আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ: ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস: প্রাচীন সূর্যঘড়ি থেকে স্মার্টওয়াচ পর্যন্ত । ঘড়ি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, তবে তার ইতিহাস অনেক পুরনো এবং এর বিবর্তন দীর্ঘ। ঘড়ির প্রথম উদ্ভাবন থেকে আজকের আধুনিক ডিজিটাল ও স্মার্টওয়াচ পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
১। প্রাথমিক ঘড়ি: সূর্যঘড়ি এবং জলঘড়ি:
প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে সুন্দর সূর্যঘড়ি (Sundial) ছিল সবচেয়ে প্রাচীন। এটি সেগুলি ব্যবহার করত সময় মাপার জন্য, যেখানে সূর্যের আলো পড়ার কারণে ছায়া ঘুরে যেত এবং সময় নির্দেশ করত। তবে এই পদ্ধতি শুধুমাত্র দিনের বেলায়ই কার্যকরী ছিল।
আরেকটি প্রাচীন পদ্ধতি ছিল জলঘড়ি (Water Clock)। প্রাচীন মিশর, চীন এবং গ্রীসে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। জলঘড়িতে জল ধীরে ধীরে প্রবাহিত হতো এবং তার মাধ্যমে সময়ের হিসাব করা হত।
২। যান্ত্রিক ঘড়ির উদ্ভাবন:
ঘড়ি তৈরির ইতিহাস ১৩শ শতকে, ইউরোপে যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কারের মাধ্যমে নতুন মোড় নেয়। প্রাথমিক যান্ত্রিক ঘড়িগুলি কেবল ঘণ্টা বাজানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। ১৩শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডের একটি মঠে প্রথমবারের মতো যান্ত্রিক ঘড়ি তৈরি করা হয়েছিল, যা সময় মাপতে সক্ষম ছিল। এই ঘড়ি মূলত শীতকালীন সময়ের দিকে সূর্যাস্তের সময় নোট করতে সাহায্য করত।
৩। প্রথম প্রকৃত পকেট ঘড়ি:
পকেট ঘড়ি ১৫০০ সালের দিকে পিটার হেনলেন নামে এক জার্মান নাগরিকের হাত ধরে আধুনিক ঘড়ির এক নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়। এই ঘড়ি ছিল পকেটে রাখা যায় এমন একটি যন্ত্র। তবে এই ঘড়ি ছিল আরও বড় এবং খুবই অস্থির, কারণ এটি কেবলমাত্র বড় কুণ্ডলী বসানো হয়েছিল এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এগুলি অনেক সময় থেমে যেত।
৪। ঘড়ির আরও উন্নতি:
১৬৬০ সালে, গ্যালিলিও গ্যালিলি ইটালির এক বিজ্ঞানী, প্রথমবারের মতো স্বতঃস্ফূর্ত ঘূর্ণায়মান ওজন বা ফিউস স্ট্রাইকিং পদ্ধতির ধারণা দেন, যা আধুনিক ঘড়ির সঠিক সময় মাপার ব্যবস্থা তৈরির জন্য ভিত্তি ছিল।
এছাড়া, ক্রিস্টিয়ান হেইগেন্স ১৬৫৬ সালে ঘড়িতে ফিউস ফিউরেল ওয়ান পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা ঘড়ির নির্ভুলতা আরও বাড়িয়েছিল এবং তা যথার্থ সময়ের মাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী হয়ে উঠেছিল।
৫। কোয়াইট পকেট ঘড়ি এবং আধুনিক ঘড়ি:
১৮৪০ সালে, *যুক্তরাজ্যের* ঘড়ি প্রস্তুতকারক জন হার্ভি প্রথম কোয়াইট পকেট ঘড়ি তৈরি করেন। আর আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে ডিজিটাল ঘড়ি এবং স্মার্ট ঘড়ি নিয়ে আসার পরে, আজকের দিনে ঘড়ির কার্যকারিতা অনেক বিস্তৃত হয়েছে।
৬। ডিজিটাল ও স্মার্ট ওয়াচ:
ডিজিটাল ঘড়ি: ১৯৭০ সালে, Seiko এবং Hamilton Watch Company প্রথম ডিজিটাল ঘড়ি বাজারে উন্মোচন করে। এই ঘড়ি গুলিতে সময় ডিজিটালি (সংখ্যার মাধ্যমে) প্রদর্শিত হয়।
স্মার্টওয়াচ: ২০০০ সালের পরে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে স্মার্টওয়াচ বাজারে প্রবেশ করে। স্মার্টওয়াচের মধ্যে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি, ফিটনেস ট্র্যাকিং, নোটিফিকেশন, এবং আরও অনেক কার্যকারিতা থাকে।
আরও পড়ুনঃ
❒ মোবাইল ফোনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের কাহিনী জানুন
❒ টেলিভিশন আবিষ্কারের ইতিহাস এবং এটি কিভাবে কাজ করে
❒ সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যার আবিষ্কার ‘এম১৩৬২৭৯৮৪১’
❒ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং: অ্যান্টিবায়োটিকের মহানায়ক
❒ ফিঙ্গারপ্রিন্টের আবিষ্কারক বাংলাদেশী আজিজুল হক
❒ টয়লেট টিস্যু আবিষ্কার হলো কিভাবে
ঘড়ি তৈরির ইতিহাসের মূল পয়েন্টগুলো:
১। প্রাথমিক সূর্যঘড়ি ও জলঘড়ি: প্রাচীন যুগের মাপযোগ্য সময়ের ধারণা।
২। যান্ত্রিক ঘড়ি: ১৩শ শতক থেকে সূচনা, যেখানে সঠিক সময় মাপা সম্ভব হয়েছিল।
৩। পকেট ঘড়ি: ১৫০০ সালের দিকে আধুনিক পকেট ঘড়ি আবিষ্কার।
৪। ডিজিটাল ঘড়ি: ১৯৭০ সালের পরে, ডিজিটাল সময়ের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে থাকে।
৫। স্মার্টওয়াচ: ২০০০ সালের পরে, প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘড়ির কাজের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত হয়, যেমন ফিটনেস ট্র্যাকিং এবং নোটিফিকেশন ব্যবস্থার সঙ্গে স্মার্টফোনের সংযোগ।
ঘড়ি একটি প্রযুক্তিগত অবদান যা প্রাচীন সভ্যতাগুলির সূচনা থেকেই মানুষের সময় সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি শুধুমাত্র সময় দেখানোই নয়, বরং আমাদের স্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
❑ আবিষ্কার ও আবিষ্কারক থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট আবিষ্কার এবং বর্তমান যুগে এর গুরুত্ব