আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: গবেষকেরা চুলের চেয়েও পাতলা এলইডি তৈরিতে সফল । বিভিন্ন স্টেডিয়াম বা অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জায় রঙের যে খেলা চলে, সেখানে বিভিন্ন রঙের আলো তৈরিতে লাল, সবুজ ও নীল আলোর এলইডি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গবেষকেরা বলছেন, এলইডি আজকের তুলনায় ভবিষ্যতে আরও সস্তা ও শক্তিশালী হতে পারে। আর তাই দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত আলোর উৎস থেকে শুরু করে ভার্চ্যুয়াল হেডসেটের ক্ষেত্রেও এলইডি চমক তৈরি করতে পারবে।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে অ্যাড ব্লকারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির সেমিকন্ডাক্টর গবেষক ড. নাদিম চৌধুরী জানান, ১৯৬০-এর দশকে লাল ও সবুজ রঙের এলইডি উদ্ভাবন করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন নীল রঙের এলইডি উদ্ভাবন করা যায়নি। নীল এলইডি তৈরিতে বিশেষ ধরনের ওয়াইড-ব্যান্ডগ্যাপ সেমিকন্ডাক্টরের প্রয়োজন হয়। শক্তি-সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব আলোর উৎস হিসেবে নীল আলোর ডায়োড এলইডি উদ্ভাবনের জন্য ২০১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ইসামু আকাসাকি, হিরোশি আমানো এবং শুজি নাকামুরা নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৮৬ সালে আকাসাকি ও আমানো উচ্চমাত্রার গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ক্রিস্টাল তৈরি করেন। এরপর ১৯৯২ সালে নীল আলোর ডায়োডের ধারণা উপস্থাপন করেন তাঁরা। নাকামুরা নীল এলইডি তৈরির কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। এর ফলে নব্বইয়ের দশকেই তাঁরা উন্নত নীল এলইডি তৈরিতে সফল হয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা এলইডি প্রযুক্তি আরও বেশি কার্যকর করার জন্য কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ড্যান কনগ্রেভ বলেন, নীল একটি শক্তিশালী ও উচ্চ শক্তির আলো। টেলিভিশনের পর্দায় অন্যান্য সব রঙের ভিত্তি হিসেবে নীল এলইডি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। নীল রঙের আলোর জন্য প্রয়োজন হয় গ্যালিয়াম নাইট্রাইড। এমন এলইডি তৈরি করা আগে বেশ কঠিন ছিল। অন্যদিকে নীল এলইডি সাদা আলোর উৎস। নীল আলোর সঙ্গে তখন ফসফর নামের উপকরণ ব্যবহার করা হতো। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা পেরোভস্কাইট স্ফটিক দিয়ে এলইডি তৈরির কাজ করছেন। এ উপাদান প্রায়ই সৌরকোষে ব্যবহার করা হয়। পেরোভস্কাইট বেশ সস্তা ও নির্মাণ করা সহজ। যদিও পেরোভস্কাইট তেমন এলইডি স্থিতিশীল নয়, ফলে সহজে ভেঙে যায়। নতুন ধরনের এলইডি তৈরির ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি আর অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তিতে নিখুঁত ছবি ও আলো দেখার জন্য আমাদের অত্যন্ত উজ্জ্বল এলইডির প্রয়োজন হয়। এ নিয়ে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে কাজ করছে ব্রিটিশ সংস্থা প্লেসি সেমিকন্ডাক্টরস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিথ স্ট্রিকল্যান্ড বলেন, ‘বর্তমানের এলইডি পর্দা যথেষ্ট উজ্জ্বল নয়, তাই মাইক্রো এলইডি তৈরি করা হচ্ছে। লাল, সবুজ বা নীল রঙের এলইডি তৈরির কাজ চলছে, যা আকারে মানুষের চুলের পুরুত্বের এক–তৃতীয়াংশের কম।’
সম্প্রতি জাপানের গবেষকেরা ভিন্ন ধরনের নীল এলইডি তৈরি করেছেন। এই এলইডি শুধু ১ দশমিক ৪৭ ভোল্ট সরবরাহকারী ডাবল এ ব্যাটারির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, যেখানে বর্তমানে এলইডির জন্য সর্বনিম্ন ৪ ভোল্ট প্রয়োজন হয়। নতুন পদ্ধতিতে ফোটনের উৎপাদন বাড়াতে ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ এলইডিতে যখন শক্তি প্রয়োগ করা হয়, তখন অভ্যন্তরীণ উপকরণ এমন অবস্থা অর্জন করে, যেখানে আসলে তিন–চতুর্থাংশ সময় আলো নির্গত হয় না। এ বছরের সেপ্টেম্বরে একটি গবেষণাপত্রে এই এলইডি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন: ১৬ অ্যাপ গোপনে ভাইরাস ছড়াচ্ছে