আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: চাঁদের মাটিতে নামল চন্দ্রযান-৩, ইতিহাস গড়ল । ভারত চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩। এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়ল ভারত। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির।
ভারতের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের চোখ ছিল চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণের দিকে। কয়েক কোটি ভারতবাসীর চোখে আনন্দের জল। ইসরোর স্বপ্নের চন্দ্রযান ৩ চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং সফল ভাবে করল। চন্দ্রযান ২য়ের ব্যর্থতা উড়িয়ে দিয়ে দেশের অনেক আশার এই মহাকাশযান চাঁদের বুকে ভারতের তেরঙা ওড়াল। ।
ইসরো জানিয়ে ছিল, চন্দ্রযান-থ্রি ল্যান্ডারের প্রায় ৩০ মিটার উচ্চতা থেকে চাঁদে অবতরণ করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, বিক্রম ল্যান্ডার থেকে র্যাম্পের সাহায্যে ৬ চাকার রোভারটি চাঁদে অবতরণ করবে। এই প্রক্রিয়া সফল হল।
আরও পড়ুনঃ চাঁদের চারপাশে একাধিক স্যাটেলাইট ঘটতে পারে বিপত্তি
বুধবার (২৩ আগস্ট) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় চাঁদে অবতরণ করতে শুরু করে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। ৬টা ৪ মিনিটে এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের আর কোনো দেশ এ উপগ্রহের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে পারেনি।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে। এদিন কোটি কোটি মানুষ ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশটির সব স্কুল খোলা রাখা হয়। ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভার্চুয়ালি ইসরোর আয়োজনে যুক্ত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চাঁদের বুকে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করিয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চতুর্থ দেশ হিসেবে যোগ হলো ভারতের নাম।
গত ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে চন্দ্রযান-৩। এরপর ৩৯ দিনে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি চাঁদে পৌঁছায়। এ যানের সঙ্গে আছে একটি ল্যান্ডার, একটি রোভার ও একটি প্রোপালশন মডিউল। সব মিলিয়ে এর ওজন ৩ হাজার ৯০০ কেজি।
রোভার প্রজ্ঞান আগামী দুই সপ্তাহ ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠের খনিজ গঠনের স্পেকট্রোমিটার বিশ্লেষণসহ একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদে পানির উপস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য জানা।
যদি পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তা হবে চাঁদের অন্যতম মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ। এর আগে ভারতের চন্দ্রযান-১ ও চন্দ্রযান-২ নামে দুটি অভিযান ব্যর্থ হয়।
সফট ল্যান্ডিং কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যখন একটি মহাকাশযান এমনভাবে কোনও গ্রহে অবতরণ করা হয় যাতে তার কোনও ধরনের ক্ষতি না হয় সেই প্রক্রিয়াটিকে সফট ল্যান্ডিং বলে। বিপরীতে, হার্ড ল্যান্ডিংয়ে, এতে উপস্থিত মেশিন এবং সরঞ্জামের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই কারণে পুরো মিশনটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা থাকলেও কোনও বিপত্তি বাঁধেনি।
বহুল প্রতীক্ষিত ইভেন্টটি ২৩ আগস্ট অর্থাৎ বুধবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও ISRO-এর ওয়েবসাইট, এর YouTube চ্যানেল, ISRO-এর Facebook পৃষ্ঠা এবং DD (দূরদর্শন) জাতীয় টিভি চ্যানেল সহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে বিকাল ৫.২৭ এ শুরু হয়।
চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদে সফল অবতরণ দেখতে আগ্রহী ছিল গোটা দেশ। এই প্রক্রিয়াটি মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হত এবং গোটা প্রক্রিয়ার সবচেয়ে কঠিন পর্যায় ছিল এটি। ইসরোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন, শেষ ১৫-২০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সব স্বপ্ন অবশেষে সফল হল।
আরও পড়ুনঃ সস্তায় বিমানের টিকিট কেনার কৌশল