আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: কোন বয়সে শিশুকে কেমন খেলনা দেওয়া উচিত ? খেলার মধ্য দিয়েই শিশুর প্রাণশক্তি প্রকাশ পায়। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে খেলাধুলার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। খেলনা এবং খেলা শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যম। একজন মানুষ ছোটবেলায় কী ধরনের খেলনা দিয়ে খেলেছে, তার প্রভাব পড়ে মানুষটির ব্যক্তিত্বের ওপর। শিশুর জন্য খেলনা বাছাইয়ে হতে হবে সচেতন।
কেমন হবে খেলনা
ভালো খেলনার বৈশিষ্ট্য হলো, খেলনা হবে আবিষ্কারধর্মী, নাটকীয় ও সৃজনশীল। শিশুর ক্ষেত্রে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে। বয়সের সঙ্গে শিশুর খেলনাও বদলে যাবে।
খেলনা শিশুর তুলনায় হালকা ও ছোট হলে ভালো, যাতে শিশু নিজেই সেটা নাড়াচাড়া করতে পারে। ঘরে ও বাইরে দু-জায়গায়ই খেলা যায় এমন খেলনা শিশু বিকাশে বেশি সহায়ক হয়।
শিশুর দলবদ্ধভাবে খেলার সুযোগ থাকতে হবে। খেলনার কোনো অংশ যেন ধারালো বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেকোনো বয়সী শিশুর ক্ষেত্রেই খেলা সময়ের অপচয় নয়; বরং শিশুর বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য আবশ্যক। খেলার মাধ্যমেও অনেক সময় শিশুর গঠনমূলক সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়।
নিজের অজান্তেই খেলার মাধ্যমে শিশুর প্রাথমিক ও সামাজিক শিক্ষা শুরু হয়। তাই খেলার বহুমুখী দিক মাথায় রেখে শিশুর খেলনা নির্বাচন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ করে যেসব খাবার
❖ যে খেলনা থেকে শব্দ বা সুন্দর মিউজিক বের হয় এমন খেলনা বাছাই করতে পারেন। বাচ্চার শ্রবণ ক্ষমতা কেমন বা শব্দ শুনে কিভাবে সে প্রতিক্রিয়া জানায় তা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
❖ সুতা, পশম যুক্ত কোনো খেলনা এ বয়সে দিবেন না। এই বয়সী বাচ্চারা যেকোনো কিছু মুখে দিয়ে ফেলে। আর সুতা বা দড়ি যুক্ত খেলনা বাচ্চার গলায় পেঁচিয়ে যেতে পারে। তাই সাবধান থাকুন।
❖ এই বয়সী বাচ্চাদের ধোয়া যায়, সহজে ভাঙবে না, চাপ দিলে শব্দ হবে বা লাইট জ্বলবে এমন খেলনা দিন।
❖ যে সব খেলনায় আলগা রঙ থাকে বা খুব ছোট তেমন খেলনা দিয়ে বাচ্চাদের খেলতে দিবেন না।
শিশুর বয়স ১ থেকে ২ বছর
❖ মিউজিক হয় এমন খেলনা দিতে পারেন। তাছাড়াও ভাসমান খেলনা ওর গোসলের গামলায় দিতে পারেন। গোসলের প্রতি অনীহা কমবে।
❖ রঙিন বই দিতে পারেন। যেসব বইয়ের পাতা শক্ত বা প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো তেমন বই ভালো। খেলার ছলে ফুল, ফল পশুপাখি চিনবে।
❖ ফোম বা প্লাস্টিকের তৈরি ব্লক দিন। নড়াচড়া করতে করতে আকার, রঙ এবং সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে।
❖ ধারালো, কোণযুক্ত বা ছোট খেলনা দিবেন না।
শিশুর বয়স ৩ থেকে ৪ বছর
❖ এ বয়স থেকে রঙ পেন্সিল, খাতা দিন। বাচ্চার বিকাশে অনেক সহায়ক হবে।
❖ বড় আকারের গাড়ি বা রকিং ঘোড়া দিতে পারেন।
❖ বল দিতে পারেন। নির্দিষ্ট জায়গায় ছুড়তে বলতে পারেন। হাতের নড়াচড়াতে হাত মজবুত হবে, সেই সঙ্গে কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ্য স্থির করার প্রাথমিক প্রস্তুতি পাবে।
শিশুর বয়স ৪ থেকে ৫ বছর
❖ বিল্ডিং ব্লকস, ক্লে সেট দিন। নতুন কিছু বানানোর চিন্তা শক্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে।
❖ কাগজ দিয়ে খেলনা বানিয়ে দিন। বাচ্চাকে নিজে নিজে তা বানাতে উৎসাহ দিন।
❖ ফুল, পশুপাখি বা সংখ্যা সাজানোর অনেক খেলনা আছে। তেমন খেলনা দিন। স্মৃতিশক্তি আর সৃজনশীলতা বাড়বে।
শিশুর বয়স ৫ থেকে ৬ বছর
❖ এ বয়স থেকে শিশুর নিজস্ব আগ্রহ তৈরি হয়। পছন্দ-অপছন্দ নির্ণয় করতে পারে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিখতে শুরু করে।
❖ শিক্ষণীয় খেলনা এ বয়সের শিশুদের জন্য উপযুক্ত। যেমন বিজ্ঞান সামগ্রী, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, বারবি পুতুল, কম্পিউটার ও ভিডিও গেমস, স্পোর্টস ইক্যুইপমেন্ট কিনে দিতে পারেন।
বাচ্চার বয়স বুঝে খেলনা নিবার্চনকে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু বাচ্চার সঠিক বিকাশ আর নিরাপত্তার জন্য সঠিক খেলনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বাচ্চাকে শুধু সঠিক খেলনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়, বাচ্চা যখন খেলবে শত ব্যস্ততার মাঝেও তার সঙ্গে মাঝে মাঝে হলেও খেলুন। শুধু মা-বাবা নয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তার পাশে থাকুন। খেলতে খেলতেই সে সামাজিক হবার প্রথম শিক্ষাটাও এখান থেকেই পাবে।
আরও পড়ুনঃ বরেণ্য কণ্ঠযোদ্ধা আব্দুল জব্বার