আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: উদ্যোক্তা মানসিকতা: ব্যবসার আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন । কোনো ব্যবসা বা স্টার্টআপ শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার নিজস্ব মানসিক প্রস্তুতি। কারণ উদ্যোক্তা মানে শুধু টাকা লগ্নি করা নয়, বরং ঝুঁকি নেওয়া, ব্যর্থতা মোকাবিলা করা, এবং প্রতিদিন শেখা। এই পর্বে আমরা জানব সফল উদ্যোক্তাদের মানসিক বৈশিষ্ট্য, এবং কীভাবে আপনি নিজেকে অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুত করতে পারেন।
উদ্যোক্তা মানসিকতা কী?
উদ্যোক্তা মানসিকতা হল এক ধরণের মনোভাব ও চিন্তাভাবনা যা মানুষকে সুযোগ শনাক্ত করতে, ঝুঁকি নিতে এবং উদ্ভাবন ও সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে। এটি সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া, স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা, সহজে পরিবর্তন গ্রহণ করা এবং অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার ক্ষমতাকে উৎসাহিত করে।
উদ্যোক্তা মানসিকতার বৈশিষ্ট্য:
উদ্যোক্তা মানসিকতা হলো উদ্ভাবন, ঝুঁকি গ্রহণ, কঠোর পরিশ্রম, এবং সমস্যা সমাধানের মানসিকতা। এটি একটি সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি যা নতুন ব্যবসা শুরু করতে বা বিদ্যমান ব্যবসা উন্নত করতে সাহায্য করে।
১। কৌতূহল এবং অনুসন্ধিৎসা: উদ্যোক্তা মানসিকতার মানুষেরা নতুন কিছু জানতে ও বুঝতে উৎসুক থাকে এবং বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
২। স্থিতিস্থাপকতা: তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে সহজে ভেঙে না পড়ে এবং বাধাগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারে।
৩। ঝুঁকি গ্রহণ: তারা সঠিক হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকে এবং সেই ঝুঁকিগুলো গ্রহণ করে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
৪। অভিযোজনশীলতা: তারা দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং নতুন সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারে।
৫। উদ্ভাবন: তারা সবসময় নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে এবং তাদের কাজের মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করতে চায়।
৬। অস্থিরতা ও পরিবর্তন গ্রহণ: উদ্যোক্তা মানসিকতার মানুষ পরিবর্তন এবং অনিশ্চয়তাকে সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং নতুন পরিবেশে কাজ করতে পারে।
৭। দায়িত্বশীলতা: তারা তাদের কাজের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে।
৮। সৃজনশীলতা: তারা সবসময় নতুন কিছু করার জন্য সৃজনশীল চিন্তা করে এবং নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী থাকে।
৯। কঠোর পরিশ্রম: তারা কঠোর পরিশ্রম করতে ও অনেক সময় দিতে রাজি থাকে এবং তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সবসময় চেষ্টা করে।
উদ্যোক্তা মানসিকতা জরুরি কেন?
উদ্যোক্তা মানসিকতা জরুরি কারণ এটি সৃজনশীলতা, ঝুঁকি গ্রহণ, সমস্যা সমাধানে নতুন পথ খুঁজে বের করার ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলীকে উৎসাহিত করে। এটি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি আনতে পারে।
১। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন: উদ্যোক্তা মানসিকতা নতুন আইডিয়া ও ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে। এটি উদ্ভাবনী চিন্তা এবং নতুন জিনিস তৈরি করতে উৎসাহিত করে, যা সমাজের জন্য উপকারী.
২। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও সমস্যা সমাধান: উদ্যোক্তা মানসিকতা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে, পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে এবং সমস্যাগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করতে সাহায্য করে.
৩। অর্থনৈতিক উন্নয়ন: নতুন ব্যবসা তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে.
৪। নিজস্ব কাজের সুযোগ: উদ্যোক্তা মানসিকতা চাকরি থেকে স্বাধীনতা এনে দেয় এবং নিজের কাজের নিয়ন্ত্রণ করে, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সন্তুষ্টি বাড়ায়.
৫। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: উদ্যোক্তা মানসিকতা কর্মক্ষমতা বাড়ায়, সৃজনশীলতা তৈরি করে এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে উৎসাহিত করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে.
৬। নেতৃত্ব এবং দলবদ্ধ কাজ: উদ্যোক্তা মানসিকতা নেতৃত্ব বিকাশে সাহায্য করে এবং অন্যদের সাথে কাজ করতে উৎসাহিত করে.
৭। সফলতা এবং সমৃদ্ধি: উদ্যোক্তা মানসিকতা সফল ব্যবসার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসে.
৮। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন: উদ্যোক্তা মানসিকতা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনে সাহায্য করে.
৯। উদ্ভাবন ও অগ্রগতির চালিকাশক্তি: উদ্যোক্তা মানসিকতা নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবসার প্রবর্তন করে, যা সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখে.
১০। পুনর্গঠন ও পরিবর্তন: উদ্যোক্তা মানসিকতা পুরনো পদ্ধতিকে ভেঙে নতুন পথ তৈরি করে, যা সমাজের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেয়.
১১। দৃষ্টিভঙ্গী: একটি পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি থাকার অর্থ হলো, কেবল স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ ও পৌঁছানো এবং সমস্যা মোকাবেলা করার সাথে সাথে ব্যবসা বা জীবনের অনেক বড় চিত্র রয়েছে.
উদ্যোক্তা নিজেকে প্রস্তুত করবেন যেভাবে:
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি, সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিকল্পনা, এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। এর পাশাপাশি, সময় ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে। ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন ও সম্পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।
১। মানসিক প্রস্তুতি: ‘আমি ব্যবসা করব’ – এই মানসিকতা: ব্যবসা শুরু করার আগে ‘আমি ব্যবসা করব’ এই ধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি।
২। লক্ষ্য স্থির করা: উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা উচিত।
৩। সুশৃঙ্খল জীবন: জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল হওয়া ব্যবসার কাজে সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা: ব্যবসার সাফল্য এইসব বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে, তাই ব্যবসা শুরু করার আগে এদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
৫। পরিকল্পনা: ব্যবসার জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যা পর্যায়ক্রমে উদ্যোক্তাকে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
৬। আবেগগত বুদ্ধিমত্তা ও স্থিতিস্থাপকতা: ব্যবসা শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং যাত্রা, তাই আবেগগত বুদ্ধিমত্তা এবং স্থিতিস্থাপকতা থাকা দরকার।
৭। সময় ব্যবস্থাপনা: ব্যবসার জন্য সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮। অর্থনৈতিক সাক্ষরতা: আর্থিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।
৯। অভিযোজনযোগ্যতা ও অর্পণ: ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে অভিযোজনযোগ্য হওয়া এবং কাজে অর্পণ করা জরুরি।
১০। নেটওয়ার্কিং: ব্যবসা সংক্রান্ত মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি করা এবং সম্পর্ক তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১১। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার: সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসার প্রচার ও ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে।
১২। মূলধন ও সম্পদের প্রাপ্যতা: ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন ও সম্পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা উচিত।
১৩। প্রশিক্ষণ: উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসুচি গ্রহণ করে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে।
১৪। ফলো-আপ: প্রশিক্ষণ-পরবর্তী সময়ে ফলো-আপ করা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত।
১৫। নিজেকে সুশৃঙ্খল করা: সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে এবং কাজে মনোযোগ দিয়ে সময়কে কাজে লাগানো জরুরি।
১৬। প্রযুক্তি ব্যবহার: প্রযুক্তির ব্যবহার করে ব্যবসার উন্নতি এবং নতুন সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার সবচেয়ে বড় পুঁজি হতে পারে আপনার মানসিক প্রস্তুতি। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মবিশ্বাস, এবং শেখার মানসিকতা নিয়েই আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন সঠিক উদ্যোক্তা। মনে রাখবেন, সফল স্টার্টআপের আগে চাই সফল মানসিকতা।
❖ স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: স্টার্টআপ কি? বড় স্বপ্নের ছোট শুরু