আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: এলিয়েন নিয়ে এতো কৌতূহল কোথা থেকে এলো । এলিয়েন বা বর্হিজাগতিক প্রাণ নিয়ে মানুষের আগ্রহ বা জানার ইচ্ছা সেই প্রাচীনকাল থেকে। এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানতে বহুদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কেন? এলিয়েন নিয়ে কেন এত আগ্রহ?
এলিয়েনরা প্রাচীনকাল থেকে আমাদের কল্পনায় হানা দিয়ে আসছে। মহাবিশ্ব পরমাণু দিয়ে গঠিত এ ধারণা প্রথমবারের মতো দেন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস। অন্যান্য জগত সম্পর্কেও অনুমান করেছিলেন এপিকিউরাস, যেমনটি করেছিলেন রোমান কবি লুক্রেটিয়াসও, বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা’-এর মহাকাশ ইতিহাসবিদ রবার্ট স্মিথ।
“বহির্জাগতিক বা বাইরের জগৎ আমাদের কাছে এক ধরনের আয়না হয়ে ওঠে। পাশাপাশি মানুষরা কীভাবে ভিনগ্রহীদের দেখেন তা বোঝার চেষ্টা করেন আমরা এও জানতে গিয়ে দেখেছি, মানুষরা এলিয়েনদের অনেক ক্ষেত্রে মানুষ বলেও ভেবে থাকেন।”
আরও পড়ুনঃ ২০ বছরের মধ্যেই আসবে এলিয়েন!
এমনকি মধ্যযুগের ক্যাথলিক চার্চও এলিয়েনের সম্ভাবনাকে ঈশ্বরের শক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
“যদি মধ্যযুগীয় কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন…. তবে আপনি সম্ভবত যেসব বিষয় পরীক্ষা করতেন তার মধ্যে অন্যতম হল বহির্জাগতিক জগৎ। কারণ, সে সময় পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও জগৎ নেই এটা বলার মানে আপনি ঈশ্বরের শক্তিকে নগণ্য হিসাবে ভাবছেন— এমনটি বিবেচনা করা হত।”
এলিয়েনদের প্রতি মানুষের প্রথম আগ্রহ তৈরি হয় ১৬৮৬ সালে ফরাসি লেখক বার্নার্দ ল্য বোভিয়ে দো ফনতেনেলা-এর লেখা ‘কনভারসেশনস অন দ্য প্লুরালিটি অফ ওয়ার্ল্ডস’ বইটি প্রকাশের পর।
প্রকাশনার ইতিহাসে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক ব্লকবাস্টার হিসাবে বিবেচনা করা হয় ‘কনভারসেশনস’কে। সেই সময়ে অনেক মানুষ এটি পড়ে ও প্রায় একশটি সংস্করণের পর আজও বইটি ছাপানো হচ্ছে।
ফনতেনেলা এটি লিখেছিলেন কোপার্নিকাসের যুগান্তকারী আবিষ্কারে আংশিক অনুপ্রাণিত হয়ে। এর ভিত্তি ছিল সুর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ। মহাজাগতিকতার এই পরিবর্তনটি অন্যান্য সৌরজগতও থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
আরও পড়ুনঃ নাসার নতুন তথ্য : এলিয়েন আছে নাকি নেই?
এমনকি “অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই সম্ভবত অন্য জগতের প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়টি বিশ্বাস করতেন।”
‘কনভারসেশনস’ এর জনপ্রিয়তা ও বহির্জাগতিক প্রাণের ধারণা ১৯ শতকে অনেক বেড়ে যায়, যা সেই যুগের দুইজন বুদ্ধিজীবী– বিজ্ঞানী ডেভিড ব্রুস্টার এবং অ্যাংলিকান মন্ত্রী ও বিজ্ঞানের দার্শনিক উইলিয়াম হুইওয়েলের মধ্যে এক উত্তপ্ত বিতর্ককে বাড়িয়ে তুলেছিল।
আর এই বিতর্ক ‘সাহিত্যের একটি বিশাল অংশের জন্ম দিয়েছে’। সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত এলিয়েনের আক্রমণের কাহিনী ‘ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস’ উপন্যাসের, যা ১৮৯৭ সালে লিখেছিলেন এইচ জি ওয়েলস। বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা এটি।
স্মিথ বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এলিয়েনদের প্রতি মানুষের আগ্রহ কিছুটা কমে গিয়েছিল। কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, সৌরজগৎ তুলনামূলকভাবে বিরল প্রকৃতির। তবে ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে ও ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে মহাকাশ প্রতিযোগিতার উন্মাদনা আবারও বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ৮০০ কোটি বছর আগের রেডিও তরঙ্গ এলো পৃথিবীতে
“যখনই আমরা মহাকাশে কোনো মহাকাশযান পাঠাই আমরা সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব সম্পর্কে ভেবেছি। মনে রাখবেন, আমেরিকানরা আসলে তাদের স্বাধীনতার দ্বিশতবর্ষ বা দুইশ বছর উদযাপন করেছিল মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার মাধ্যমে (১৯৭৬ সালে ভাইকিং উৎক্ষেপণের মাধ্যমে)।”
তারপর থেকেই এলিয়েনদের প্রতি মানুষের আগ্রহ নিরন্তর ও বেড়েছে। ‘ইনভেশন অফ দ্য বডি স্ন্যাচার্স’, ‘স্টার ট্রেক’, ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি’ থেকে শুরু করে ‘এলিয়েন’, ‘ক্লোজ এনকাউন্টারস অফ দ্য থার্ড কাইন্ড’, ‘দ্য এক্স-ফাইলস’ ও ‘ড. হু’ পর্যন্ত এ সব চলচ্চিত্রের বন্যা বহির্জাগতিক প্রাণ সম্পর্কে আমাদের মুগ্ধতার প্রমাণ দিয়ে চলেছে বারংবার। তবে এটি কেবল শুরু।
তবে স্মিথ কি ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন?
“এক্ষেত্রে দুটি বিষয় হওয়া সম্ভব, হয় আমরা একা, নয়তো আমরা একা নই। আর এ দুটি বিষয়ই সমান ভয়ঙ্কর।”
আরও পড়ুনঃ থাইল্যান্ডে তেলাপিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা