আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ওয়ানডে বিশ্বকাপে আপনাকে স্বাগত । আজ যখন গত বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে, আহমেদাবাদের আবহেও ভর করতে পারে লর্ডসের রোমাঞ্চ। নাটকটা হয়তো ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো জমে উঠবে না।
চার বছরে অনেক কিছুই অবশ্য বদলেছে। লর্ডসে সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। অথচ এবারের বিশ্বকাপটা তারা শুরু করছে র্যাঙ্কিংয়ের পাঁচে থেকে, রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড ছয়ে। শীর্ষে আছে বিশ্বকাপের স্বাগতিক ভারত, তাদের পরই প্রতিবেশী পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: এবারের বিশ্বকাপে ১০ দলের জানা অজানা তথ্য
বিশ্বকাপ শুরুর আগেরদিন আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্যাপ্টেন্স ডে। শুরুতেই স্টেডিয়ামে ১০ দলের ১০ অধিনায়কের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফটো সেশন। স্বাভাবিকভাবেই ১০ অধিনায়কের মাঝে রাখা হয়েছিলো বিশ্বকাপ ট্রফি।
১০ অধিনায়ক হলেন স্বাগতিক ভারতের রোহিম শর্মা, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, পাকিস্তানের বাবর আজম, শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা, আফগানিস্তানের হাশমতউল্লাহ শহিদি, ইংল্যান্ডের জস বাটলার, নেদারল্যান্ডসের স্কট অ্যাডওয়ার্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বা বাভুমা, অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স এবং নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন।
ট্রফি নিয়ে গ্রুপ ছবি তোলার পর আইসিসি-ক্রিকেট.কম এর সঙ্গে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন ১০ দলের অধিনায়ক। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো। যতি ২০১৯ সালের পর গত তিন-চার বছরের কথা বলি, তাহলে আমরা বিশ্বের তিন কিংবা চার নম্বর দল। এছাড়া আইসিসি সুপার লিগে আমরা ছিলাম তিন নম্বর দল। আমরা একটি গ্রুপ হিসেবে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এখন আমাদের সামনে সময় হলো, নিজেদের ভালোভাবে বিশ্বকাপে উপস্থাপন করা। আমরা প্রস্তুত। আমাদের দেশের মানুষও আগে যা করেছি, তার চেয়ে এবার বেশি কিছু প্রত্যাশা করছে।’
তবে ইতিহাস সব সময় বর্তমানের গতিপ্রকৃতি ঠিক করে দেয় না। ভারতের ১০টি ভেন্যুতে আগামী ৪৬ দিনে ৪৮ ম্যাচের লড়াই শেষে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে পারে, এমন দল অনেকই আছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তান তো সবার সম্ভাব্য সেরার তালিকাতেই আনাগোনা করবে। অতি অঘটন ঘটিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে ঢুকে পড়তে পারে ‘আনকমন’ কোনো দলও। সে কারণেই এটা বিশ্বকাপ, যেখানে অন্তত খেলা শুরুর আগপর্যন্ত শিরোপার দাবিদার সবাই। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে পেছনে রেখে অধিনায়কদের ফটোসেশনে কাল বিশ্বকাপ ট্রফির সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা দুজন যদিও রোহিত শর্মা আর জস বাটলার, বাকিদের স্মিত হাসি বলে দিচ্ছে, ট্রফি-সুধা পানের তৃষ্ণা তাঁদেরও আছে।
ভারতের বিশ্বকাপ নিয়ে এবার যে কয়টা পূর্বানুমান, তার অন্যতম, এই বিশ্বকাপ হবে রানবন্যার বিশ্বকাপ। ৩০০-এর নিচে রান করলে জয়ের সম্ভাবনা নেই। ৩০০-এর ওপরেও যত পারো রান করো। এটি হাওয়াই কোনো আলোচনা নয়। ভারতের উইকেটের ব্যাটিং–সহায়ক আচরণ এবং বিসিসিআইয়ের প্রধান কিউরেটর আশিস ভৌমিকের কথাতেও সে আভাস পরিষ্কার। এক সাক্ষাৎকারে আশিস জানিয়েছেন, তাঁরা চান বিশ্বকাপের ১০ ভেন্যুতেই হোক রান উৎসব। দুই ইনিংসেই যেন ৩০০ রান হয়, সেই রেসিপিতেই বানানো হয়েছে বিশ্বকাপের উইকেট।
বাকিটা নির্ভর করছে দলগুলোর ক্রিকেটীয় সামর্থ্য এবং সেই সামর্থ্য কাজে লাগানোর দক্ষতার ওপর। উইকেট আর কন্ডিশনের সুবিধা যে দল যত বেশি নিতে পারবে, বিশ্বকাপের ট্রফি ততই কাছে চলে আসবে তাদের। ব্যাপারটা তাহলে পরিষ্কার, এই বিশ্বকাপ জেতাবেন আসলে ব্যাটসম্যানরা। বোলাররা হবেন অনুঘটক মাত্র। কে কত কম রান দিয়ে বলটা আরেকজনের হাতে তুলে দিতে পারেন, সেই চেষ্টাই মূলত তাঁদের করে যেতে হবে। আর বোলিং যদি কিছু নির্ধারণ করেও, ব্যাটসম্যানদের ভুলের সুযোগ নিয়ে বেশির ভাগ ভেন্যুতে সেটা হয়তো পেসাররাই করবেন। কারণ তো জানাই। ভারতীয় উইকেট থেকে স্পিনের মায়াজাল হারিয়ে যেতে শুরু করেছে আরও আগেই। বিশ্বকাপটাকে পুরোপুরি রানবন্যার বানাতে ভেন্যুগুলোতে সেটিকে এক রকম ‘নিষিদ্ধ’ই ঘোষণা করার কথা আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের।
উপমহাদেশে ক্রিকেট দিয়ে আলোড়ন তুলতে এই অঞ্চলের যেকোনো দুটি দেশের মুখোমুখি হওয়াই যেখানে যথেষ্ট, এই বিশ্বকাপে আবার হাতছানি আছে দু–দুটি ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের। বিশ্ব ক্রিকেটে সেটির অর্থ কী, তা নিশ্চয়ই নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোও ভিড়ে যাওয়া মানে তো ক্রিকেটের সব গোলার্ধ ছুঁয়ে যাওয়া। যেটির পর খেলাটা থেকে আর কিছু চাওয়ারই থাকে না।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল দিয়ে টাকা আয় করার উপায়