আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে নিয়ে প্রচলিত কিছু মজার ঘটনা । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চেনেন না এমোন মানুষ দুই বাংলায় খুব কমিই আছেন। তাকে নিয়ে প্রচলিত আছে নানা ঘটনা। এগুলির সত্যতা কতটুকু তা নির্ণয় করা এখন যেমন দুরহ তেমনি আমরা সাধারনরা কোন মজা করলে যতটা প্রচার পায় তার থেকে বিখ্যাতরা মজা করলে মানুষ যেন তা লুফে নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আসল কথা কাহিনী যতনা তার থেকে তা থেকে আর বেশি করে লিখা বা প্রচার হয়ে থাকে। বিখ্যাতরা যা করেন তাই মজার কান্ড। আপনি আমি করলে তা হবে পাগলামী।
অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যাদের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনলে না হেসে পারা যায় না। আসুন তাহলে আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এর আজকের আয়োজন জেনে নেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে নিয়ে প্রচলিত কিছু মজার তথ্য।
ঘটনা- ১
১২৭৯ বঙ্গাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’। বিষবৃক্ষের সূর্যমুখী একটি চিঠিতে লিখছে, ‘ঈশ্বর বিদ্যাসাগর নামে কলিকাতায় কে না কি বড় পণ্ডিত আছেন, তিনি আবার একখানি বিধবাবিবাহের বহি বাহির করিয়াছেন। যে বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা দেয়, সে যদি পণ্ডিত, তবে মূর্খ কে?’
বর্ধমানে তারকনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে ভোজ দিয়েছেন বিদ্যাসাগর। নিজের হাতে রেঁধে বেড়ে খাওয়াবেন। মেনু-ভাত, পাঁঠার ঝোল আর আম আদা পাঁঠার মেটের অম্ল। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র। তিনি অবশ্য জানতেন না রান্নাটা কে করেছেন। খেতে খেতে বঙ্কিম বলে উঠলেন, এমন সুস্বাদু অম্ল তো কখনও খাই নাই। উপস্থিত সঞ্জীবচন্দ্র বললেন, হবে না কেন, রান্নাটা কার জানো তো, বিদ্যাসাগরের। বিদ্যাসাগরও হাসি মুখে বলে উঠলেন, না হে না, বঙ্কিমের সূর্যমুখী আমার মতো মুর্খ দেখেনি। বঙ্কিম কোনও উত্তর দেননি, তবে একটা হাসির রোল উঠেছিল।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ২০টি মজার ঘটনা
ঘটনা- ২
এক ভদ্রলোক বঙ্কিমের নিন্দা করছেন বিদ্যাসাগরের কাছে। তিনি বঙ্কিমের চরিত্র সম্পর্কে খারাপ কথা বলছেন। বলছেন কী কদর্যভাবে রাত কাটান বঙ্কিম। ইঙ্গিত খুব নোংরা। এসব শুনে বিদ্যাসাগর বললেন বলো কী? সারাদিন এত বড় সরকারি দায়িত্ব পালন করেও এভাবে রাত কাটায়, তাহলে লেখে কখন! আমার তো একটা সেলফ তাঁর বইয়ে ভরে গেল। যাই বল তোমার কথা শুনে বঙ্কিমচন্দ্রেরর প্রতি শ্রদ্ধা আমার বেড়ে গেল।
ঘটনা- ৩
বিদ্যাসাগরের নিজের হাঁপানি রোগ ছিল। শীতকালে সেই রোগ বেড়ে যেত। তিনি সকালে সন্ধ্যায় দু বেলা গরম চা পান করতেন। একদিন চা খাওয়ার পর অনুভব করলেন হাঁপানির টান যেন একটু বেশি মাত্রায় কম বোধ হচ্ছে। ভৃত্যকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন চায়ে আদা বা বিশেষ কিছু দেওয়া হয়েছিল কিনা। ভৃত্য বলে, না রোজ যেভাবে বানাই, সেভাবেই বানিয়েছি। বিদ্যাসাগরের সন্দেহ হয়। সরেজমিনে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের কেটলি খোলেন তিনি। যা দেখেন তাতে হতভম্ব বিদ্যাসাগর। কেটলিতে দুটো আরশোলা মরে পড়ে আছে। ভুবনকৃষ্ণ মিত্র লিখছেন, ‘তিনি দেখিলেন এক কেটলি জলে যখন ২টা আর্সোলা পড়িয়া তাঁহার হাঁপ অর্ধেক কমাইয়াছে, না জানি বহু পরিমাণে উহা জলে ফেলিয়া সিদ্ধ করিয়া, পরে এলকোহলে ফেলিয়া ছাঁকিয়া dilute করিয়া হোমিওপ্যাথি মতে ঔষধ বানাইয়া লোকের বা রোগীর অজ্ঞাতে সেবন করাইয়া এবং নিজেও ব্যবহার করিয়া দেখিব, হাঁপ কাসি সারে কি না?’ যেমন ভাবা তেমন কাজ। হোমিওপ্যাথি মতে ওই ওষুধ তৈরি করে অনেকের কষ্ট উপশম করেছিলেন বিদ্যাসাগর।
