আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ঘুরে আসুন সহস্রধারা ঝর্ণা । চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত সহস্রধারা ঝরনা। বছরের অন্য সময় ঝর্ণায় তেমন পানি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে এ ঝর্ণায় উপচে পড়ে পানি। আর এ ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মূল রাস্তা থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই শোঁ শোঁ শব্দ কানে বাজবে। খানিকটা হেঁটে সামনে গেলে পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে শব্দের উৎস। দেখবেন, বিশাল পাথুরে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসছে ঝরনাধারা। ঝর্ণার আশপাশে পানির ফোঁটা একটা কুয়াশার পর্দার মতো তৈরি করেছে।
ঝর্ণার পানি গড়িয়ে পাহাড়ের কোলে তৈরি করেছে হ্রদ। গত কয়েকদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই জেগে উঠেছে ঝর্ণাগুলো। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
সীতাকুণ্ডে মোট ছয়টি ঝর্ণা রয়েছে। তার মধ্যে একটি সহস্রধারা ঝর্ণা ২। ঝর্ণাটিতে যেতে তেমন পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় না। ফলে পর্যটকদের তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। বর্ষাকালে একেবারেই কষ্ট হয় না।
আরও পড়ুনঃ সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, চট্টগ্রাম
কারণ সেখানে ঝর্ণার পানি আটকে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছে। ফলে হ্রদের পানিতে নৌকা ভ্রমণ করে ঝর্ণায় যাওয়া যায়। এতে পর্যটকেরা পান ঝর্ণা ও হ্রদে ভ্রমণের অনুভূতি।
সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগাহাট আসতে হবে সহস্রধারা ২ ঝর্ণায় যেতে হলে। বাজারে নেমে রিকশায় লবণাক্ষ পাহাড়ে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের মতো। সেখানে লবণাক্ষ হ্রদ পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর নৌকায় কিংবা হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যায়। ঝর্ণায় যেতে হলে প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হবে ২০ টাকা।
ঝর্ণাটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হ্রদের পানি এখনো নৌকা চলার মতো হয়নি। ফলে পর্যটকদের পাহাড়ের ধার দিয়ে ঝর্ণার কাছে পৌঁছাতে হয়। তবে গত তিন দিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পুরোদমে জেগে উঠেছে ঝর্ণাটি। ফলে হ্রদের বাঁধের ধারে যেতেই শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
ঝর্ণাটি শোমোশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন বিভাগ থেকে ইজারা নিয়েছে। ঝর্ণায় প্রবেশে প্রত্যেক পর্যটককে ২০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া নৌকায় চেপে ঝর্ণার কাছে যেতে আবার আলাদা ভাড়া লাগে।
জলপ্রপাত ভ্রমণে ফায়ার সার্ভিসের চার নির্দেশনা
✿ ঝর্ণায় গা ভাসাতে আসা পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলছে ফায়ার সার্ভিস। সীতাকুণ্ডের অন্যান্য ঝর্ণার চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় এ ঝর্ণায়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরও এ ঝর্ণায় ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এজন্য ঝর্ণাটিতে যেতে চারটি নির্দেশনা মানতে বলেছে ফায়ার সার্ভিস।
✿ নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আছে, ঝর্ণার পানিতে ও হ্রদে নৌকাভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। আর লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে হবে ইজারাদারকে।
✿ ইজারাদার কিংবা বন বিভাগকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা লাগাতে হবে। আর সে নির্দেশনা মানতে হবে পর্যটকদের। সাঁতার না জানলে যেন কেউ সাঁতার কাটতে না নামেন। আর ঝর্ণার পাশ দিয়ে গহিন পাহাড়ে যেন কোনো পর্যটক না যান। কারণ অনেক সময় পথ হারিয়ে ফেলেন পর্যটকেরা।
✿ সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, ঝর্ণাটিতে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক নির্দেশনা নেই। নেই বোটে চড়া পর্যটকদের জন্য লাইফ জ্যাকেট। গহিন পাহাড়ে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পর্যটক যাচ্ছেন কি না, তা তদারকি করার কোনো লোকও নেই। ফলে বারবার ওই ঝর্ণায় দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুনঃ মনের ক্লান্তি মেটানোর এক অপরূপ স্থান নিকলী হাওর
থাকা ও খাওয়া
থাকার জন্য সীতাকুন্ড উপজেলা সদরে কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া ঝর্ণা এলাকা থেকে গাড়িযোগে ৪০ মিনিটের পথ, চট্টগ্রাম শহরের এ কে খাঁন ও অলংকার মোড়ে আছে অনেক আবাসিক হোটল। খাবারের জন্য ঝর্ণায় এলাকার ছোট দারোগাহাট বাজারে কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট আছে। তবে ভালো রেস্টুরেন্ট পাবেন সীতাকুন্ড পৌর সদরে।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এ প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।
এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ দায়ী থাকবে না।
দৃষ্টি আকর্ষণ: যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
[আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান।]
✺ আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক ✺ আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ
❑ ভ্রমণ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান