গৌরবের স্মৃতিবহ মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নর ছাত্র-তরুণরা মাতৃভাষার অপমানে জ্বলে উঠেছিল বিদ্রোহের পতাকা তুলে, রাজপথ প্রকম্পিত করেছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে। ফাল্গুনের পলাশ-শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ায় সজ্জিত প্রকৃতিও যেন আজ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বায়ান্নর রক্তঝরা সেই ফাল্গুনের স্মৃতি।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সেদিন যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ, সেই বীর ভাষাশহীদদের জাতি গভীর শ্রদ্ধায় আজ স্মরণ করছে প্রভাতফেরিসহ শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন আর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। শোকের প্রতীক কালো পতাকা আর কালো ব্যাজ ধারণ করে তারুণ্য দিনটিকে বরণ করছে এবার অন্যরকম এক অঙ্গীকারের আবেগে উদ্দীপ্ত হয়ে।
দিনটি একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হচ্ছে। নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিতে শামিল হয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঐতিহ্যসহ সব কর্মসূচি যথারীতি পালিত হলেও এবারের একুশে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর পরিবেশে, এখন একাত্তরের চেতনায় জাগ্রত সমগ্র জাতি।
আরও পড়ুনঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকেই পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের শাসকগোষ্ঠী পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিকে তাদের অধীন করে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। এর অংশ হিসেবে প্রথমেই তারা বাঙালিদের ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা– এ বাস্তব সত্য অস্বীকার করে বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তারা।
উদ্দেশ্য ছিল- মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে বাঙালির জাতিসত্তাকে পঙ্গু করে দেয়া। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে বাঙালি। শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এরই একপর্যায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার ওপর চালানো হয় গুলি। শহীদ হন বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারসহ অনেকে।
বায়ান্নতে পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মাতৃভাষাকে অপমান করেছিল, একাত্তরের ঘাতকরা মাতৃভূমিকে অপমান করেছে, মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে, গণহত্যা করেছে। তাই সেই ঘাতকচক্রের উত্থানে আজ অপমানবোধ করছে তরুণ সমাজ।
প্রতিবাদে জেগেছে তারা। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে এই সাহসী তারুণ্যই যে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, দেশবাসী সে আশা এখন করতেই পারে। সে জন্যই জাগরণের দৃপ্ত অঙ্গীকারে বায়ান্ন আর একাত্তরের চেতনায় ফেরা একুশে এবার অন্যরকম। শোক আর মহত্তম অর্জনের গৌরবের স্মৃতিবহ মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর অর্থ পৃথিবীর সব মাতৃভাষাই স্ব স্ব জাতির নিজস্ব ও অপরিবর্তনযোগ্য ভাষা।
সব মাতৃ ও আঞ্চলিক ভাষাকেই সমান মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে বিশ্ববাসীর। একুশের শহীদদের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। শহীদ স্মৃতি অমর হোক।
❑ সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্ত