আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: টয়লেট টিস্যু আবিষ্কার হলো কিভাবে । টয়লেট টিস্যু বা টয়লেট পেপার যে নামেই বলুন না কেন দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য জিনিস এটি। খাবারের শেষে, কপালের ঘাম মুছতে, হাতমুখ ধোয়া শেষে টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ না মুছলে যেন চলেই না।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক জায়গা থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত টিস্যু পেপার এনেছে বড় পরিবর্তন। পরিচ্ছনতার ধারণা বদলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনেছে নতুন মাত্রা।তবে মলমূত্র ত্যাগের পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য টয়লেট টিস্যুর বিকল্প আর কিছুই নেই।
জানেন কি, টয়লেট পেপার কীভাবে আবিষ্কার হলো? এর আগে মানুষ কি ব্যবহার করতো, কীভাবে নিজেদের পরিষ্কার রাখত? প্রতিবছর ২৬ আগস্ট টয়লেট পেপার দিবস পালিত হয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় এই জিনিসটির কথা মনে করেই এই দিবসটি রাখা হয়েছে।
টয়লেট টিস্যু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় আমেরিকায়। তবে এই টয়লেট টিস্যু আবিষ্কার হয়েছিল সুদূর চীনে। ৮৫১ সালের দিকে চীনে প্রথম টয়লেট টিস্যুর ব্যবহার শুরু হয়েছে বলেও শোনা যায়। তবে আরেকটি ব্যাপার শোনা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকের দিকে সর্বপ্রথম শৌচকাজে এক ধরনের নরম কাগজ ব্যবহার করত। যদিও তার সঠিক প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুনঃ ফিঙ্গারপ্রিন্টের আবিষ্কারক বাংলাদেশী আজিজুল হক
টয়লেট পেপারের আবির্ভাবের আগে, কমপক্ষে ৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত, রোমানরা নিজেদেরকে উপশম করার পর টেরসোরিয়াম (এক ধরনের স্পঞ্জ) দিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করত। এর আগে গ্রীক এবং রোমানরা ওভাল বা বৃত্তের আকারে গোলাকার সিরামিক টুকরা ব্যবহার করত। যেগুলোতে লেখা থাকত তাদের শত্রুদের নাম। এই সিরামিকের টুকরোকে বলা হত পেসসোই।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গ্রীক এবং রোমান সাম্রাজ্যের পাওয়া বিভিন্ন নথি থেকে এটি আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি একবার একটি গুহায় পাওয়া যায় সেই সময়কার মানুষের মল। যা পরীক্ষার পর পেসোইয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
সেই সময়কার মানুষেরা সিরামিকের টুকরোর উপরে তাদের শত্রুদের নাম খোদাই করে লিখত। এরপর তা ব্যবহার করত টয়লেট পেপার হিসেবে। এমনকি পাবলিক টয়লেটগুলোতে তারা পেসসোই রেখে দিত।
আরও পড়ুনঃ গুগলের সেরা বিজ্ঞানী বাংলাদেশী তাসিফ খান
যেই এই টয়লেট ব্যবহার করবে সেই তার শত্রুর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারল বলে ভেবে নিতে পারবে। অর্থাৎ এটিও তাদের এক ধরনের যুদ্ধ বলা যায়। শত্রুর বিরুদ্ধে কিছু করা।
অষ্টম শতাব্দীর দিকে জাপানীরা তাদের মলদ্বারের বাইরের এবং অভ্যন্তর পরিষ্কার করার জন্য এক ধরণের কাঠের কাঠি ব্যবহার করত। যেটার নাম ছিল চুগি। এছাড়াও পানি, পাতা, ঘাস, পাথর, পশুর চামড়া এবং ঝিনুক ব্যবহার করত। এটি ছিল প্রাচীনকালের মানুষের কথা। আর মধ্যযুগে মরিসন জাতিরা ব্যবহার করত শ্যাওলা, গাছের ছাল, খড়, এবং কাপড়ের টুকরো।
ইতিহাস বলছে, ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে চীনে টয়লেট পেপার ব্যবহার করার রীতি চালু ছিল। যেহেতু বিশ্বে প্রথম কাগজ তৈরি হয় চীনে। স্বাভাবিক কারণে শৌচকর্মে ব্যবহার করার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় কাগজও সে দেশেই সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনঃ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং: অ্যান্টিবায়োটিকের মহানায়ক
চতুর্দশ শতকে মিং বংশের শাসনকালে চীনের রাজ প্রাসাদে এই কাগজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়। ১৩৯৩ সালে শুধু রাজ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার টুকরো টয়লেট পেপার দরকার হত। প্রতিটি টুকরোর মাপ ছিল ৬০ সেমি X ৯০ সেমি।
এটি ১৮৫৭ সালে টয়লেট পেপার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হতে শুরু করে। জোশেফ গোয়েত্তি সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক টয়লেট টিস্যু উদ্বোধন করেন। প্রথম টয়লেট পেপার ছিল কাগজের আলগা সমতল শীট। কিন্তু এটি দামে অনেক বেশি হওয়ায় তার প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে ১৮৯০ সালে স্কট পেপার কোম্পানি টিস্যুকে রোল করে আকর্ষণীয় মোড়কে বাজারজাত শুরু করলে এটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৩০ সালে, জার্মানরা ছিদ্রযুক্ত রোলগুলো আবিষ্কার করেছিল যা বর্তমানে আমরা ব্যবহার করছি। ১৯৬০ এর দশকে, টয়লেট পেপার বিভিন্ন রঙে এসেছিল, বিশেষ করে গোলাপী এবং সবুজ রঙে বাথরুমের রঙের সঙ্গে মেলে।
২০০০ সালের গোড়ার দিকে, রঙিন টয়লেট পেপার রোলগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। শুধু সাদা রঙে টিস্যু বানাতে থাকে কোম্পানিগুলো। তবে এখনও বিশ্বের কিছু দেশে সাদার পাশাপাশি গোলাপি রঙের টয়লেট টিস্যু পাওয়া যায়।
সূত্র: হিস্টোরি ডটকম
❑ আবিষ্কার ও আবিষ্কারক থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম ভাসমান ট্রেনের আবিস্কারক