ঘটনা- ৪
সুবলচন্দ্র মিত্রের বইয়ে বিদ্যাসাগরকে লেখা মাইকেলের একটি দুর্লভ চিঠি পাওয়া যায়। মাইকেল লিখছেন, ‘আমার সহকর্মী বাবু মূর্তিলাল চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে তোমার কাছে যাব। তুমি এক বোতল শেরি আনিয়ে রেখো’। বিদ্যাসাগরের কাছে মদ আনিয়ে রাখার বায়না মাইকেল ছাড়া আর কেইই বা করতে পারতেন।
ঘটনা- ৫
১৮৭৪-এর ২৮ জানুয়ারি। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য বিদ্যাসাগর। সেই উপলক্ষেই সোসাইটিতে যাচ্ছেন। কিন্তু বাধা দিল দ্বাররক্ষী। চটি পরে ভিতরে যাওয়া যাবে না। বুট পরলে অবশ্য অসুবিধা ছিল না, কিন্তু চটি ফটফটিয়ে সোসাইটির ভিতর, নট অ্যালাও। হয় চটি বাইরে খুলে যান, নাহলে খালি পায়, হাতে চটি নিয়েও যেতে পারেন। স্বভাবতই অপমানিত স্বাভিমানী বিদ্যাসাগর। দরজা থেকেই ফিরে গেলেন। শোনা যায় ফিরে যাওয়ার সময় তাৎক্ষণিক একটি শ্লোক বানিয়ে আওড়াতে আওড়াতে বেরিয়ে আসেন সেখান থেকে। শ্লোকটি হল, ‘বিদ্বত্বঞ্চ জুতত্বঞ্চ নৈব তুল্যং কদাচন।/ স্বদেশে পুজ্যতে বিদ্যা, জুতা সর্বত্র পুজ্যতে’। অর্থাৎ বিদ্রূপাত্মক এই শ্লোকটি বলছে, বিদ্বান আর জুতোর কোনও তুলনা হয় না। বিদ্যার কদর কেবল স্বদেশে আর জুতোর জয়জয়কার সর্বত্র।
আর ফিরেই কড়া করে চিঠি লিখলেন কর্তৃপক্ষকে। ইংরাজি সেই চিঠি বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় খানিকটা এই রকম। ‘ ইংরেজি প্যাটার্নের শু পরে দিব্য ঢোকা যাচ্ছে, আর দেশীয় চটিতে নয়!’ বিদ্যাসাগরের প্রশ্ন অতি ‘নিরীহ’। ‘জীবনে একই পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি একই পরিস্থিতে সোসাইটিতে ঢুকতে বাধা পাচ্ছেন, কেবল মাত্র দেশীয় পাদুকা পরিধানের জন্য। আমি এর কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না’। একবার ভাবুন পাঠক, সেই কোন বিদ্যাসাগরের কালে পরিধান দিয়ে ব্যক্তিকে মাপার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তাঁর জেহাদ ছিল ইংরেজ কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে। আজও দেশীয় পরিধান দেখে শপিং মল, ক্লাব বা রেস্তোরায় আমাদের ঢুকতে বাধা দেয় আমাদেরই স্বজাতীয় ভারতীয়। কলোনিয়ালিজমের কিছু প্রোথিত অভ্যাস যে ভারতীয় মানবাত্মাকে কলুষিত করতে চলেছে, এমনকি সুদূর ভবিষ্যতেও, তা কি এই মহামানব সেই ১৮৭৪-এই বুঝতে পেরেছিলেন?
ঘটনা- ৬
শিক্ষক জয়গোপালের বাড়িতে ঘটা করে সরস্বতী পুজো হত। পুজোর দিন ছাত্ররা দিনে-রাতে তাঁর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করতো। আর পুজোর আগের দিন ছাত্রদের জয়গোপাল সংস্কৃত শ্লোক লিখতে দিতেন সরস্বতীর বর্ণনা করে। ঈশ্বর কিছুতেই লিখতে চান না। কিন্তু একবার এড়াতে পারলেন না গুরুকে। তাঁর অনুরোধে লিখলেন মজার একটি শ্লোক-
‘লুচি কচুরী মতিচুর শোভিতং
জিলেপি সন্দেশ গজা বিরাজিতম্
যস্যা প্রসাদেন ফলারমাপ্লুমঃ
সরস্বতী সা জয়তান্নিরন্তরম’
ছাত্রের লেখা এই শ্লোক জনে জনে ডেকে ডেকে শুনিয়েছিলেন শিক্ষক জয়গোপাল।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ শরীয়তপুরের বিখ্যাত ‘বিবিখানা’ পিঠা