা কেন্দ্র
✪ বেসিস (BASIS) এর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন
প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন
ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশের বিভিন্ন খাতে যে পরিবর্তন এসেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
১। ই-গভর্নমেন্ট:
এখন সরকারি সব সেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, যেমন ট্যাক্স রিটার্ন, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট আবেদন ইত্যাদি। এটি সেবাগ্রহীতাদের জন্য সময় ও অর্থের সাশ্রয় করেছে।
২। বিকাশ, রকেট, নগদ—ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সেবা:
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দেশের জনগণ সহজেই টাকা পাঠাতে, পেমেন্ট করতে, টাকা উত্তোলন করতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে।
৩। ই-হেলথ সেবা:
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যখাতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এখন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব। রোগী ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারে।
৪। ই-লার্নিং:
শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সময় ও স্থান বাধা ছাড়াই নিজেদের জ্ঞান বাড়াতে পারছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা যদিও সফল, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সমাধান করা জরুরি। সেগুলো হল:
১। ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধি:
দেশের সব জায়গায় সমানভাবে উচ্চমানের ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা অনেকটাই সীমিত।
২। প্রযুক্তি শিক্ষা:
দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজন আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ও কোর্সের সুযোগ।
৩। ডিজিটাল দারিদ্র্য:
দেশের কিছু অংশের মানুষ এখনও প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হতে পারছে না। তাদের জন্য সাশ্রয়ী প্রযুক্তি সেবা পৌঁছানোর কাজটি আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশ প্রযুক্তির দিক থেকে অনেকটা এগিয়েছে। তবে এখনো অনেক দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। ভবিষ্যতের ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে সবার জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য।
আরও পড়ুন:
❒ মেশিন লার্নিং: যখন যন্ত্র নিজে থেকে শেখে
❒ তথ্য প্রযুক্তির যুগে কীভাবে শুরু হলো আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা
❒ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ
সরকারের লক্ষ্য এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ৪.০’ এর দিকে যেতে, যেখানে উন্নত প্রযুক্তি যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ব্লকচেইন, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ৫G প্রযুক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে আরও কার্যকর ও উন্নত করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও শক্তিশালী হবে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণও যেন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন হয়ে ওঠে, তাহলেই আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
❖ আইসিটি স্টেশন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ক্লাউড কম্পিউটিং: আপনার তথ্য এখন মেঘে ভেসে বেড়ায়!