আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: একুশে পদক পাচ্ছেন দই বিক্রেতা জিয়াউল হকসহ ২১ বিশিষ্টজন । সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবার রাত থেকেই খবরটি ছড়াতে থাকে। মো. জিয়াউল হক একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় গ্রামের মানুষ, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। গত বুধবার সকাল থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান, অভিনন্দন জানাতে সঙ্গে নিয়ে আসেন ফুলের তোড়া। কিন্তু জীবিকার তাগিদে তখন দই বিক্রি করতে বেরিয়েছেন (৯১) বছর বয়সী জিয়াউল হক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক (৯১)। পেশায় তিনি একজন সাধারণ দই বিক্রেতা হলেও তার নেশা সমাজসেবা।
দই বিক্রির টাকায় তিনি তৈরি করেছেন লাইব্রেরি। এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন জিয়াউল হক। তাই তাকে সবাই চেনে সাদা মনের মানুষ হিসেবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আইরীন ফারজানার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দই বিক্রেতারও। সমাজসেবায় অবদান রাখায় এই পদক পাচ্ছেন তিনি।
ভোলাহাট উপজেলার জামিল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ৬৫ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে সাইকেলে চেপে মাথায় দই নিয়ে বিক্রি করেন জিয়াউল হক। আর এ দই বিক্রি থেকে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়েই সমাজসেবা করেন।
জামিল আরও বলেন, তিনি উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামে জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানকার শত শত মানুষ উপকার করেছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়েছেন তিনি। এমনকি, কেউ টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারছেন না শুনলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
জিয়াউল হক বলেন, ২০২৪ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আমার নামও রয়েছে। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৩) ফেব্রুয়ারি বিকেলে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব আমাকে জানান। এতে আমি ভীষণ আনন্দিত। আমার সমাজসেবা করার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো।
একুশে পদক পাচ্ছেন যারা
ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ‘একুশে পদক-২০২৪’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনেরা হলেন ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব।
এ ছাড়া নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ, অভিনয়ে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তফা) ও রূপা চক্রবর্তী, চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষায় অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু একুশে পদক পাচ্ছেন।
একুশে পদক দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক, এককালীন অর্থ (চেক) ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ একুশে পদক প্রবর্তন কখন কিভাবে জানুন