আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ইস্তাম্বুল পৃথিবীর আশ্চর্যজনক বিড়ালের শহর । এমন কোনো শহরের কথা যদি শোনেন যেখানে বিড়ালের রাজত্ব চলে, অবাক হবেন বৈকি! তবে এটি কিন্তু সত্যি, কোনো রূপকথার গল্প বলছি না। পৃথিবীতে এমন একটি শহর রয়েছে যেখানে বিড়ালপ্রেমীরা গেলে তাদের আর ফিরে আসতে চাইবেন না।
সেখানকার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে শুধু বিড়াল। এই কারণে এই শহরটি অনন্য এবং বিড়াল (cat) প্রেমীদের জন্য স্বর্গের চেয়ে কম নয়! এখানে কেউ বিড়ালদের তাড়া দেয় না। ২০১২ সালে, এখানে প্রথম বিড়াল-থিমযুক্ত স্যুভেনির দোকান খোলা হয়েছিল যার নাম ক্যাটস অব কোটর। এই দোকানের মালিক অক্সানা ট্রোশিনা বলেছেন যে এই বিড়ালগুলো শহর এবং এর বাসিন্দাদের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে।
ইস্তাম্বুল (Turkey)
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর বিড়ালের জন্য পরিচিত, এখানে বিড়ালদের সংখ্যা অনেক বেশি। এটি ‘ক্যাটস্টানবুল’ নামেও পরিচিত। ইস্তাম্বুল শহরে প্রায় ২ লাখেরও বেশি বিড়াল বাস করে। শহরের মানুষেরা বিড়ালদের অনেক ভালোবাসে এবং তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযোগ দেয়। এখানে বিড়ালদের জন্য খাবারের স্টেশন এবং বিশেষ যত্নের ব্যবস্থা রয়েছে। ইস্তাম্বুলের বিড়ালরা শহরের রাস্তা, ক্যাফে, মসজিদ এবং দোকানগুলোতে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের এই উপস্থিতি শহরের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
ইস্তাম্বুলে বিপথগামী বিড়ালের সংখ্যা প্রায় ১,২৫,০০০ থেকে ৭,৫০,০০০ এর মধ্যে।
গৃহপালিত বিড়ালদের অন্তর্ভুক্ত করলে অনুমান করা হয় যে ইস্তাম্বুলে ২০০,০০০ বিড়াল বাস করে।
আরও পড়ুনঃ জানার আছে অনেক কিছু
ইস্তাম্বুলের বিড়াল সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দোকান পর্যন্ত, সব জায়গায় বিড়াল
ইস্তাম্বুল শহরের নানা জায়গায় বিড়ালগুলো মনের মতো ঘুরে বেড়ায়। ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, স্টেশনের মতো জায়গাগুলোতে বিড়ালদের ঘোরাফেরা করা একেবারে স্বাভাবিক। বিড়ালরা এক ধরনের সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছে এখানে, এবং শহরের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
২। ইস্তাম্বুলের বিড়ালদের জনপ্রিয়তা
ইস্তাম্বুলে বিড়ালদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা খুবই গভীর। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সাথী হিসেবে এই বিড়ালদের যত্ন নেন। বিড়ালদের খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসা এবং যত্নের জন্য অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে অনেক ক্যাফে আছে যেখানে বিড়ালদের রাখা হয়, এবং পর্যটকরা সেখানে এসে বিড়ালদের সাথে সময় কাটাতে পারেন।
৩। বিশেষভাবে বিড়ালদের জন্য স্থাপন করা “বিড়াল কোট”
ইস্তাম্বুলের বিড়ালদের জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ খাবারের স্টেশন এবং গর্ত তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং দোকানগুলোর সামনে এই ধরনের খাবারের স্টেশন রাখা হয়, যাতে বিড়ালরা সেখান থেকে খাবার পেতে পারে। এটি বিড়ালদের প্রতি স্থানীয়দের ভালোবাসার একটি প্রতীক।
৪। ইস্তাম্বুলের বিড়ালের স্বতন্ত্র চেহারা
অনেক বিড়াল এখানে বিভিন্ন জাতের থাকে, তবে ইস্তাম্বুলের বিড়ালদের মধ্যে বেশিরভাগই তুর্কি অ্যাঙ্কারা (Turkish Angora) বা তুর্কি ভান (Turkish Van) জাতের। এরা খুবই সুন্দর, ধূসর বা সাদা রঙের এবং অনেক ক্ষেত্রে চোখের রঙও ভিন্ন হয়।
৫। কথিত গল্প ও সিনেমা
ইস্তাম্বুলের বিড়ালদের সম্পর্কে অনেক লোককথা এবং গল্প রয়েছে, এবং এ নিয়ে কিছু সিনেমাও তৈরি হয়েছে। “Kedi” (২০১৬) নামে একটি বিখ্যাত ডকুমেন্টারি সিনেমা রয়েছে, যা ইস্তাম্বুলের বিড়ালদের জীবনকে কেন্দ্র করে। এই সিনেমাটি শহরের বিড়ালদের স্বাধীনতা, জীবনের গল্প এবং তাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক তুলে ধরে।
আরও পড়ুনঃ
❒ বিশ্বে কতগুলো পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে?
❒ রহস্যময় এই সেতু থেকে কুকুর কেন লাফিয়ে আত্মহত্যা করে
❒ ১৭০ লাখ মানুষের দেশে ২ কোটি সাইকেল
❒ হেনরি কিসিঞ্জারের জানা-অজানা তথ্য
৬। ইস্তাম্বুলের বিড়ালের বাসা
শহরের একাধিক মসজিদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থানে বিড়ালদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, এবং অনেক মসজিদে বিড়ালদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অনুমতি দেওয়া হয়। ইস্তাম্বুলের ধর্মীয় স্থানে বিড়ালদের থাকা অনেকটাই ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইস্তাম্বুল শহর তার বিড়াল সংস্কৃতি এবং বিড়ালদের প্রতি অসীম ভালোবাসার জন্য বিশেষ পরিচিত। শহরের অবাধভাবে চলাচল করা বিড়ালরা ইস্তাম্বুলের জীবনধারা ও ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ হিসেবে পরিগণিত। এখানকার বিড়ালরা যেন শহরের সঙ্গী, যারা শুধু পরিবেশ সুন্দর করে না, বরং মানুষের জীবনে সুখও এনে দেয়।
এটা সত্যিই একটা অদ্ভুত সুন্দর শহর, যেখানে বিড়ালদের সাথে জীবনযাপন করা হয় একেবারে স্বাভাবিকভাবে।
❑ জানা-অজানা বিশ্ব থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ “ক্যাট আইল্যান্ড” যেখানে মানুষের চেয়েও বিড়ালের সংখ্যা বেশি