আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: খাগড়াছড়ির যে ৫ স্থান ঘুরতে ভুলবেন না । শীতকাল মানেই পরিবার,বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরাঘুরি করা। আর ঘুরতে যাওয়ার কথা মাথায় আসলেই কোথায় যাওয়া যায় তা নিয়ে পরতে হয় বিপাকে। কোথায় যাবেন সেই বিপাকে না পরে ঘুরে আসতে পারেন খাগড়াছড়িতে।
রূপ বৈচিত্রে ভরপুর খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা। পাহাড়, ঝরনা, আঁকাবাঁকা পথ, সবুজের সমারোহ, লেক সমৃদ্ধ করেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িকে। শীত মানেই খাগড়াছড়িতে উপচে পড়া ভিড়। ভোরের কুয়াশায় পাহাড়ের রূপ যেন আরও বৃদ্ধি পায়।
পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি ও সমতল ভূমি মিলে এটি একটি অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এই অঞ্চল। খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝরনা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝর্ণা, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক, শান্তিপুর অরণ্য কুঠির ইত্যাদি।
কিন্তু হাতে সময় কম থাকলে খাগড়াছড়ির কোন কোন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব তা জেনে নিন আপনিও…
আলুটিলা গুহা: আলুটিলা গুহা খাগড়াছড়ির অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে অবস্থিত এক প্রাকৃতিক গুহা। এটিকে দেবতার গুহাও বলা হয়ে থাকে। যারা রোমাঞ্চ পছন্দ করেন তাদের দারুণ লাগবে এই গুহা। আলো প্রবেশ করতে পারে না বিধায় গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। এজন্য ভেতরে প্রবেশ করতে টর্চলাইট বা মশাল জ্বালিয়ে নিতে হয়। কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল এ গুহায় মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করলে দারুণ এক অনুভূতি হবে। গুহার এপাশ থেকে ওপাশ যেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট।
আরও পড়ুনঃ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ডিম পাহাড়ে দেখুন সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলা
এখানে ৪০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এটি অবস্থিত।
রিসাং ঝরনা: আলুটিলা গুহার খুব কাছেই রিসাং ঝরনার অবস্থান। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। এ ঝরনার কাছেই আবার আরেকটি ঝরনা আছে, যার দূরত্ব ২০০ গজও হবে না। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়া পানি দেখলেই পানিতে নামতে ইচ্ছা করবে। শরীর জুড়িয়ে নিতে ইচ্ছা হবে ঝরনার প্রবাহমান ধারায়। খাগড়াছড়ি সদর থেকে ঝরনার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।
এখানে যাওয়া যাবে বাস বা প্রাইভেটকার অথবা স্থানীয় যানবহনে। মোটরসাইকেলে আলুটিলা থেকে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫০ টাকা আর ফেরার সময় নেবে জনপ্রতি ১০০ টাকা।
হাতিমাথা: হাতিমাথা মূলত একটি দুর্গম পাহাড়। এর চূড়া থেকে আশেপাশের অন্যান্য পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে সবুজ গাছপালা, মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলাসহ পাহাড়িদের নির্মিত ঘর-জীবনবৈচিত্র্য দেখা যায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এ পাহাড়ে ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার সিঁড়ি তৈরি করেছে। এই দুর্গম সিঁড়িপথ দিয়ে ১৫ গ্রামের বাসিন্দা চলাচল করে। অনেকের কাছে এটি স্বর্গের সিঁড়ি নামে পরিচিত।
এখানে যেতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় একজন গাইড নিলে। কারণ প্রথম কেউ যেতে চাইলে পথ বিভ্রাট হতে পারে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ির যাওয়ার পথে জামতলী যাত্রী ছাউনি নামতে হবে। এরপর জামতলী থেকে চেঙ্গী নদী পার হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা ট্রাকিং করে এই পাহাড়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কুয়াকাটা সৈকতের অজানা ১০ স্থানে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য
