আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: একাকীত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা । সম্প্রতি এক গবেষণায় একাকীত্বের সঙ্গে বিষণ্ণতা, সাইকোসিস ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনটিএনইউ)’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবেন রদ্রিগেজ-কানো।
গবেষণার তথ্য অনুসারে, যারা একাকী বোধ করেন না, তাদের তুলনায় একাকী বোধ করা ব্যক্তিদের মধ্যে এ ধরনের বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
‘কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট’-এর গবেষণাধর্মী জার্নাল ‘বিজেসাইক ওপেন’-এ প্রকাশিত এ গবেষণায় একাকীত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিকাশের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজে দেখেছেন গবেষকরা।
এ সমস্যার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে এ গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, একাকীত্ব পরবর্তীতে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার রূপ নেয় কি না বা এমন অনুভূতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা আছে কি না। গবেষণার বিভিন্ন তথ্য থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও একাকীত্বের মধ্যকার সম্পর্কটি দ্বিমুখী হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
রদ্রিগেজ-কানো বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অগ্রগতি ট্র্যাক করার মাধ্যমে। এতে প্রমাণ মিলেছে, যারা ‘সাইকোটিক’ ও ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডারে’ আক্রান্ত, তাদের বয়ঃসন্ধিকালের পরবর্তী সময়ে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করার প্রবণতা বেশি।
এ গবেষণাটি সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ তুলে ধরতে না পারলেও এতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও একাকীত্বের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট ছিল ও দীর্ঘমেয়াদে তা অব্যাহত ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এমনকি একা থাকা ও একাকী বোধ করার মধ্যেও ভিন্নতা তুলে ধরা হয়েছে এ গবেষণায়। এতে উল্লেখ করা হয়, কেউ কেউ একা থাকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও একাকীত্ব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, মানসিক রোগের শুরুর পর্যায়ে থাকা তরুণরা নিজেদের সামাজিক সম্পর্কে অবনতি লক্ষ্য করতে পারেন বলে দাবি করেছেন রদ্রিগেজ-কানো। এতে করে তাদের বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি আরও তীব্র হয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্ভাব্য অবনতি ঘটে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ ছাড়া, একাকীত্ব আত্মমর্যাদা বোধ কমিয়ে দিতে পারে, যা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনকি পরবর্তী জীবনে মানসিক রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এ গবেষণার ‘ইয়ং ইন নরওয়ে’ নামের এক আগের গবেষণা থেকে পাওয়া ডেটা ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এ বর্ধিত প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে।
গবেষণাটিতে এমন হাজার হাজার ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যারা ৯০’র দশকে টিনএজার ছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল, দুই দশকের বেশি সময় ধরে তাদের জীবন কীভাবে এগিয়েছে, তা বোঝা। এমনকি তাদের ওষুধ ব্যবহারের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল এ গবেষণায়, যা নেওয়া হয়েছে ‘নরওয়েজিয়ান প্রেসক্রিপশন ডেটাবেস’ থেকে।
মজার বিষয় হল, এ সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি লোক কোনও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওষুধ গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া প্রায় ১২ শতাংশ ব্যক্তিকে কমপক্ষে এক ধরনের ‘সাইকোট্রপিক’ ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আর দুই বা এরও বেশি ধরনের ওষুধ নিয়েছেন সাত শতাংশ।
এ পরিসংখ্যানে প্রায় পাঁচশ জন্য একক ব্যক্তির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যারা বড় ধরনের মানসিক সমস্যায় জর্জরিত।
❑ মনোবিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন