আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: গেমিং অ্যাডিকশন: মজা নাকি মানসিক সমস্যা ? গেম খেলতে ভালোবাসে না এমন মানুষ এখন কমই আছে। তবে যখন “আরেকটা ম্যাচ খেলি” বলে সময়ের হিসাব হারিয়ে ফেলি, তখন গেমিং হয়ে উঠতে পারে আসক্তি। প্রশ্ন হলো — এটা কি শুধু বিনোদন, নাকি একটা মানসিক সমস্যা?
১। গেমিং অ্যাডিকশন কী?
গেমিং অ্যাডিকশন মানে হচ্ছে অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা যেখানে ব্যক্তি পড়াশোনা, কাজ, ঘুম বা সামাজিক জীবন সব কিছুকেই উপেক্ষা করতে থাকে।
২। গেমিং আসক্তির প্রধান লক্ষণ:
❁ খেলার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা: গেম খেলার জন্য তীব্র ইচ্ছা বা তাড়না অনুভব করা।
❁ খেলা বন্ধ করতে না পারা: গেম খেলা বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়া।
❁ অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা: গেম খেলার জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা।
❁ অন্যান্য কাজকর্মে আগ্রহ কমে যাওয়া: খেলা বন্ধ করার কারণে অন্যান্য কাজকর্মে আগ্রহ কমে যাওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
❁ বিরক্তি বা বিষণ্ণতা: গেম খেলা বন্ধ করার কারণে বিরক্তি, অস্থিরতা বা বিষণ্ণতা অনুভব করা।
❁ শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি: খেলাধুলার কারণে ঘুম, খাবার এবং ব্যক্তিগত যত্নের অভাব হওয়া।
❁ সামাজিক সম্পর্ক কমে যাওয়া: বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া কমিয়ে দেওয়া।
❁ পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতি: খেলাধুলার কারণে পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতি হওয়া।
❁ মিথ্যা বলা: গেম খেলার সময়সীমা বা খেলার পরিমাণ নিয়ে অন্যদের কাছে মিথ্যা বলা।
৩। গেমিং অ্যাডিকশন: কেন হয়?
গেমে প্রতিযোগিতা, রিওয়ার্ড সিস্টেম, ভার্চুয়াল সাফল্যের অনুভূতি — এসব মস্তিষ্কে ডোপামিন তৈরি করে, যা আসক্তির সৃষ্টি করে।
❁ মস্তিষ্কের রাসায়নিক নিঃসরণ: ভিডিও গেম খেললে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হয়, যা আনন্দ এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত গেমিংয়ের ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এটি আসক্তির দিকে চালিত করে।
❁ ব্যক্তিগত কারণ: কিছু মানুষের মধ্যে গেমিং আসক্তির প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে কিছু কারণ হলো- কম আত্মনিয়ন্ত্রণ, বিষণ্ণতা, একাকীত্ব, উদ্বেগ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
❁ পরিবেশগত কারণ: গেমিং-এর সহজলভ্যতা, বন্ধু-বান্ধবদের গেমিং-এর প্রতি আসক্তি এবং গেমিং-এর প্রতি সমাজের ইতিবাচক ধারণা ইত্যাদি বিষয়গুলো গেমিং আসক্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
❁ মানসিক চাপ মোকাবেলা: অনেকে মানসিক চাপ বা একাকীত্ব দূর করার জন্য গেমিং-এর আশ্রয় নেয়। গেম খেলার মাধ্যমে সাময়িকভাবে মানসিক চাপ কমলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
❁ সামাজিক কারণ: বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গেম খেলা বা গেমিং কমিউনিটিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি এবং আকর্ষণ অনুভব করাও গেমিং আসক্তির একটি কারণ হতে পারে।
❁ আকর্ষণীয় গেম ডিজাইন: আধুনিক গেমগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে, খেলোয়াড়রা সহজেই আকৃষ্ট হয় এবং গেম খেলতে উৎসাহিত হয়। গেমের লেভেল আপ করা, নতুন জিনিস অর্জন করা বা বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করা ইত্যাদি বিষয়গুলো গেমিং আসক্তি তৈরিতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে, গেমিং আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সচেতনতা, কাউন্সেলিং এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৪। গেমিং অ্যাডিকশন কে ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশেষ করে টিনএজার এবং একাকী সময় কাটানো ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
❁ নির্দিষ্ট বয়সের মানুষ: ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা গেমিং আসক্তির জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
❁ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: যাদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, মনোযোগের অভাব (যেমন এডিএইচডি), বা অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তারা গেমিং আসক্তিতে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।
❁ কম আত্মসম্মান: যাদের আত্মসম্মান কম, তারা গেমিং-এর মাধ্যমে সাময়িক স্বস্তি বা আনন্দ পেতে চায়, যা তাদের আসক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
❁ সামাজিক সমস্যা: যারা বাস্তব জীবনে সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সমস্যা অনুভব করে, তারা গেমিং-এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটাতে পারে।
❁ আক্রমণাত্মক বা অস্থির প্রবণতা: যাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক বা অস্থির প্রবণতা বেশি, তারা গেমিং-এর প্রতি বেশি আসক্ত হতে পারে।
৫। গেমিং অ্যাডিকশনের সমাধান কী?
গেমিং আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
❁ সময়সীমা নির্ধারণ করা: প্রতিদিন কতক্ষণ গেম খেলা হবে তার একটি স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী চলুন।
❁ বিকল্প বিনোদন: গেমিং এর পরিবর্তে অন্যান্য শখ বা বিনোদনের দিকে মনোযোগ দিন, যেমন – খেলাধুলা, গান শোনা, বই পড়া, বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো।
আরও পড়ুন:
❒ গেমিং ক্যারিয়ার: কীভাবে গেম খেলেই আয় করা যায়?
❒ গেম ডেভেলপমেন্ট: কীভাবে তৈরি হয় একটি গেম?
❒ মোবাইল বনাম পিসি গেমিং: কোনটা কাদের জন্য?
❒ গেমের ধরণ: অ্যাকশন, স্ট্র্যাটেজি, সিমুলেশন–কোনটা কী?
❒ গেমিং ইতিহাস: প্রথম ভিডিও গেম থেকে আজকের ভার্চুয়াল জগৎ
❒ গেম ডেভেলপমেন্ট: বিনোদনের প্রযুক্তি শিল্প
❒ আপনার ফোনে এই অ্যাপটি না থাকলে আপনি অনেক কিছু মিস করছেন!
❁ শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা খেলাধুলা করুন, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
❁ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি গেমিং আসক্তি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তিনি কাউন্সেলিং বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে সাহায্য করতে পারেন।
❁ সমর্থন সিস্টেম: পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন নিন। তাদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন এবং তাদের সহায়তা চাইতে দ্বিধা করবেন না।
❁ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি: সোশ্যাল মিডিয়াতে গেমিং সম্পর্কিত পোস্ট বা আলোচনা থেকে দূরে থাকুন, যা আপনাকে আবারও গেমিং এর দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
গেম খেলাই সমস্যা নয়, সমস্যা শুরু হয় যখন সেটা আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আনন্দের জন্য গেম খেলুন, কিন্তু আসক্তি থেকে দূরে থাকুন — সেটাই গেমিংয়ের সঠিক ভারসন।
❑ অ্যান্ড্রয়েড গেইমস ও অ্যাপস থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ই-স্পোর্টস: খেলার মাঠ এখন ভার্চুয়াল জগতে