জ্বলছে সব জ্বলছে
রাতের আকাশের বুকে চাঁদ বা তারা জ্বললে কারো অখুশি হওয়ার কথা নয়। বরং ভাবুকরা নিষ্পলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, লেখে ছড়া, কবিতা, গান। প্রেমিক-প্রেমিকারাও জ্যোৎস্না জ্বলা রাতে রোমান্টিকতার ভিন্ন মাত্রা খঁজে পায়, দিনের বেলায় সূর্য নিজে জ্বলে সবাইকে আলো দেয়।
বয়সের স্বল্পতার কারণে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার গদিতে আগুন জ্বলানোর দৃশ্য দেখতে পারিনি। তবে দুই নেত্রীর জ্বালাময়ী (?) বক্তৃতা শুনে, যে তাদের কর্মী বাহিনী জ্বলে উঠে তা দেখেছি। নেত্রীদ্ব যখন একে অপরের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয় তখন তাদের কর্মী বাহিনী শ্লোগান ধরে ‘ অমুকের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’ ।
কিন্তু তারা গদির নাগাল না পেয়ে বাস, ম্যনিবাস, মাইক্রোবাস ও ট্যাক্সির গদিতে ঠিকই আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এসব আগুন জ্বালাতে পেরে কর্মী বাহিনীকে উল্লাসিত হতে দেখেছি। আবার এসব পরিবহনের মালিকদের ক্ষোভে দুঃখে নিজেরে মাথার চুল ছিঁড়তে দেখেছি।
আরও পড়ুনঃ প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগের শিক্ষা
এখন দেশে চলছে ক্ষমতার লড়াই – এক জন চায় ক্ষমতা ধরে রাখতে আর অন্য জন চাচ্ছে ক্ষমতায় যেতে। তাই নেত্রীদ্ব একে অপরের বিরুদ্ধে লাগামহীনভাবে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ জ্বালময়ী বক্তৃতা কি কোন দিন শেষ হবে?
ছোট বেলায় যখন মাইকে গান শুনতা- ‘জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন নিভাইয়া গেলা না’ তখন ভাবতাম, কেন এক বালতি ঠান্ডা ঢাললেই তো আগুন নিভে যায়, এজন্য গান বানিয়ে দুনিয়া শুদ্ধ লোককে জানানোর দরকার কি?
ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিক-প্রেমিকার জ্বলে হৃদয়। ব্যর্থ প্রেমিক আবার ক্ষুদ্ধ হয়ে এসিডে জ্বালিয়ে দেয় প্রেমিকার সুন্দর মখ। স্কুল কলেজগামী মেয়েদের জ্বালায় উঠতি ধরনের মাস্তান ছেলেরা।
দুষ্ট ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে জ্বালায় যখন তখন বায়না ধরে, দুষ্টুমি করে। আবার অনেক বাবা-মাও ছেলেমেয়েদের জ্বালায় ডেটিং এর সময় বাসার বাহিরে বেরোনোর বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ না করে।
আরও পড়ুনঃ এই করুন মৃত্যুই যদি বঙ্গবন্ধুর ভাগ্যে ছিল তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিল না
অনেকের হাত জ্বলে, পা জ্বলে, মাথার চান্দি জ্বলে, বুক জ্বলে, পেট জ্বলে। মিছিলে গেলে টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজে এবং টেম্পোতে উঠলে ভেজাল পেট্রোলের ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে।
মার্কেটে গেছেন, রঙ্গিন কাপড় কিনলেন দু’দিন পর যদি রং জ্বলে যায় তাহলে দোকানীর প্রতি আপনিও রাগে জ্বলতে থাকবেন।
তবে সবচেয়ে বড় জ্বালা হচ্ছে মনের জ্বালা। তা মোমের আগুন নয়, গ্যাসের আগুন নয়, লাকড়ির আগুন নয়, একেবারে তুষের আগুনের মত, ধিকি ধিকি করে জ্বলে যা দেখা যায় না, দেখানোও যায় না শুধুই অনুভব করা যায়।
লেখকঃ কবীর হুমায়ুন
❑ মুক্তকলাম থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ কীভাবে হবেন একজন ভালো মানুষ?