নিউজিল্যান্ড পাড়া: খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে নিউজিল্যান্ড পাড়া অবস্থিত। পানখাইয়া পাড়া এবং পোরাছড়ার কিছু অংশ নিউজিল্যান্ডের মতো হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নিউজিল্যান্ড পাড়া হিসেবে পরিচিত। এমনকি পানখাইয়া পাড়া থেকে পোরাছড়া গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটির স্থানীয়রা নামকরণ করেছে নিউজিল্যান্ড সড়ক নামে।
সমতল ভুমিতে সবুজ শস্যখেত, সাদা মেঘের ভেলা ও পাহাড় মিলে দারুণ এক প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ। নয়নাভিরাম এ প্রকৃতিতে চোখ রাখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
বৌদ্ধ মন্দির: খাগড়াছড়ির পানছড়িতে অবস্থিত এ মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় বৌদ্ধ মন্দির। শান্তিপুর গভীর অরণ্যে প্রায় ৬৫ একর জায়গায় জুরে এ মন্দিরটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান। ৫০ ফুট উচ্চতার বিশাল এক নান্দনিক বৌদ্ধের প্রতিকৃতি আছে, এখানে যা তৈরি করতে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে এ বৌদ্ধ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি সদর থেকে জীপ বা মাহেন্দ্র ভাড়া নিয়ে এখানে আসা যায়। ধর্মীয় আচার পালনের জন্য সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পর্যটক প্রবেশ নিষেধ।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি সরাসরি বেশ কিছু বাস চলাচল করে। এরমধ্যে জনপ্রিয় হলো শান্তি পরিবহন। এ ছাড়াও হানিফ, শ্যামলী, ঈগল পরিবহন ইত্যাদি বাস চলে। বাসভেদে ও এসি-নন এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
খাগড়াছড়িতে বন্ধুবান্ধবসহ গেলে এবং দর্শনীয়স্থানগুলো দেখলে কম টাকা খরচ হয়। খাগড়াছড়িতে যাওয়ার পর ১০-১৫ জন মিলে চাঁদের গাড়ি বা জিপ গাড়ি ভাড়া করে এসব দর্শনীয় স্থান একসাথে দেখা যাবে।
আরও পড়ুনঃ মনের ক্লান্তি মেটানোর এক অপরূপ স্থান নিকলী হাওর
জিপ বা চাঁদেরগাড়ি ভাড়া নেবে তিন থেকে চার হাজার টাকা। ৪-৫ জন হলে সিএনজি ভাড়াও নেওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া নিবে এক হাজার থেকে পনেরশ টাকা। একা হলে একদিনের জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া নেওয়া যায়। তবে অবশ্যই আগে দরদাম করে ভাড়া মিটিয়ে নিতে হবে।
যেখানে থাকবেন: খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এরমধ্যে পর্যটন মোটেল, হোটেল গাইরিং, অরণ্য বিলাশ, গিড়ি থেবার, হোটেল ইকো ছড়ি উল্লেখযোগ্য। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় থাকা যায়।
যা খাবেন: যেহেতু এটা পাহাড়ি এলাকা তাই পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। চাইলে পাহাড়ি খাবারের মধ্যে জুম সবজি, বাঁশ কোড়ল, ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু ফিশ, জুম ডাল, পাজন ইত্যাদির স্বাদ নিতে পারেন।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এ প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ দায়ী থাকবে না।
আরও পড়ুনঃ
❒ মিরিঞ্জা ভ্যালি দারুণ এক আকর্ষণের নাম
❒ শীতে ভ্রমণের জন্য দেশের সেরা ৭ স্থান
❒ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলার দার্জিলিং নীলগিরি
❒ বান্দরবানের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান
দৃষ্টি আকর্ষণ: যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
[আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান।]
✺ আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক ✺ আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ
❑ ভ্রমণ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্বের অলৌকিক সৌন্দর্য দেখে আসুন