আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: কোরআন হাদিসের আলোকে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতিদান । রাত্রি দ্বি-প্রহরের পর যাবতীয় আরাম-আয়েশ ও সুখময় নিদ্রা ত্যাগ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। মহানবী (সা.) এ নামাজকে অতিরিক্ত নামাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরই বিনিময়ে মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)কে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট নফল নামাজ। তাহাজ্জুদ আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো- রাতের শেষ অংশ। অথবা ফজরের নিকটবর্তী সময়, যে সময়টা রাতের এক তৃতীয়াংশ। এই নামাজের প্রতিদান অনেক। যারা এই নামাজের প্রতি যত্নশীল তারা আল্লাহ তাআলার পছন্দের বান্দা। নবী কারিম (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে আল্লাহর মকবুল বান্দারা পরকালীন উন্নতির জন্য শেষ রাতের তাহাজ্জুদকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়। গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন। নিশ্চয় ইতঃপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তারা রাতের সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা জারিয়াত: ১৫-১৮)
আরও পড়ুনঃ পবিত্র কোরআনের ১০০টি উপদেশ বাণী
এই আয়াতে জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামতরাজী দানের কথা বলা হয়েছে তাদের জন্য যারা শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনায় লিপ্ত থাকে। বোঝা গেল, শেষ রাতের তাহাজ্জুদের বিনিময় হলো সরাসরি জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদে’ পৌঁছাবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ পালনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে খাবার আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৩৪)
হজরত বেলাল (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদত আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়। পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ দূরকারী।’ (তিরমিজি: ৩৫৮৯)
অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন; কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি: ১১৪৫)
এসব আয়াত ও হাদিসে একদিকে যেমন শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ইবাদত-বন্দেগির প্রয়োজনীয়তার কথা প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব বিবৃত হয়েছে। নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশের ওয়াদা, আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির ঘোষণা ও গুনাহসমূহ দূর হয়ে যাওয়ার ইশতেহার তো একজন মুমিন মুসলমানের চির কাঙিক্ষত বিষয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীর প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা: ১৬)
নবীজি (স.) নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বেন। এটা আপনার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই আপনার রব আপনাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭৯)
আয়াতে নবী করিম (সা.)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। অবশ্য উম্মতের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়। তবে এই নামাজ নেককারদের বৈশিষ্ট্য। তাহাজ্জুদ নামাজ কুপ্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ নামাজ মন ও মননকে নির্মল করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ০৬)
অতএব এই মহাকল্যাণের ইবাদত অলসতার কারণে হাতছাড়ার মাধ্যমে নিজেকে বঞ্চিত করা মোটেও উচিত হবে না। তাই বেশি বেশি তাহাজ্জুদের মাধ্যমে গভীর রাতে মহান আল্লাহর সঙ্গে একান্তে মিলিত হতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর কতজন নবীকে হত্যা করেছিল বনি ইসরাইল