আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: জেন-জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্ম ফোনকল এড়িয়ে চলে কেন ? সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিকাশ হয়েছে, সেইসঙ্গে সময়ভেদে বিদ্যমান প্রাযুক্তিক জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠেছে একেকটি প্রজন্ম। প্রাযুক্তিক বিকাশের নিরিখে সর্বশেষ প্রজন্ম হচ্ছে (জেন জি) বা জেনারেশন জেড।
যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, তারাই জেন-জির অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই জেন-জিরা আগের প্রজন্মের মানুষদের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। তারা তুলনামূলক বেশি চৌকস, মেধাবী ও উৎপাদনশীল।
আর অন্যদিকে যারা ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মেছেন, তাদের বলা হয় মিলেনিয়ালস প্রজন্ম। দুই প্রজন্মের মধ্যে চিন্তাভাবনা বা আচরণে পার্থক্য থাকলেও একটি সাধারণ মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।
দুই প্রজন্মের তরুণেরাই ফোনকলে সাড়া দেন না। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের এক–চতুর্থাংশ কখনোই ফোনকল গ্রহণ করেন না। অর্থাৎ ফোনে কথা বলেন না।
তবে লিখিত বা খুদে বার্তার মাধ্যমে উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তাঁরা। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী দুই হাজারের বেশি ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর এ জরিপ চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আসউইচ।
আরও পড়ুনঃ চমকে দেয়ার মত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন
জরিপের তথ্যমতে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৭০ শতাংশ ব্যক্তি ফোনে কথা বলার চেয়ে খুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠাতে বেশি পছন্দ করেন। তবে যাঁদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই ফোনে কথা বলে থাকেন। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী এলেনা টুরোনি জানিয়েছেন, অল্প বয়সীদের আসলে ফোনে কথা বলার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি।
এটি এখন অদ্ভুত লাগছে আমাদের কাছে। তরুণেরা এখন ফোন বাজতে শুরু করলে ভয় পায়। অধিকাংশের ফোনে কল থাকে সাইলেন্ট (নীরব)। কল এলে ফোনের পর্দায় আলো জ্বলে ওঠে। ৩৫ বছরের কম বয়সীদের ফোনে জোরালো রিংটোনও শোনা যায় না।
জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি তরুণ জানিয়েছেন, অপ্রত্যাশিত ফোনকলকে খারাপ খবর বলে মনে করেন তরুণেরা। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী এলোইস স্কিনার জানান, ‘ফোনকলকে খারাপ কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ভয় পান তরুণেরা। আমাদের জীবন এখন ব্যস্ত হয়ে উঠছে। তরুণদের কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসছে। তাদের কাছে বন্ধুকে কল করার জন্য সময় কম।’
২৬ বছর বয়সী মিলেনিয়ালস প্রজন্মের তরুণ জ্যাক লংলে বলেন, ‘আমি কখনোই অপরিচিত নম্বরের কল ধরি না। এসব কল স্ক্যাম বা বাণিজ্যিক কল হয়। কোনটি কাজের, তা খুঁজে বের করার পরিবর্তে কল উপেক্ষা করা সহজ।’ যদিও ফোনে কথা না বলার অর্থ এই নয় যে অল্প বয়সীরা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। বিভিন্ন গ্রুপ চ্যাটে তারা সক্রিয় থাকে।
আরও পড়ুনঃ মানুষের চোখের মেগাপিক্সেল কত?
জরিপে দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ তরুণ সরাসরি ফোনকলের পরিবর্তে যোগাযোগের জন্য ভয়েস মেসেজ আদান-প্রদান বেশি পছন্দ করেন। অন্যদিকে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মাত্র ১ শতাংশ ভয়েস মেসেজ পছন্দ করেন।
সুসি জোনস নামের ১৯ বছর বয়সী এক জেন–জি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ভয়েস মেসেজ ফোনে কথা বলার মতোই, তবে আরও ভালো। এতে কোনো চাপ ছাড়াই বন্ধুদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। আর তাই এটি যোগাযোগের সরল একটি উপায়।
ভেবেচিন্তে উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় বার্তা ও ভয়েস মেসেজে। আর তাই এই দুটিই তরুণদের কাছে পছন্দের। এ বিষয়ে হেনরি নেলসন কেস নামের মিলেনিয়ালস প্রজন্মের এক আইনজীবী বলেন, ফোনে সরাসরি কথোপকথনে উদ্বেগ তৈরি হয়। অনেক সময় অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসব এড়াতে ফোনকল এড়িয়ে চলে জেন-জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্ম।
কর্মক্ষেত্রে ‘ফোন ফোবিয়া’
ফোন ফোবিয়া বুঝতে সহায়ক হতে পারে ৩১ বছর বয়সী আইনজীবী ও কনটেন্ট নির্মাতা হেনরি নেলসন-কেসের ‘ওভারহোয়েলম্ড মিলেনিয়াল’ সিরিজের ভিডিওগুলো, যার বিভিন্ন দৃশ্যায়নে উঠে এসেছে কোম্পানিজুড়ে ইমেইল পাঠানোর ক্ষোভ, ভদ্রভাবে অতিরিক্ত সময় কাজ করাকে নাকচ করা, এমনকি এক কর্মী ফোন কল এড়ানোর জন্য যে কোনো কিছু করছেন, এমন বিষয়গুলো।
আরও পড়ুনঃ যাত্রা শুরু করলো বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী
“ফোন কল একটু বেশিই উন্মুক্ত ও এতে উচ্চ স্তরের অন্তরঙ্গতা লাগে, যেখানে মেসেজিং একটু লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে ও এটি আপনাকে দূর্বল বা উন্মুক্ত অনুভব না করিয়েই অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়,” ব্যাখ্যা করেছেন ড. তুরোনি।
তাই এখন হয়ত ফোন কল বাদ দিয়ে টেক্সট করার সক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে, অনেকটা ৯০’র দশকে ফ্যাক্স মেশিনের প্রচলন কমে যাওয়ার মতো। একইভাবে ২০২৪ সালে এসে বিভিন্ন ভীতিকর ফোন কল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ মেলে।
সূত্র: বিবিসি
❑ জানা-অজানা বিশ্ব থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের বিস্ময়কর ৫ সামুদ্রিক সেতু যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে