আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: ডার্ক ওয়েব কি? জানুন ইন্টারনেটের অদৃশ্য ও বিপজ্জনক দুনিয়া । ইন্টারনেট মানেই কি শুধু গুগল, ফেসবুক আর ইউটিউব? না! ইন্টারনেটের বিশাল জগতে একটা গোপন অংশ রয়েছে যা আমরা সাধারণভাবে দেখতে বা ব্যবহার করতে পারি না। সেটাই হলো ডার্ক ওয়েব (Dark web)। অনেকেই একে রহস্যময় ও ভয়ংকর মনে করেন। এই লেখায় জানাবো — ডার্ক ওয়েব কি, কিভাবে কাজ করে, এতে কি পাওয়া যায়, আর কেন এটি নিয়ে সবাই এত সতর্ক।
ডার্ক ওয়েব কি?
ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের এমন একটি অংশ যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না এবং সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে এক্সেস করা যায় না। বিশেষভাবে তৈরি নেটওয়ার্ক যেমন টর (Tor) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হয়। এটি একটি লুকানো অংশ, যেখানে অনেক আইনি এবং অবৈধ কার্যক্রম চলে।
► যেমন, আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, প্রাইভেট ডেটা, বা পেইড কনটেন্ট – এগুলোও Deep Web-এর অন্তর্ভুক্ত।
► কিন্তু ডার্ক ওয়েব হচ্ছে সেই জায়গা, যেখানে এক্সেস পেতে বিশেষ ব্রাউজার লাগে, যেমনঃ Tor Browser ।
১। ডার্ক ওয়েব কিভাবে কাজ করে?
বিশেষ ব্রাউজার: ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য টর (Tor) ব্রাউজার ব্যবহার করা হয়। টর ব্রাউজার ব্যবহারকারীর আইপি ঠিকানা এবং অবস্থান গোপন করে, যা ব্যবহারকারীদের পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করে।
এনক্রিপশন: ডার্ক ওয়েবে তথ্য আদান-প্রদান এনক্রিপ্ট করা হয়, যা ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখে।
ওভারলে নেটওয়ার্ক: ডার্ক ওয়েব একটি ওভারলে নেটওয়ার্ক, যা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু অ্যাক্সেস করার জন্য বিশেষ সফ্টওয়্যার বা কনফিগারেশনের প্রয়োজন হয়।
সার্ভিস: ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন সার্ভিস উপলব্ধ, যেমন – মেইল সার্ভিস, চ্যাট সার্ভিস, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে।
অন্যান্য তথ্য:
► ডার্ক ওয়েব শুধুমাত্র অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা হয় না। অনেক সময় সাংবাদিক এবং অ্যাক্টিভিস্টরা তাদের কাজ করতে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে, যেখানে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারেন।
► ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার আগে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি অনেক বিপজ্জনক হতে পারে।
► ডার্ক ওয়েবে প্রচুর অবৈধ সামগ্রী এবং কার্যকলাপ রয়েছে, তাই এটি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
২। ডার্ক ওয়েবে কি থাকে?
ডার্ক ওয়েবে এমন সব বিষয়বস্তু থাকে যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা সূচিত হয় না এবং অ্যাক্সেস করার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার বা কনফিগারেশনের প্রয়োজন হয়। এখানে আইনি ও অবৈধ উভয় ধরনের কার্যকলাপ চলে, কিন্তু বিশেষ করে অবৈধ কার্যকলাপ যেমন – মাদক কেনাবেচা, অস্ত্র বিক্রি, অবৈধ ছবি-ভিডিও, এবং অনলাইন অ্যাকাউন্ট কেনাবেচার মতো বিষয়গুলি বেশি দেখা যায়.
ডার্ক ওয়েব আসলে ইন্টারনেটের একটি লুকানো অংশ, যা ডিপ ওয়েবের (Deep Web) একটি অংশ, যা সারফেস ওয়েব থেকে আলাদা. সারফেস ওয়েব হলো সেই অংশ যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা সূচিত হয়, যেমন – গুগল, ফেসবুক ইত্যাদি. ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য বিশেষ ব্রাউজার যেমন টর (Tor) ব্যবহার করতে হয়, যা ব্যবহারকারীদের নাম প্রকাশ না করার সুযোগ দেয়, কিন্তু এটি স্ক্যাম এবং অবৈধ সামগ্রীর মতো ঝুঁকিও তৈরি করে.
