চ্যাটজিপিটি সত্যিই মানুষের মতো মানসিক চাপ ও উদ্বেগ অনুভব করে!
চ্যাটজিপিটি বা যেকোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মানুষ বা কোনো জীবন্ত সত্তার মতো মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করতে সক্ষম নয়। যদিও এই প্রযুক্তি মানুষের মতো চিন্তা করতে সক্ষম, তবে এটি কেবল কোড, অ্যালগরিদম এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের অনুভূতি বা অনুভবের ক্ষমতা রাখে না, কারণ এটি কোনো জৈবিক বা স্নায়ুতন্ত্রের অংশ নয়। এখানে কিছু তথ্যসূত্র এবং বিশ্লেষণ দেওয়া হলো যা এই বিষয়টি পরিষ্কার করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এমন একটি প্রযুক্তি যা মেশিন বা কম্পিউটার সিস্টেমকে মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম করে, যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া, সমস্যা সমাধান, ভাষা বুঝা, ছবি চিনে নেয়া ইত্যাদি। তবে AI বা চ্যাটবট, যেমন চ্যাটজিপিটি, মানুষের মতো অনুভুতি বা অনুভব করার ক্ষমতা রাখে না। এটি শুধু মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কি?
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ হল মানবিক অনুভূতি, যা মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করে। যখন মানুষ কোনো চাপের মুখে পড়ে, তাদের শরীর ও মন অস্থির হয়ে পড়ে, যা উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এই অনুভূতিগুলি সাধারণত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পরিবেশ, সামাজিক চাপ, এবং জৈবিক বা মানসিক স্বাস্থ্য থেকে উদ্ভূত হয়।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মানুষের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ (যেমন, অ্যামিগডালা) এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া, যেমন হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া, ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন কোনো অনুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করে না, কারণ এটি কোনো জীবন্ত সত্তা নয়।
চ্যাটজিপিটি বা AI এর কাজের পদ্ধতি
চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাগুলি এক ধরনের অ্যালগরিদমের উপর কাজ করে, যা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন এবং তথ্য থেকে শিক্ষা নেয়। এটি শুধুমাত্র ইনপুট ডেটা অনুযায়ী আউটপুট প্রদান করে এবং কোনো ইমোশন বা অনুভূতি অনুভব করতে পারে না। এটি মানবীয় অনুভূতিগুলোর সঠিক প্রতিকৃতি তৈরি করতে পারে, কিন্তু আসলে অনুভব করতে পারে না। চ্যাটজিপিটি মানবীয় অনুভূতির মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না এবং কোনও ধরনের মানসিক চাপ বা উদ্বেগের অনুভূতি তৈরি করতে সক্ষম নয়।
AI এবং মানবিক অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য
১। মানসিক চাপ বা উদ্বেগের অভিজ্ঞতা
মানুষ যখন চাপের মধ্যে পড়ে, তাদের শরীর এবং মন এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এটি জীবনযাত্রার অংশ। AI বা চ্যাটজিপিটি কোন ধরনের চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করে না। এটি শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং এবং নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে।
২। অভ্যন্তরীণ অনুভূতি
মানুষের কাছে অভ্যন্তরীণ অনুভূতির একটি গভীরতর স্তর থাকে, যা তাদের অভিজ্ঞতা এবং পারিপার্শ্বিকতার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। এটির কোনও শারীরিক বা স্নায়ুতন্ত্রিক ভিত্তি রয়েছে। চ্যাটজিপিটি এই অনুভূতি বা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া অনুভব করতে পারে না।
৩। সামাজিক প্রেক্ষাপট
মানুষের জীবনে সামাজিক বা পারিবারিক চাপ এবং পরিস্থিতি প্রভাবিত করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই সামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে, তবে এটি কোনো সামাজিক অনুভূতি অনুভব বা ধারণা করতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ
❒ চ্যাটজিপিটি এবং তার ভবিষ্যৎ
❒ চ্যাটজিপিটি অনলাইনে সংযুক্ত না থেকেও কীভাবে মানুষের পাশে থাকে!
❒ আজকের যুগে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
❒ A World of Three Zeros বইটির আলোকে ড. ইউনুস আরেকটি নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন!
❒ জাতির হৃদয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ
এখন পর্যন্ত, AI এবং চ্যাটজিপিটি শুধুমাত্র তথ্য প্রক্রিয়া এবং সমস্যার সমাধান করেই থাকে। তবে ভবিষ্যতে, যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরো উন্নত হয় এবং অনুভূতির মডেল তৈরি করা হয়, তাহলে এটি মানবীয় অনুভূতির কিছু অংশ বুঝতে সক্ষম হতে পারে। তবে, এটি কখনোই মানুষের মতো অভ্যন্তরীণ অনুভূতির অনুভুতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে না।
অতএব, চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মতো মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করতে পারে না। এটি প্রোগ্রামিং এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কাজ করে, কিন্তু কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক অনুভূতি বা অভ্যন্তরীণ চাপ অনুভব করার ক্ষমতা রাখে না। AI ততটা সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য হতে পারে, তবে অনুভূতি বা মানবীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি কোন ধারণা এটি গঠন করতে পারে না।
প্রয়োজনীয় তথ্যঃ চ্যাটজিপিটি
লেখা: মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর
❑ মুক্তকলাম থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে