আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ‘এইচএমপিভি’ ভাইরাস কী এটি থেকে বাঁচবেন কীভাবে ? সম্প্রতি চীনে শিশুদের মধ্যে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নামে একটি সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটি সর্দি-কাশির মতো উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পাশাপাশি ফুসফুসের গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, এটি এখন হাসপাতালের দর্শনার্থীদের মধ্যে শীর্ষ চারটি সাধারণ ‘ভাইরাল সংক্রমণের’ মধ্যে একটি।
নিউমোভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ইস্টন লাইভ সায়েন্সকে বলেন, এইচএমপিভি এই শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। গত প্রায় ২৫ বছরে এই ঝুঁকিটি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়নি।
ইস্টন আরও বলেন, সংক্রমণের ঘটনা বা প্যাটার্নে পরিবর্তন দেখা দেওয়া সবসময়ই উদ্বেগজনক। সংক্রমণের সম্ভাব্য উত্থানগুলোর কারণ চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ।
এইচএমপিভি কী?
শ্বাসযন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-এর মতো এইচএমপিভি একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি মৌসুমী ভাইরাস। এটি সর্দি এবং ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটায়।
এইচএমপিভি ২০০১ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার এপিডেমিওলজিস্ট আইলিন স্নাইডারের মতে, প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ২০ হাজার শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির কারণ আরএসভি।
আরও পড়ুনঃ ঠান্ডায় নাক বন্ধ ভাব দূর করার উপায় জানুন
সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, বন্ধ নাক এবং শ্বাসকষ্ট। তবে এগুলো ব্রঙ্কাইটিস (ফুসফুসের দিকে পরিচালিত বায়ু নলের প্রদাহ) বা নিউমোনিয়ায় (যেখানে ফুসফুসের বায়ু থলিগুলো তরল দিয়ে পূর্ণ হয়) পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার মতে, কোভিড-১৯ এর মতো ছোট শিশু ও বয়স্করা এই ভাইরাসের ‘গুরুতর লক্ষণের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’।
অন্যান্য দেশের এইচএমপিভি সম্পর্কে সর্তক হওয়া উচিত
অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ইস্টন বলেন, এইচএমপিভি বিশেষত জীবনের প্রথম বছরে খুব অল্প বয়স্ক শিশুদের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ। এটি আরএসভি, পাশাপাশি মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ‘ফ্লু’ এর ক্ষেত্রেও একই। তবে এইচএমপিভি দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকিটি ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে আবিষ্কারের পর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়নি।
২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চায়না সিডিসির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান কান বিয়াও ঘোষণা করেন যে, চীনে ১৪ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এইচএমপিভির হার বাড়ছে। আক্রান্তের এই ঊর্ধ্বগতির খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। তবে হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধির মাত্রা ও কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুনঃ পারকিনসন্স রোগ কী এর কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
অধ্যাপক ইস্টন বলেন, সংক্রমণের ধরনে পরিবর্তন শনাক্ত করা এবং তারপর সম্ভাব্য কারণগুলো কী, তা শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে এইচএমপিভি ভাইরাসের মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এই সম্ভাবনা বাতিল করার জন্য ভাইরাসের জেনেটিক কোড নিয়ে অতিরিক্ত গবেষণা দরকার।
এদিকে চায়না ডেইলি উল্লেখ করেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এবারের শীতে চীনে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের সামগ্রিক বিস্তার কম।
লাইভ সায়েন্স পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য চীনের কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।
এইচএমপিভি থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়
মার্কিন জনস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসটির জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সা নেই। সংক্রমণের সময়কাল ব্যক্তিভেদে পরিবর্তনশীল। তবে আক্রান্ত সবার মধ্যেই সাধারণ সর্দিসহ অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থাকবে।
এইচএমপিভি সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিরা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসগুলোর মতো একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
❒ গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত সারবে নিয়মিত লেবুপানি খেলে
❒ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কেন খাবেন?
❒ এমপক্স কী এটা কীভাবে ছড়ায় এ রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করনীয় কী?
❒ প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
অধযাপক ইস্টন বলেন, এইচএমপিভি (HMPV) সংক্রমণ কোভিড-১৯ এর মতো অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়িয়ে পড়ে। যেভাবে আমরা ওইসব ভাইরাসের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করি, সেভাবেই আমরা এইচএমপিভি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
মার্কিন জনস্বাস্থ্য সংস্থা কিছু সুপারিশ করেছে: নিয়মিত কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। কাশি এবং হাঁচি দেওয়ার সময় আপনার মুখ ঢেকে রাখুন। অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
❑ স্বাস্থ্যকথা থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে শীতে সুস্থ থাকার ৫ কৌশল