ডার্ক ওয়েবে কি থাকতে পারে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
অবৈধ কার্যকলাপ: মাদক কেনাবেচা, অস্ত্র বিক্রি, জালিয়াতি, এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ।
অস্বাভাবিক ছবি-ভিডিও: বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক ছবি ও ভিডিও যা সাধারণত পাওয়া যায় না।
অনলাইন অ্যাকাউন্ট কেনাবেচা: হ্যাক করা বা অবৈধভাবে তৈরি করা অনলাইন অ্যাকাউন্ট কেনাবেচা করা হয়।
রাজনৈতিক বা সামাজিক তথ্য: বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সামাজিক আন্দোলনের জন্য গোপন তথ্য ও যোগাযোগ।
বিভিন্ন সফটওয়্যার: বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার বা টুলস যা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে না
গোপন বাজার: বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচা, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে
৩। কেন ডার্ক ওয়েব বিপজ্জনক?
ডার্ক ওয়েব বিপজ্জনক কারণ এটি মূলত একটি এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্ক, যেখানে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপ ও বিপজ্জনক সাইট রয়েছে. এখানে সাধারণত ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, এবং বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম দেখা যায়, যা
ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন করে.
ডার্ক ওয়েবের বিপদগুলো:
ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস: ডার্ক ওয়েবে ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে, যা ব্যবহারকারীদের ডিভাইস এবং ডেটার জন্য ক্ষতিকর।
প্রতারণা ও জালিয়াতি: ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, যেখানে ব্যবহারকারীদের অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
অবৈধ কার্যকলাপ: ডার্ক ওয়েব অবৈধ কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে মাদক, অস্ত্র, এবং অন্যান্য অবৈধ জিনিসপত্রের ব্যবসা করা হয়।
গোপনীয়তা লঙ্ঘন: ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, যা তাদের অনলাইন কার্যকলাপকে ঝুঁকিপূর্ণ করে।
শ্লীলতাহানি ও বিপজ্জনক কনটেন্ট: ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরণের শ্লীলতাহানি ও বিপজ্জনক কনটেন্ট দেখা যায়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য মানসিক আঘাতের কারণ হতে পারে।
হুমকি ও ব্ল্যাকমেল: ডার্ক ওয়েবে হ্যাকার ও অপরাধীরা ব্যবহারকারীদের হুমকি ও ব্ল্যাকমেল করতে পারে, যা তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
শিশুদের জন্য বিপদ: ডার্ক ওয়েবের বিপজ্জনক কনটেন্ট ও অবৈধ কার্যকলাপ শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তারা সহজে এসব সাইট ও কনটেন্টের শিকার হতে পারে।
৪। ডার্ক ওয়েব থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন?
ডার্ক ওয়েবে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন: ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার সময় Tor ব্রাউজার ব্যবহার করুন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং মাল্টি-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ চালু করুন. এছাড়াও, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হয়ে গেলে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যেমন – অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা, নিরাপত্তা প্রশ্ন আপডেট করা এবং দ্বি-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ ব্যবহার করা.
ডার্ক ওয়েবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়:
Tor ব্রাউজার ব্যবহার করুন: ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করার জন্য টর ব্রাউজার ব্যবহার করা উচিত, কারণ এটি আপনার IP ঠিকানা এবং লোকেশন গোপন রাখতে সাহায্য করে।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: প্রতিটি অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
মাল্টি-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ (MFA) ব্যবহার করুন: আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টে MFA সক্রিয় করুন, যা আপনার অ্যাকাউন্টকে আরও সুরক্ষিত করে।
সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করুন: আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে থাকলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন: যদি আপনি মনে করেন যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হয়ে গেছে, তাহলে অবিলম্বে আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং MFA চালু করুন।
ডার্ক ওয়েবে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা: ডার্ক ওয়েবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
ডার্ক ওয়েবে কোনো অবৈধ কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকুন: ডার্ক ওয়েবে কিছু অবৈধ কার্যকলাপ হতে পারে, যা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশেষ টিপস:
► ডার্ক ওয়েবে কিছু সাইট রয়েছে যেখানে অবৈধ বা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
► ডার্ক ওয়েবে কোনো লেনদেন করার আগে ভালো করে যাচাই করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি কোনো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না।
► ডার্ক ওয়েবে কোনো সাইট থেকে কোনো ফাইল ডাউনলোড করার আগে ভালো করে যাচাই করুন এবং নিশ্চিত করুন যে ফাইলটি ক্ষতিকারক নয়।
ডার্ক ওয়েব এক রহস্যময় জগত, যেখানে বৈধ ও অবৈধ উভয় কার্যক্রম চলে। এটি প্রযুক্তিগতভাবে চমৎকার হলেও, এর অপব্যবহার মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের উচিত এর থেকে দূরে থাকা এবং সচেতন থাকা যেন তাদের তথ্য কখনও এখানে না পড়ে।
🔒 সাইবার নিরাপত্তা থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা: তথ্য রক্ষায় অদৃশ্য যুদ্ধ